আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

এই ভিসিরা শিক্ষার্থীদের ভালোবাসেন না!

মাসকাওয়াথ আহসান  

বাংলাদেশটা ছোট দেশ। এখানে সবাই সবাইকে চেনে। আর মুশকিল হয়ে যায় সেখানে। লেখালেখি করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করতে হয়। এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ক্ষতির মুখে পড়ে। তবু সে ঝুঁকি বার বার নিতে হয়। লেখালেখি যখন করি, তখন অপছন্দনীয় হবার ঝুঁকি হাসিমুখেই নিতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি ছাত্রজীবনে বিতার্কিক ছিলেন। বিতর্ক বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র বানাতে গিয়ে কৃতি বিতার্কিক হিসেবে ডা. দিপু মনির ইন্টারভিউ নিতে উনার বশিরুদ্দীন রোডের বাসায় গিয়েছিলাম একবার। রবীন্দ্র ছোটগল্পের স্নিগ্ধ নারীর মতো লেগেছিলো তাকে। বিতর্কের সিনিয়র আপা হিসেবে স্নেহ করেছিলেন অনেক। বিতার্কিক বন্ধু মাছুদ চৌধুরী ইন্টারভিউ করেছিলো দিপু আপাকে। ক্যামেরার কাজ করছিলো বিতার্কিক সুদীপ। দিপু আপা সুতির একটা মেজেন্টা রঙ-এর শাড়ি পরেছিলেন। নিজের হাতে সুজি-চা বানিয়ে এনে আমাদের আপ্যায়িত করলেন। আগে কোন পরিচয় ছিলো না। কিন্তু বিতার্কিক পরিবার এমনই। পরে প্রামাণ্যচিত্র "দ্য ডি এম্পায়ার"-এর প্রিমিয়ার শো'তে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারেও এসেছিলেন তিনি।

সেই দিপু আপা যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন, আমাদের বিতার্কিকদের আনন্দের সীমা ছিলো না। উনি বেশি বিদেশ ঘুরছেন, এমন সমালোচনা-কার্টুন প্রকাশিত হতেই আমরা আশাহত হয়েছিলাম। সমালোচনাটা একটু বেশি বেশিই হচ্ছে এমন আক্ষেপও জন্মেছিলো। এরপর উনি শিক্ষামন্ত্রী হলে এবার 'বিতর্ক'কে স্কুল-কলেজের সিলেবাসে ঢুকানো যাবে; যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে; এমন প্রত্যয় জন্মেছিলো। এ বিষয়ে আমার প্রস্তাব, দিপু আপার এলাকার কলেজের অধ্যক্ষ রতন মজুমদারের মাধ্যমে উনাকে জানাতে চেষ্টা করেছি। রতনদা আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। গান্ধীজী সেই কালে নোয়াখালী সফরে এসে রতনদার দাদার বাড়িতে উঠেছিলেন। এ কারণে রতনদাকে আমি এ যুগের গান্ধীজী বলেই ভাবি।

রতনদা দিপু আপার এলাকার একটি কলেজকে মডেল কলেজে রূপান্তর করেছেন। কলেজটি দেখলে আপনার একে শান্তি নিকেতন মনে হবে। রতনদা'র মাধ্যমে দিপু আপার ঔদার্যে বিতর্ককে সিলেবাসে আনার চেষ্টাটা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি।

সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকট উপস্থিত হলে আমি ভেবেছিলাম দিপু আপা সিলেট যাবেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করবেন। সেটা সভ্য দেশে সচরাচর হয়। আর আমি যে দিপু আপাকে দেখেছিলাম। উনার পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়ে শান্ত করা কঠিন কোন কাজ হতো না। করোনাকালীন দুর্যোগে উনার বাসায় কোন গুরুতর সমস্যা থেকে থাকলে তরুণ উপমন্ত্রী নওফেল সিলেটে যেতে পারতেন। মাত্র ৪০ মিনিটেরই তো উড়াল পথ। আর এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। ঢাকা তোও রাওয়ালপিন্ডি নয়; যে অনশনে অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের ভাওয়ালপিন্ডিতে আসতে হবে 'আইয়ুব খানের দপ্তর'-এ!

তবু প্রযুক্তির সুযোগে জুম বৈঠক হয়েছে এরই মাঝে। কিন্তু সমাধান আসেনি। ইন্টার পারসোনাল কম্যুনিকেশানের উষ্ণতা তো আর জুম বৈঠকে থাকে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসনের এসাইনমেন্টে দিপু আপা ও নওফেল উভয়েই খারাপ ফল করেছেন। উনাদের বাবারা আওয়ামী লীগের সোনালী যুগের নেতা ছিলেন। যে কোন সংকটে তারা ছুটে যেতেন জনমানুষের কাছে। আর সেই সোনালী মানুষের উত্তর প্রজন্ম যদি, "লাঞ্চের পর অফিসে দেখা করো" টাইপের ক্লিশে আমলা-মনোভাব পোষণ করেন; তখন আশংকা জাগে, অমিতাভ বচ্চনের ছেলে অমিতাভ বচ্চন হয় না; হয় অভিষেক বচ্চন।

এখন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সংকটটি ফেলে রেখে রেখে জটিল করে ফেলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এর সমাধান কঠিন হবে। কথায় কথায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আর তারপর হ্যাশট্যাগ ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর নহরের যে ট্রেন্ড আমরা দেখি; এটা আসলে প্রধানমন্ত্রীর 'ব্যবস্থাপক' বাছাইয়ের দুর্বলতাজনিত ভঙ্গুর ব্যবস্থা।

ওদিকে অমানবিক ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে ভিসিদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, মোটর মালিক বা মোটর শ্রমিকদের আদলে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুলিশি রক্তাক্ত হামলা, তাদের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া; এই বিষাদ যমুনা যে ভিসিদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে না; তারা শিক্ষার্থীদের ভালোবাসেন না; কেবল নিজেদের চেয়ার ভালোবাসেন; এটা ভাবতেই বিবমিষা হয়।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ