আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

দুই বিচারের জন্যে কৃতজ্ঞতা, প্রধানমন্ত্রী

কবির য়াহমদ  

টানা চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়াসহ সতেরো বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকা শেখ হাসিনার জন্মদিন মঙ্গলবার। পঁচাত্তরে পা দেওয়া শেখ হাসিনার বিরল নেতৃত্বগুণ তাকে দলের মধ্যে যেমন অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে রেখেছে, তেমনি দেশের জীবিত যেকোনো রাজনৈতিক নেতার চাইতে বেশি জনপ্রিয় করে রেখেছে। তার এই জনপ্রিয়তা কেবল আওয়ামীপন্থী মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটা সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের মধ্যেও সঞ্চারিত ও বিস্তৃত। শেখ হাসিনা কেন এত জনপ্রিয় এর উত্তর মেলানো কঠিন। তবে একটা উত্তর সম্ভবত ‘বিকল্প না থাকা’। এই বিকল্পহীন নেতৃত্বগুণ তাকে করেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সকল ক্ষেত্রে।

শেখ হাসিনা সরকারের অনেক সাফল্য আছে। ব্যর্থতাও আছে। এই সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে চলমান ১২ বছরের শাসনামল। তিনি যা বলেন সরাসরি বলেন। এই সরাসরি বলাটা অনেকের অপছন্দ, তবু বলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই। ফলে পদ্মাসেতুর মত বৃহৎ স্থাপনা নানা ষড়যন্ত্র ও দাতাদের সরে যাওয়ার পরেও হচ্ছে এবং এটা নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে। এই জেদি মনোভাব তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে, যার সুফল ভোগ করছে, করবে পুরো দেশ। চলমান এক যুগের শেখ হাসিনার শাসনকাল বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত করেছে। উন্নয়ন ও বিবিধ ক্ষেত্রে প্রভূত অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণের কারণেই। যোগ্যতা-অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকা একদল রাজনীতিবিদকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও সমালোচনা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সামগ্রিকভাবে যে সাফল্য অর্জন করেছেন ইতিহাস তা মনে রাখবে নিশ্চিত।

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে শেখ হাসিনা কেবলই যে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে কাজ করছেন তেমন না। তিনি জাতির কলঙ্কমুক্তিতে যে ভূমিকা পালন করে চলেছেন এজন্যে বাঙালিকে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতেই হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথ প্রশস্ত করতে তিনি নব্বই দশকে তার প্রথম শাসনামলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছেন। যারমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রচনা হয়েছিল। এবং এর পথ ধরেই বেশিরভাগ খুনির ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। পলাতক বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকরে তার সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। স্বাধীনতা স্থপতি নিজ দেশে রাতের আঁধারে খুন হয়ে যাওয়ার পর তার বিচারের আইনি বাধা দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গায়ে যে কলঙ্ক লেপটে দিয়েছিল খুনিদের দোসরেরা সেই কলঙ্ক মোচন বঙ্গবন্ধুকন্যার মাধ্যমেই সম্পাদিত হয়েছে।

কলঙ্কমুক্তির আরেক পদক্ষেপ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার। শেখ হাসিনা সরকার সেটা শুরু করেছে, এবং এই কার্যক্রম এখনও চলমান। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম রাজনৈতিক ইশতেহার ছিল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করা যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলটি এই প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়নি। ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস জাতীয় সংসদে যুদ্ধ ও মানবাধিকার বিরোধীদের বিচারে আইন পাসের বিল প্রস্তাব করেন। সেই বিল পাস হয়। বিচারের পথ পরিক্রমায় ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আলাদা ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল ও তদন্ত সংস্থা গড়ে তোলা হয়। বিচারের জন্যে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর কিছু সংশোধনী এনে ট্রাইব্যুনালের ধরন, বিচারকাজের স্বচ্ছতা, বিচারকদের দক্ষতা, আসামিপক্ষের আত্মপক্ষ সমর্থন ও তাদের সমান আইনি সুযোগ নিশ্চিত করা, বিচার প্রক্রিয়া দেশ ও বিদেশে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হয়।

এই এগারো বছরে দেশ-বিদেশে বিবিধ ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে শীর্ষ কজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে। আরও অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। হ্যাঁ, ১১ বছর আগে যে গতিতে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল তা এখন গতিমন্থরতায় ভুগছে সত্য তবে এই সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪১টি মামলার রায় হয়েছে। ৯৫ জন অপরাধীর দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলোর রায়ে মোট মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন ৬৯ জন আসামি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির রায়ের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। আমৃত্যু ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ২৫ জনের। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ত্রিশের বেশি অপরাধী আছেন কারাগারে। দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত ৯টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাতটি রায়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক আমির ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাসেম আলী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য এবং বেগম খালেদা জিয়ার সংসদ সম্পর্কিত কমিটির উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও এটিএম আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আপিল বিভাগ থেকেও। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন। গণহত্যার সাইনবোর্ড গোলাম আযম ও আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর কারাগারে মারা গেছেন। এরবাইরে আপিল বিভাগে অন্তত ৩০টি আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদনে শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চাপ উপেক্ষা করে দেশে নাশকতা মোকাবেলা করেছেন। তুরস্ক, পাকিস্তান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চাপ এসেছে। কিন্তু কোন চাপের কাছে নত হননি তিনি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও তাদের আদর্শিক সহযোগীদের নাশকতা মোকাবেলা করেছেন তিনি বিপুল দক্ষতায়। কঠিন সেই পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষার যে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি সে কারণে ইতিহাস তাকে মর্যাদার আসনে আসীন করবে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করছেন এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে। বায়াত্তরের ছাব্বিশে এপ্রিল দিল্লির স্টেটসম্যান পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যারা গণহত্যা করেছে, তাদের পরিণতি থেকে রেহাই দেওয়া যায় না। এরা আমার ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। এদের ক্ষমা করলে ভবিষ্যৎ বংশধরগণ এবং বিশ্বসমাজ আমাদের ক্ষমা করবে না’। [দৈনিক বাংলা, ৩০ এপ্রিল ১৯৭২] জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন, পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনায় তিনি সে কাজ সম্পন্ন করতে না পারলেও তার কন্যা সেই কাজ করে চলেছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মতারিখে শুভেচ্ছা। তার শতায়ু কামনা করি।

কবির য়াহমদ, প্রধান সম্পাদক, সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর; ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ