আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

মস্তিষ্কে করোনা!

রহিম আব্দুর রহিম  

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলো, ‘৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না।’ শিরোনামের দ্বিতীয় প্যারায় উল্লেখ, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা জানিয়েছেন, করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে চালু হয়েছিল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু স্থানে শিক্ষার্থীর করোনা সংক্রমণ হওয়ায়, অভিভাবকদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। এ কারণেই অনুপস্থিত সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ছে।’ সাংবাদিক বন্ধু এই রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গত কয়েকদিনের উপস্থিতি-অনুপস্থিতির একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথাও বলেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যও গ্রহণ করেছেন। দায়িত্বশীলরা যার যার অবস্থান থেকে গতানুগতিক জবাবই দিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষকরা সাংবাদিককে যা বলেছেন তার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। করোনা ইস্যুতে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব অবস্থা খুবই দুঃখজনক। শহরের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না সপ্তাহে এক বা দুইদিনের জন্য দুটি ক্লাস করতে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আসছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম ক্লাস না হওয়ার কারণে। ভয়াবহ সমস্যার বিষয়টি হচ্ছে, টানা দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবা-মায়ের সাংসারিক কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী গ্রাম ছেড়ে শহরে কিংবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় কাজের জন্য পাড়ি জমিয়েছে। এরা লেখাপড়া করতে চায় কিংবা করবে, কিন্তু ফুলটাইম ক্লাস না হওয়ায় এলাকায় আসতে রাজি নয়। অথচ তথাকথিত বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘করোনার ভয়ে কোন কোন অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না।’ এধরনের বিশ্লেষণ, গবেষণা ‘মস্তিষ্কে করোনা’ সংক্রমণেরই শামিল।

সম্প্রতি কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে করোনা সংক্রমণের যে খবর, ‘সংবাদ’ এবং ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে’ পাওয়া গেছে তা যে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণে হয়েছে এবং যা আতঙ্কের বিষয় তা কিন্তু নয়। ঋতুবৈচিত্র্যের এই দেশে মৌসুমি সর্দি-জ্বর-কাশি যুগ যুগ ধরে চলমান। যে দেশের হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে, মিছিল-মিটিংয়ে, যান-বাহনে ঠেলা-ঠেলি, ধাক্কাধাক্কিতেও করোনা সংক্রমণ মাত্রা নিম্নগতিতে, সেখানে দেশের দুইটি প্রিন্ট মিডিয়া, একটি অনলাইন পোর্টাল এবং একটি টিভি চ্যানেল প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে করোনা খুঁজে বেড়াচ্ছে। এদের বিকৃতি চিন্তা-চেতনার ফলে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতির আজ কঠিন দুঃখজনক অবস্থা।

আর একটিবার যদি কোন প্রকার অযৌক্তিক ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়, তবে স্বাধীন, উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশের ইতিহাসে শিক্ষা সেক্টর "অন্ধকার যুগে"র কলঙ্কে কলঙ্কিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে শিক্ষা কার্যক্রম এখন স্বাভাবিক হয়নি; কোন দুর্যোগ, মহামারিকালীন কোন সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য একটি সময় পার করা হয়। করোনা ইস্যুতে বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার অর্ধমাস অতিবাহিত হচ্ছে। এখনও শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু না হওয়ায় শিক্ষাঙ্গনে এক ব্যঙ্গাত্মক পরিবেশ বিরাজ করছে।

করোনাকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ খুবই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। একমাত্র বাংলাদেশে যা হয়নি। কারণ, এই দেশের চৌকস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স পদ্ধতিতে দেশে এবং দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে যাতে আর কোন ক্ষতি না হয়, তা ভেবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই সরকারের বড় সাফল্য রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে "লকডাউন" নামের বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করেছে। একইভাবে জাতির মূল ভিত্তির কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিদ্রুত স্বাভাবিক শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকে পুনর্জীবিত করতে প্রধানমন্ত্রীরই হস্তক্ষেপ জরুরি বলে অনেকেই মনে করছেন, তবে আমরা চাই শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাই শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সক্ষম এবং তা করবেন।

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ