প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ২১ ডিসেম্বর, ২০২১
ডিসেম্বর মাস আসলে এদেশে একশ্রেণির মানুষের চরমমাত্রায় গাত্রদাহ শুরু হয়। একাত্তরে তাদের কিংবা তাদের পূর্বসূরিদের পরাজয়ের পুরোনো ব্যথাটা এই ডিসেম্বরে আবার নতুন করে চাগিয়ে ওঠে। ব্যথাটা এতোই চাগিয়ে উঠে যে তাদের কেউ কেউ বেসামাল পাগলপ্রায় হয়ে যায়! তেমনই দু'টো কেচ্ছা বলি, শুনুন।
এই ডিসেম্বর মাসের এক সকালে ঘুম থেকে উঠে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কী যেন হলো, তিনি দুম করে বলে বসলেন- 'তারেক রহমান একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা!' তারপরের দিন সকাল পর্যন্তও তার বেসামাল অবস্থা কাটলো না। সেদিন তিনি বললেন- 'খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা!' এরপরের দিন সকালেও তার ঘোর কাটলো না। তিনি বললেন- 'তারেক ও কোকোর হাত ধরে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন!' এরপরের দিন তার ডোজটা এতো বেশি হয়ে গেলো যে তিনি বললেন- 'আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে!'
বলতে বাধ্য হচ্ছি- দেশে যে এতো মেয়াদোত্তীর্ণ নেশাপণ্য বিক্রি হচ্ছে, 'বিএসটিআই' কী করছে! তারা কি আজকাল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করছে না?
যাইহোক, এতো গেলো বিএনপির ফখরুলনামা, এবার আসুন সরকার ও প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা কিছু বর্ণচোরাদের কেচ্ছা বলা যাক যারা তলে তলে সিঁদ কেটে নৌকা ফুটো করে দিচ্ছে! গত ২০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো 'বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ'। তো এই অনুষ্ঠানে সামনের সারির সফেদ সাদা কাপড়ে মোড়ানো প্রেস্টিজিয়াস চেয়ারগুলো সংরক্ষিত রাখা হয় রাজনীতিবিদদের জন্য আর পেছনের সারির প্লাস্টিকের মলিন চেয়ারগুলো বরাদ্দ রাখা হয় জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য! যাদের নামে এই আয়োজন তাদেরকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অবহেলা!
বস্তুত: মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন আয়োজনে ইদানীংকালে সরকার ও প্রশাসনের যারা সংশ্লিষ্ট হচ্ছেন তারা আদৌ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যদি তারা সত্যিকারার্থেই মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করতেন তাহলে মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাজানো বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কারিগরি ভুল করা হতো না।
যদি তারা সত্যিকারার্থেই মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করতেন তাহলে এবারের বিজয় দিবসের উৎসবে 'মুজিববর্ষ'কে ভুল করে 'মুজিবর্ষ' লেখা হতো না। যদি তারা সত্যিকারার্থেই মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করতেন তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই অযত্নে অবহেলায় পেছনের ধুলোমাখা মলিন প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে রাজনীতিবিদদেরকে সামনের রাজসিক চেয়ারে বসানো হতো না।
আসলে 'মুক্তিযুদ্ধ' ব্যাপারটা আমাদের কাছে যেমন এক অবিনাশী চেতনার নাম তেমনি একশ্রেণির অসাধু ফরিয়াদের কাছে এই 'মুক্তিযুদ্ধ' একটি ধান্দার নাম! এই ধান্দা ভাঙিয়ে তারা অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে সরকার ও প্রশাসনের কেন্দ্রে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে লুটেপুটে খাচ্ছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য