আজ মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Advertise

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ  

বিশ্বের অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আবার কোথাও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয় বরং হ্রাস পাওয়াটাই সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম শুরু হয় স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই। প্রথমে বেসরকারি পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। এক পর্যায়ে এই কার্যক্রমে বেশ সফলতা আসে। বর্তমানে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছেড়ে দেয়ার হার যেমন আছে তেমনি সক্ষম দম্পতির সংখ্যাও অনেক। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এদেশে ফলপ্রসূ হয়নি। মাঠ পর্যায়ে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত-সচেতন দম্পতিও অধিক সন্তান নিচ্ছেন। অনেক দম্পতি অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্মও দিচ্ছেন। এর কারণ হচ্ছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাঠ কর্মীরা সচেতন করে তুলছেন না দম্পতিদের। বিশেষ করে, অনগ্রসর দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ ব্যাপারে বলা যায় অন্ধকারেই। তাছাড়া, পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতি ও সামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতাও রয়েছে। সব মিলিয়ে ঝিমিয়ে পড়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি।

বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, দেশে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ দম্পতির পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সেই সেবা দেয়া হচ্ছে না। মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা প্রদান করছেন না। স্বাধীনতার প্রাক্কালে একজন মা গড়ে ৬ দশমিক ৩ জন সন্তান জন্ম দিতেন। পরবর্তীতে এক্ষেত্রে সাফল্য আসে ঠিকই, কিন্তু তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এই যে ব্যর্থতা, এ থেকে উত্তরণ জরুরি। তার জন্য দরকার হচ্ছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখা এবং যথাযথ প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা। ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিলো প্রায় ৩ কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন বেড়েছে ৫ গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অতি শীঘ্রই জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

একথা অনস্বীকার্য যে, জনসংখ্যা একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনসম্পদই হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল শক্তি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারিগরি ভিত্তিতে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্বে খুব শিগগির চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটবে। এ জন্য এই বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করা দরকার। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকার কাজ শুরু করছে।’চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন মানুষের চিন্তার জগৎ, পণ্য উৎপাদন, সেবা প্রদান, এমনকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি জীবনমান নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করবে। এই শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিবেশ ও দক্ষতাকে আগে থেকে অনুমান করা অনেক কঠিন। তারপরও যথাসম্ভব এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এটিও ঠিক, যে বিশ্বে রোবট বা প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই আপডেট হচ্ছে, সে বিশ্বে আগামী দক্ষতার মানদণ্ড নির্ণয় করা অনেক কঠিন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিভিন্ন আলোচনায় আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় যেসব দক্ষতার কথা সামনে আসছে, সেগুলোর মধ্যে জটিল সমস্যার সমাধান, সৃজনশীলতা, জনব্যবস্থাপনা, অন্যদের সঙ্গে কাজের সমন্বয়, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা, বৈচারিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দর-কষাকষি এবং চিন্তায় স্বচ্ছতার বিষয়গুলো অন্যতম। আমাদের মনে রাখতে হবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতির জন্য রাষ্ট্রের জনগণকে দক্ষ করার মূল মাধ্যম হলো শিক্ষা। তাই শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাক্রম নিয়ে নতুন করে ভাবনা জরুরি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্বও এ ক্ষেত্রে অত্যধিক। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ বা সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে শিক্ষাভাবনা ও বিনিয়োগ আরও বেশি করতে হবে। তবে অধিক সফলতার জন্য সব পরিকল্পনায়ই বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট এবং সুবিধাভোগীদের প্রতিনিধি পরিকল্পনা প্রণয়নেই সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন।

পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে তা সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোকের জন্য যথাযথ। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে কৃষি বিপ্লব। বর্তমানে প্রযুক্তির বিকাশ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে সব মানুষের খাদ্যের সংস্থান তেমন সমস্যা নয়। সমস্যা বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির একচেটিয়া আধিপত্য। এর ফলে অনেক সময়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য মজুদের অভাবে নষ্ট হয়। হতাশার কথা হলো, খাদ্যাভাবে পতিত মানুষের কাছে যথাযথভাবে উদ্বৃত্ত খাদ্যও পৌঁছে না। অন্যদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জাতিগত দ্বন্দ্ব, বিবাদ, জোরপূর্বক অভিবাসন ও প্রভাব বিস্তারের ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রকৃতির ওপরও নির্যাতন বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা দুর্যোগও নতুন নতুন চিন্তার সৃষ্টি করেছে। সে কারণেও ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। এর মধ্যে নারী ৮ কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার, পুরুষ ৮ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ। দেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ বছর ৮ মাস। এর মধ্যে পুরুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ২ মাস, নারীর ৭৪ বছর ৫ মাস। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর ৬ মাস। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩০ জন হয়েছে। আগের বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৩২ জন। এই জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ গ্রামে আর ৪৫ শতাংশ শহরে বাস করছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে ক্ষুল্ল জন্মহার ছিল (প্রতি হাজারে) ১৮ দশমিক ১ জন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছর প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ৫ দশমিক ১ জন মারা গেছে। তবে শিশু মৃত্যুহার অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে প্রতি হাজারে ২১ শিশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৬৩ জন হয়েছে, যা আগের থেকে কমেছে। আগের বছর এই হার ছিল ১ দশমিক ৬৫ জন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এখন রীতিমতো ভয়াবহ আকার নিয়েছে, অপরদিকে কোনো কোনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, বরং হ্রাস পাওয়াটাই সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ দিবস। এই অবস্থায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি বর্ণনা করার অবকাশ রয়েছে। এখানে প্রতি মিনিটে জনসংখ্যা বাড়ছে ৪ জন। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ বসবাস করে শুধু এশিয়া মহাদেশে। ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৪ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৯ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪২ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২১ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন