আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সমঅধিকার বাস্তবায়ন: রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ  

সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা সদা বিদ্যমান। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, তার মধ্যে বেশ কিছুই গ্রহণযোগ্য। আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশও রয়েছে। নারী-পুরুষ সবারই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। কারণ সমাজ ক্রমেই সামনে এগোচ্ছে। শুধু নারী বা পুরুষেরই নয়, সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। দেশের সমগ্র নারী সমাজকে সাথে নিয়েই আমাদের উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে। ২০৪১ সালের সালে শিল্প-সমৃদ্ধ উন্নত আয়ের দেশে যেতে হলে আমাদেরকে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। কেননা, এদেশের নারীরা উন্নত আয়ের দেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শামিল করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উপযুক্ত জ্ঞান এর ব্যবহার নারীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। নারী উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। দেশকে উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছে। এসবের সাথে নারীদের অধিকার রক্ষা ও ক্ষমতায়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে আরও বেগবান এবং পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক অবদান রয়েছে। সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-৫) অর্জনসহ নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশে শহর-গ্রামের-অসহায়, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীসহ সকল নারীদের তথ্যে প্রবেশাধিকার এবং এ বিষয়ক সেবাপ্রাপ্ত নি:সন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ “তথ্যআপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন” শীর্ষক একটি প্রকল্প গৃহীত হয়। এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পটির ১ম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় প্রকল্প কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়। ডিজিটাল বিপ্লবের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তিতেও বিশ্বজুড়ে নারীদের অংশগ্রহণ দিনকে দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই। বিশ্বায়নের যুগে কোনো দেশকে এগিয়ে যেতে হলে, কোনো জাতিকে উন্নত করতে হলে নারীদের ক্ষমতায়নের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণেরও কোনো বিকল্প নেই। আধুনিক যুগে তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশ সরকারও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের সম্পৃক্ত বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

সমাজে নারীর অবস্থানের টেকসই পরিবর্তনের জন্য এসব নীতিনির্ধারক আর প্রভাবশালীকে নিয়ে সবার আগে কাজ করা প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তন কখনোই এক দিনে আসে না। তবে এ ক্ষেত্রে লেগে থাকাটা জরুরি। বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা আনয়নে সংশ্লিষ্টদের জন্য নিয়মিত বিরতিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যেতে পারে। তাঁদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনাতে এ–সংক্রান্ত কাজ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নারীবান্ধব নীতিনির্ধারণে এবং তা বাস্তবায়নে সেরাদের স্বীকৃতি প্রদান অনেককেই এ ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া বেরিয়ে আসতে হবে আরও কিছু গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে। যেমন ১. জেন্ডার বিষয় মানেই সেখানে নারী কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং পুরুষেরা এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শক হবেন; ২. জেন্ডার মানেই নারীর অধিকার কিংবা ক্ষমতায়নবিষয়ক আলাপ–আলোচনা, যেখানে পুরুষের উপস্থিতি কিংবা অংশগ্রহণ অপরিহার্য নয়; ৩. নারী-পুরুষের সমতা মানেই কেবল সংখ্যাগত সমতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা; ৪. বিশেষ কিছু দিবস পালনকেই জেন্ডার সংবেদনশীলতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা; ৫. জেন্ডার বিষয়টিকে মূলধারায় না এনে বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনা করা ইত্যাদি। নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধে এবং নারীর সমতার যাত্রাকে এগিয়ে নিতে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ধারণার স্পষ্টতা থাকা দরকার। জানতে হবে জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা এবং তার প্রয়োগ। অসতর্ক শব্দচয়ন যেকোনো ইতিবাচক চিন্তাভাবনাকেও মুহূর্তেই বিপরীতভাবে উপস্থাপন করতে পারে। সর্বোপরি প্রয়োজন নারীর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং নারীর চোখে বিশ্বকে দেখতে পারার প্রবল ইচ্ছাশক্তি।

নারী বা পুরুষ যেই হোক না কেন পড়াশোনা, চাকরি কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সকল ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার খুবই প্রয়োজন। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার সব জায়গায়ই সমান ভাবেই প্রয়োজন। ডিজিটালের এ যুগে তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান এবং এর ব্যবহার ছাড়া চলা কঠিন হয়ে যাবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো চলাই যাবে না। যে দেশে অর্ধেক নারী, সে দেশে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে উন্নত আয়ের দেশের কাতারে যেতে পারাটা প্রায় অসম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ১ জুলাই ’’প্যারিসে জেনারেশন ইক্যুইটি ফোরাম’’ এ পাঠানো ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘টেক স্টার্টআপ ও ই-কমার্সসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০২৬-এর মধ্যে ২৫ ভাগ এবং ২০৪১-এর মধ্যে ৫০ ভাগ নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন। তিনি আরও বলেন, ’সরকার আইটিখাতে নারী পেশাদার ও উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচি চালু করেছে, নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে আমরা অনেকগুলো ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করছি। সাইবার প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বাড়াতে গত তিন বছরে ৭১ হাজারেরও বেশি নারী, শিশু ও কিশোরীকে সাইবার সচেতনতা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরকার অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নারীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ 'প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়ন' শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পূরবে এর নাম ছিলো ‘শি-পাওয়ার’। এছাড়াও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) কর্তৃক "লিভারেজিং আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ অফ আইটি-আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি (এলআইসিটি)" প্রকল্পে লক্ষ্য হলো আইটি-আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রির কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি করা।

জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১-তে নারী ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আমদানি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে জেন্ডার প্রেক্ষিত প্রতিফল; উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে নারীর স্বার্থ বিঘ্নিত হলে গবেষণা মাধ্যমে ঐ প্রযুক্তিকে নারীর প্রতি ক্ষতিকারক উপাদান বলে গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রযুক্তিক্ষেত্রে নারীর স্বার্থের অনুকূলে লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করার। বিষয়েও নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ তে উল্লেখ রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন লক্ষ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ নারী-পুরুষের সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার গ্রাম-শহরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অন্যান্য বিষয়ের মতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জ্ঞান ও ব্যবহারের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে সমতা আনতে কাজ করছে সরকার। নারীর ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ হবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৫ নম্বর লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে 'নারী ও কন্যাশিশুর সমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন' এর বিষয়টি। এ লক্ষ্যমাত্রার ৫.৮ লক্ষ্যে বলা হয়েছে- নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য নারীবান্ধব প্রযুক্তি, বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়নসহ সকল ক্ষেত্রেই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে সুষম উন্নয়নের জন্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অর্ধেক নারীকে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে দেশে বিদ্যালয় পর্যায় থেকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। গত দুই দশকে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সাফল্য ঈষর্ণীয়। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা-৫ অনুযায়ী নারী অধিকার ও নারীপুরুষের মধ্যকার বৈষম্য হ্রাস ও নিরসনে এবং নারীশিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রগতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে ব্যাপক হারে। নারীপুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত বৈশ্বিক লিঙ্গ বিভাজন সূচক ২০২০ (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) অনুযায়ী ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ। সুতরাং এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের নারীরা অসাধারণ এবং বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছেন৷ যদিও ৫০ বছরের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নারীদের চলার পথটি মোটেও মসৃণ ছিল না৷ হাজারো বাধা নিষেধের দেওয়াল ভেঙে, ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে, শাসন-বারণের পাহাড় ডিঙিয়ে, অপমান ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, নিপীড়ন-নির্যাতনকে তুচ্ছ করে নারীরা অদম্য শক্তিতে বেরিয়ে এসেছেন৷ ৫০ বছর আগের সেই প্রান্তিক- অক্ষম- অবলা- অশিক্ষিত- পরনির্ভরশীল- লাজুক এবং অন্ধকারে ডুবে থাকা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তকমা ছুঁড়ে ফেলে অনেকাংশেই নারী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মূলধারায়৷ আপন শক্তিতে বলীয়ান নারী নিজে ঘরের চৌহদ্দি পেরিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে নির্মাণ করেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমাণ রেখেছেন নিজের সক্ষমতার৷ বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্যই এই পরিবর্তন কারও একার অর্জন নয়৷ বরং ব্যক্তিগত, সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ সমূহের মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে৷ গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে নারীর অবস্থান প্রসঙ্গে খুব জনপ্রিয় একটা কথা প্রচলিত আছে৷ সেটা হচ্ছে, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার নারী- সেই দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে সন্দেহের আর কোনও অবকাশ নেই৷ রাষ্ট্রের শীর্ষ পদগুলো নারীর দখলে- এমন কথা শুনতেও হয়তো ভালোই লাগে৷ কিন্তু এটা যে সত্যের পুরোটা নয়, তা অনেকেই জানেন৷ কারণ, এই সুখ-সত্যের অপর পিঠে কিছু অপ্রিয় সত্যও রয়ে গেছে৷

নারীর ক্ষমতায়ন শুধু গুটিকয়েকজনের শীর্ষ পদে আসীন থাকাকে বোঝায় না৷ ক্ষমতায়ন আসলে একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া৷ যে প্রক্রিয়ায় নারী তাঁর নিজের জীবনের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেশা নির্বাচনসহ সবক্ষেত্রে পরিকল্পনা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পান৷ আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সমঅধিকারের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেঁ৷ নারীর ছোট্ট ইতিবাচক চিত্র মূলত বাংলাদেশের সকল নারীদের এগিয়ে চলার গল্প। যে অগ্রগতির পিছনে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টার গল্পও লুকানো। তবুও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত। সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে নারীরা এখনওক্ষিত৷ নারীর গৃহশ্রমের কোনো মূল্যায়ন নেই৷ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০' অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নারী সমতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবস্থানে রয়েছে৷ এই জেন্ডার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম৷ এ সূচকে চারটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ এগুলো হচ্ছে: (ক) অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ এবং সুযোগ; (খ) শিক্ষাগত অর্জন; (গ) স্বাস্থ্য এবং বেঁচে থাকা; (ঘ) রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন৷ সমাজের সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জন করতে হলে এই চারটি সূচকের সবগুলির দিকেই নজর দিতে হবে৷ মনে রাখতে হবে সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে৷ যেমন - শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থার আরও উন্নয়ন করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে৷ পশ্চাৎপদ ধ্যান ধারনা ত্যাগ করে সমাজকে ন্যায্যতা, যুক্তি আর জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে৷ সর্বত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে৷ নারীর প্রতি সহিংসতা নির্মূল করে নারীকে মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷

বিশ্বায়নের এ যুগে দেশকে এগিয়ে যেতে হলে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নতি করতে হবে। এ খাতে উন্নতি না করলে নারীরা ক্ষমতায়নের দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে। করোনা মহামারির সময়ে আমরা দেখেছি, প্রযুক্তির গুরুত্ব কতটা অপরিসীম ও অনিবার্য। একই সঙ্গে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করা—নারী-পুরুষ সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি। আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যহীনতার যে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে সেটা বাস্তবায়ন অতি জরুরি। সেজন্য সরকারসহ বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে৷ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে পরিবার ও সমাজে নারীর সম্মানজনক অবস্থান সুদৃঢ় হওয়া বাঞ্ছনীয়। বৈষম্য কখনও কোন দিকে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যেদিন নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকবে না, সেদিন এই দেশটি প্রকৃত অর্থেই সোনার বাংলা হিসেবে সর্বক্ষেত্রে বিবেচিত হবে।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ