আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘নন্দ ঘোষ’ বানানোর রহস্য কী?

এখলাসুর রহমান  

সত্যকে মিথ্যা কুযুক্তিতে ঢাকার অপচেষ্টাকারী চক্রের পরিচয় কী? সময়ে-সময়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই আত্মঘাতী অপচেষ্টাটি চলে আসছে। রানা প্লাজা বিল্ডিং হলো বিল্ডিং কোড অমান্য করে। আর তা ধ্বসে গেল। এই দোষের দায়ে দায়ীদের আড়ালে রাখতে বলা হল বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা বিল্ডিংয়ের পিলার নাড়িয়ে তা ধসিয়ে দিয়েছে। বিএনপি জামায়াতের শাসনামলে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হল একটি শিশু। আর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বললেন, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে। এখানে সন্ত্রাসীদের আড়াল করতে খোদ আল্লাহকেই দায়ী করে ফেলা হলো। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার হামলাকারীদের আড়াল করতে এই হামলার দায়ী সাজানো হল জজ মিয়া নামের এক গরিব ও নিরপরাধ ব্যক্তিকে। নেত্রকোনার উদীচী কার্যালয়ে জঙ্গি হামলা করে মানুষ খুন করলো জঙ্গিরা। আর হামলাকারীদের আড়াল করতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এই হামলার দায়ে দায়ী করলো নিহত যাদব দাসকে। এভাবে প্রতি সরকারের আমলেই মূল অপরাধীদের আড়ালে রেখে অন্যকে দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে আসছে।

আল্লাহর মাল তত্ত্ব, জজ মিয়া তত্ত্ব, যাদব তত্ত্ব, ধাক্কা তত্ত্ব প্রভৃতির পর এবার এলো শাবল তত্ত্ব। মূল অপরাধীদের আড়াল করতে কারা সরকারপ্রধানকে এই শাবল তত্ত্বটা বুঝালো? শাবল দিয়ে যদি ঘর ভেঙে ফেলা যায় তাহলে এগুলো কেমন ঘর? আর এসব ঘর নির্মাণের দায়িত্বে কোন সাংসদ বা কোন জনপ্রতিনিধি ছিলো না। ছিলো ইউএনওরা। ইউএনওদের উপর নির্দেশনায় ছিলো জেলা প্রশাসকেরা। তারা কেন আগে বললো না এই টাকায় ঘর বানালে ঘর মজবুত হবে না তা শাবল দিয়ে আঘাত করেই ভেঙে ফেলা যাবে। কেন তারা জনগণের টাকার অপচয় করালো? এর উত্তর নেয়ার মত কেউ কি আছে? আরও একটি বিভ্রান্তি রয়েছে। টাকাটা কি জনগণের না প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিলের। কারণ এটাকে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার। সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে, জনগণের টাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হয় কিভাবে?

কিন্তু জনগণের টাকা হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিলের হোক। অপচয় অপচয়ই। এটা যদি সংসদ সদস্য কিংবা অন্য কোন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হতো তাহলে নিশ্চয়ই একশন শুরু হয়ে যেতো। আমলারা যুগে যুগেই নিজেদের দোষ ঢাকতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপায়। শাবল তত্ত্ব তারই একটি ধারাবাহিকতা। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই ঘরগুলো দেখেননি। ইউএনও ডিসিরাই তাকে এই শাবল তত্ত্ব বুঝিয়েছে। কিন্তু ঘরগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা কর্মী ও জনগণ কী বলে? শাবল তত্ত্বের চিহ্নিত ঘরগুলোর প্রকৃত ঘটনা জানতে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। শাবল তত্ত্বের সত্যতা অসত্যতা যাচাই করে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা হোক। বিষয়টা হেলাফেলা করে উড়িয়ে দেয়ার মতো কোন বিষয় নয়। শাবল তত্ত্বটি সত্য হলে কোন কথা নেই। আর মিথ্যা হলে তা ক্ষমার অযোগ্য।

যদি মিথ্যা হয় তাহলে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই ভুল তত্ত্ব দেয়া হয়েছে। আর যারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তত্ত্ব দিতে পারে তারা আরও অনেক বড় ধরনের অপকর্মও করতে পারে। অন্তত তাদেরকে কোন দায়িত্ব দেয়া যায় না। তাদেরকে কোন বিষয়ে নির্ভর করা যায় না। একজন প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করা মানে গোটা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা। দোষ করবে আমলারা আর সমালোচনায় পড়বে রাজনৈতিক দল ও প্রধানমন্ত্রী। এটা মেনে নেয়া যায় না। এই আমলাদের কারণেই চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল। এদের কারণেই বাসন্তীর শাড়ি তত্ত্বে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত হতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু যখন আমলাতন্ত্র, ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন তখনই তাকে জীবন দিতে হলো। দেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলার মতো কেউ রইলো না। এই আমলারাই খুনি মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করলো। পত্রপত্রিকাগুলোতে বঙ্গবন্ধু খুনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেলো মোশতাকের নয়া রাষ্ট্রপতি হওয়া। রেডিও টিভিতে ফলাও করে প্রচার হলো এ খবর।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন বিদেশে ছিলেন তাকে আশ্রয় দিতেও সাহসী হলো না অনেকেই। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখার সুযোগ দেয়া হলো না বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যাকে। শেখ হাসিনার সাথে শেখ রেহানাও সেদিন বিদেশে ছিলেন। এত বড় একটা হত্যাকাণ্ড ঘটবে। সরকারি গোয়েন্দারা কি জানতো না? না জানাটা কি ব্যর্থতা নয়? আর জেনে না জানানোটা কি অপরাধ নয়? ইতিহাস ব্যর্থতা অথবা অপরাধ উভয়েরই শাস্তি হওয়ার দাবি রাখে। সেই আমলাদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ফাঁদে আজকের প্রধানমন্ত্রী কেন পড়লেন? দলের কেউ দোষ করলে জোর গলায় বলা যাচ্ছে, দোষী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমলাদের বেলায় কেন তা বলা যাচ্ছে না। কেন ধরে ধরে আমলাদেরকে টেনে এনেই মন্ত্রী বানানো হচ্ছে। দেশে কি রাজনৈতিক নেতার এতোই অভাব? দলের দুর্দিনে এই আমলারা ছিলো না রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ছিল।

এদেশের সকল দুর্নীতির সাথে জড়িত আমলারা। দুদকও বলছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হলেও দুর্নীতি কমেনি। তবে কি দুর্নীতি কমানোর জন্য বেতন বাড়ানো হয়েছিলো? যদি তাই হয় যেহেতু দুর্নীতি কমেনি এখন কি পারবে বেতন কমিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে নিতে? আমলারা বেতন বাড়ানোর সুবিধাও নিচ্ছে। দুর্নীতির সুবিধাও নিচ্ছে। আরও নিচ্ছে বিভিন্ন লাভজনক ব্যবসা কাণ্ডে জড়িত হয়ে। এসআই সোহেল রানার ই-অরেঞ্জ সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশ হয়েছে। অপ্রকাশ্য আরও অনেকেরই নানা বিষয় রয়েছে। সোহেল রানার এই ব্যবসা সম্পৃক্ততার খবর কি তার ডিপার্টমেন্ট জানতো না? না জানলে কি তা চরম ব্যর্থতা নয়। আর জেনেও তা প্রশ্রয় দিলে কি তা চরম অপরাধ নয়? কে বিচার করবে এই ব্যর্থতার অথবা অপরাধের।

প্রধানমন্ত্রীর শাবল তত্ত্ব নিয়ে নানা কথা রটিত হচ্ছে। কেউ বলছে আমলারা ভুল তত্ত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করেছে। কেউ বলছে আমলা নতজানু সরকারের আমলারা দোষ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন শক্তি নেই। তবে সত্য কোনটা। শাবল তত্ত্ব দিয়ে সত্য উদঘাটনের প্রক্রিয়া শুরু হোক। দেশে চলে আসছে এক হাস্যকর তদন্ত কমিটি। ডিসি দোষ করলে তদন্ত কমিটি করা হয় এডিসিকে প্রধান করে। এক্ষেত্রে এডিসি কি তার ডিসির বিরুদ্ধে কিছু বলবে? মুনিয়ার মৃত্যু নিয়েও আমলারাই কাহিনী করছে। তারা ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট ছাড়াই একজন শিল্পপতিকে নির্দোষ প্রমাণ করে দিলো। এখন বলা হচ্ছে মুনিয়ার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তবে যে বা যারা সত্যকে আড়াল করলো এর বিচার করবে কে?

চিত্রনায়িকা পরীমণির রিমান্ড সঠিক ছিলো না বলছে হাই কোর্ট। হাই কোর্টের কথা সত্য হলে আইনি লেবাসে তারা কেন এই বেআইনি কাজটা করলো? এর সঠিকতা বেঠিকতাও জাতির সামনে দৃশ্যমান করা উচিত। সাগর রুনী হত্যার এত বছর পার হয়ে গেল আইনি তৎপরতা নেই। কেন এই খুনের রহস্য আজও বের হলো না। খুনিরা আইনের আওতায় আসলো না। এত বছর পার হয়ে গেল। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। তবু কেন ২১ আগস্টের বিচারের রায় কার্যকর আজও হতে পারলো না? এখন ডাক বিভাগের নগদের শেয়ার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমলারা সংবাদ সম্মেলন করে বলছে নগদ প্রধানমন্ত্রী স্বীকৃত একটি কার্যক্রম। কেন এদেশে একটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও তার মন্ত্রী নেই? সবক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে এনে আসলে চাচ্ছেটা কি আমলারা? যতো দোষ নন্দ ঘোষের তাই নয় কি? এই নন্দ ঘোষ তত্ত্বের রহস্য কী?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ