প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ফরিদ আহমেদ | ২৪ জানুয়ারী, ২০২২
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে তেইশ জন ছেলেমেয়ে আমরণ অনশনে গিয়েছে। সেই অনশনের ছয়দিন চলছে আজ। এদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাদেরকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিলো হাসপাতালে। আজ দেখলাম হাসপাতালে যাবার পর খানিকটা সুস্থ হতেই তাদের মধ্যে দুইজন হুইল চেয়ারে করে অনশনের স্থলে ফিরে এসেছে। এদের ফিরে আসা প্রমাণ করে, তারা তাদের দাবির বিষয়ে অনড়।
উপাচার্যের পদত্যাগের এই দাবিকে অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায় অযৌক্তিক বলে মনে করছেন এখনো। শিক্ষামন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেছেন এই উপাচার্যের সময়ে গত চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট উন্নতি করেছে এবং একাডেমিক শৃঙ্খলা বজায় ছিলো। কাজেই, হুট করে উপাচার্যের অপসারণের দাবি বাইরের ষড়যন্ত্র হবার সম্ভাবনাই বেশি।
উপাচার্যের অপসারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অবশ্য সরকারের এই ভাষ্যের সাথে একমত না। যে উপাচার্য পুলিশ ডেকে তাদের উপরে শটগানের গুলি ছোড়াতে পারে, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করাতে পারে, সেই উপাচার্যের প্রতি তাদের আর কোনো আস্থা নেই বলে তারা জানিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও এই বিষয়টাকে সমর্থন করি। পুলিশি হামলার সেই ভিডিওচিত্রটি আমি দেখেছি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপরে ওই ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার পরে উপাচার্যের আসলে ওই পদে থাকার নৈতিক অধিকার আর থাকে না।
তবে, সেটাও বিষয় না। উপাচার্যের অপসারণের দাবি যৌক্তিক কী অযৌক্তিক, সেটার চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা তার অপসারণ চাইছে। এই চাওয়াটা এতোই তীব্র যে এর জন্য তারা আমরণ অনশনের মতো চরম পন্থারও আশ্রয় নিতে দ্বিধা করছে না। এই বয়সী তরুণ-তরুণীরা প্রচণ্ড রকমের আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যেমন বলেছেন, বড়দের কাছে আমরণ অনশন একটা কৌশলমাত্র, কিন্তু এদের কাছে তা নয়। এরা আমরণ অনশন বলতে আমরণ অনশনকেই বোঝে। এই ছেলেমেয়েদের কর্মকাণ্ড দেখে সেটাই মনে হচ্ছে আমার কাছে।
এই পরিস্থিতিতে যৌক্তিক আর অযৌক্তিকের ইগো ধরে বসে থাকার কি সময় আছে আমাদের? যদি এই অনশনরত বাচ্চাদের কেউ মারা যায় বা কিংবা কারো যদি গুরুতর কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়, সেটার দায়-দায়িত্ব কে নেবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটা একটা প্রশাসনিক পদ। অসংখ্য সিনিয়র শিক্ষক আছেন যাঁদেরকে এই পদের জন্য মনোনীত করা সম্ভব। এমন না যে বর্তমান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর মতো কোনো যোগ্য লোক পাওয়া যাবে না। বর্তমান উপাচার্যকে সরিয়ে দিলে এমন কী ক্ষতিটা হবে তাহলে? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও সাহসী হয়ে উঠবে এটা করলে? আমার সেটা মনে হয় না। কোনো ভালো উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা এমন মরণকামড় দিয়ে অপসারণের আন্দোলনে যাবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
যাঁদের বিরুদ্ধে এরা আন্দোলনে যাবে, তাঁরা সেটারই যোগ্য।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য