প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ১২ ডিসেম্বর, ২০২১
গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় একইরকম দু'টো ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা দু'টো একইরকম হলেও তাদের ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপরীতার্থক। সাবেক র্যাব প্রধান এবং বর্তমান আইজিপি বেনজির আহমেদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সদ্যসাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে কানাডা তাদের নিজেদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মুরাদের ক্ষেত্রে কানাডা এমন ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছে যে, সেখানে বসবাসরত প্রবাসী নাগরিকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ব্যাপারটি আমার খারাপ লাগেনি। কারণ বিগত কয়েকবছর যাবৎ আমরা লক্ষ্য করছিলাম বাংলাদেশের অনেক দুর্নীতিবাজ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারী আমলা ও রাজনীতিবিদদের ভাগাড় হয়ে পড়ছিল কানাডা। এদেশে অন্যায় অপরাধ আর লুটপাট করেই অপরাধীরা ছুটছিলো কানাডার বেগমপাড়ায়। কানাডা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ওইসব অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও অভয়ারণ্য!
বস্তুত: মুরাদকে কানাডায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার ব্যাপারটি আরও প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক হবে যদি ইতোমধ্যেই কানাডায় পাড়ি জমানো প্রতিটি বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজকে এবং আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে (বঙ্গবন্ধুর খুনি) কানাডায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তড়িৎ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
অন্যদিকে আইজিপি বেনজির আহমেদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে তারা র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে।
একথা নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না যে- 'ভূতের মুখে রাম নাম' যেমন শোনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখে 'মানবাধিকার'র বার্তাও তেমন শোনায়। এই মানবাধিকারের মিছে ঝাণ্ডা ঝুলিয়ে পৃথিবীর কতোগুলো দেশকে যে আমেরিকা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে, গুয়ানতানামো কারাগার আর আবু গারিব কারাগারে কতো হাজার হাজার বন্দিকে যে নির্বিচারে নির্যাতন চালিয়ে নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা যদি ধর্তব্যের মধ্যে নাও নিয়ে আসি তবুও তো আমেরিকার পার পাওয়ার উপায় নেই কারণ খোদ নিজ ভূখণ্ডেই নিজ নাগরিকদেরই উপর আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবছর যে পরিমাণ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালায়, যে পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতন-নিপীড়ন করে তার সংখ্যাও তো বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় ঢের বেশি।
আমার দেশের র্যাব যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেও থাকে তা নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার আমেরিকার নেই, কারণ আমেরিকা একই দোষে আরও বেশি দুষ্ট। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করি যেখানে আমেরিকার এই অন্যায্য অনধিকার চর্চা ও অন্যায় মোড়লগিরি মেনে নেওয়া ছাড়া যেন কোন উপায় নেই। তারপরেও সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ সরকার ইতিমধ্যেই আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আমেরিকার এহেন আচরণের ব্যাখ্যা চেয়েছে এবং সরকারের অসন্তোষের কথা জোরালোভাবে জানিয়ে দিয়েছে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও আমি ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ তিনি আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন- 'দেশের স্বার্থে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে আমাদের আপত্তি নেই।' অতিরিক্ত মহাপরিচালকের এই বক্তব্যে অনেক সুশীল হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখাবে। দেখাক প্রতিক্রিয়া, তবুও বলবো আমেরিকান-মার্কা এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে কয়েকটা খুনি-বদমায়েশ গুণ্ডা ও ধর্ষণকারীকে ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে তাদেরকে বিনাবিচারে হত্যা করা সমাজের জন্য ঢের ভালো। কারণ এইসব খুনি যখন কাউকে খুন করেছিলো তখন তারা কোন মানবাধিকার দেখিয়েছিলো, এইসব ধর্ষকেরা যখন কোন মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলো তখন তারা কোন মানবাধিকার দেখিয়েছিলো?
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের দমন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২৮ জন র্যাব সদস্য নিহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন দু'হাজারেরও বেশি। এইসব নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত র্যাব সদস্যদের মানবাধিকার কে কবে দেখেছে?
পুনশ্চ: হঠাৎ করে আমেরিকার এমন নড়াচড়া নিশ্চয় কোন ইঙ্গিত বহন করছে। আশা করছি, বর্তমান সরকার সতর্কতার সাথে শক্তহাতে এবং অলঙ্ঘনীয় কৌশল দিয়ে তা প্রতিহত করবে যেমন করে বিশ্বব্যাংক-ইউনুস-হিলারি গংকে প্রতিহত করে পদ্মা সেতুকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য