আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

শিক্ষার্থীদের দাবির কী হলো?

ফরিদ আহমেদ  

আমার নিউজফিড ভেসে যাচ্ছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বন্দনায়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন ভঙ্গ করেছে এবং সেই অনশন ভঙ্গটা করিয়েছেন তিনি। ঢাকা থেকে সিলেটে গিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের অনশন ভঙ্গ করিয়েছেন। এটাই সবাইকে আবেগে আপ্লুত করে ফেলেছে। বলা হচ্ছে, তাঁর মতো মানুষ দ্বিতীয়টি নেই বাংলাদেশে। আর কেউ এই কাজটা করলো না, কিন্তু তিনি ঢাকা থেকে সিলেটে গিয়ে এটা করে এসেছেন।

সিরিয়াসলি? ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন করেছিলো কী জন্য? তাদের এক দফা দাবি আদায়ের জন্য। আর এই অনশন ভাঙাতে কারা চেষ্টা করেছিলো? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার। তারা দিনের পর দিন চেষ্টা করেছে, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী অনড় থেকে অনশন করে গিয়েছে। এখন অনশন ভাঙাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান কারা হয়েছে? নিশ্চিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাস্টের ভিসি আর সরকার। তাহলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল কাদের উপকার করে এলেন?

শিক্ষার্থীদের লাভের মধ্যে একটাই হয়েছে সেটা হচ্ছে সম্মানজনকভাবে তারা অনশন ভঙ্গ করতে পেরেছে। কারোরই আর জীবন সংশয় নেই। কিন্তু, তাদের আসল দাবির কোনো সুরাহা হয়নি। সহজ ভাষায় বললে এই আন্দোলন একটা ব্যর্থ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যদিও এখন এটাকে নানাভাবে বন্দনা করা হবে। যেমনটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল করেছেন। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের খুশি করার জন্য বলেছেন, ‘তোমরা জানো না কতো বড় কাজ করেছো তোমরা। ৩৪ ভিসির রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছো তোমরা।' এটা সত্যি কথা। তবে, সেটা ওই সাতদিনই। এখন এই ৩৪ ভিসি খুব আরাম করেই ঘুমাতে পারবেন।

অবশ্য মুহম্মদ জাফর ইকবালকে একা দোষ দিয়েও লাভ নেই। সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোর একটা অবস্থানে গিয়েছিলো। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। এ রকম বশংবদ লোকের অভাব তাদের নেই। এক ফরিদ উদ্দিন গেলে সেই জায়গা দখল করার জন্য আরও অসংখ্য ফরিদ উদ্দিন রয়েছেন।

সরকারের মূল সমস্যা ছিলো জনতার শক্তির কাছে হার না মানার ইগো। জনতার শক্তির কাছে তারা হারতে চায় না। এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা সফল হলে আরও অনেক জায়গাতেই জনতার শক্তির উত্থান ঘটবে। সেটা যাতে না ঘটে, তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা সরকার করেছে এই আন্দোলনকে শেষ করে দেবার জন্য। আন্দোলনে টাকা পয়সা দেওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়াটাই তাঁর প্রমাণ। সরকারের এই কঠোর অবস্থান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুখকর কিছু ছিলো না। ভিসি হঠাও আন্দোলনের জন্য সঠিক যৌক্তিকতা এবং হুট করেই অনশনের মতো চরম পন্থায় চলে যাবার সঠিক ব্যাখ্যাও তাদের কাছে ছিলো না। ফলে, তাদের জন্যও একটা সম্মানজনক এক্সিট ডোরের প্রয়োজন ছিলো। মুহম্মদ জাফর ইকবাল সেই এক্সিট ডোর হয়ে এসেছেন। তিনি এসে তাদের কর্মকাণ্ডের কিছু প্রশংসা করেছেন, পিলার ধরে তারা ঝাঁকিয়ে বিশাল কর্ম করেছে বলে পিঠ চাপড়িয়ে দিয়েছেন। সেটা শুনে সুবোধ বালকের মতো কান্নাকাটি করে তারা অনশন ভেঙে ফেলেছে।

তো, দাবির কী হলো? কিছুই না। বরং আন্দোলনটাই মিইয়ে গেলো। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাদের বলেছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটা প্রতিনিধিদল তাঁর বাসায় গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করেছে ছাত্র-ছাত্রীদের অনশন ভঙ্গ করতে। তাঁরা তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি পূরণ হবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিতো ছিলো একটাই। উপাচার্যের অপসারণ। সেটা করলেইতো ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন ভেঙে ফেলতো সাথে সাথেই। সেই দাবি যখন সরকার পূরণই করবে, তবে তার জন্য আগে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিলেটে পাঠাতে হবে কেন? এই মেসেজতো তাঁরা সরাসরিই শিক্ষার্থীদের দিতে পারতেন।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ