প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সহুল আহমদ | ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলন যে তরিকায় রাষ্ট্র দমন করেছে, সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। একেবারে শুরু থেকে ছাত্রলীগের হামলা, পরে পুলিশি হামলা, বা পরবর্তীতে 'তৃতীয় পক্ষ' খোঁজা, আন্দোলনকারীদের ওপর 'মোরাল পুলিশিং' করা এমন অনেককিছু, যা পূর্বে কার্যকর হিসেবে বিবেচিত হতো, সেগুলো কাজ করেনি। হুমকি-ধামকি দিয়ে আন্দোলনকারীদের বিভাজিত করার চেষ্টা, দাওয়াত দিয়ে ঢাকায় নেয়ার অপচেষ্টা- ইত্যাদি আসলে এবার কাজ করেনি।
বরং প্রথমে 'আরও কিছুদিন দেখি' মনোভাব নিয়ে এগিয়েছে। এজেন্সিগুলো সরব ছিল। তারপর হানা দেয়া হয় একেবারে ভেতর থেকে। আন্দোলনের একটি শক্তিশালী পয়েন্টে।
শাবিপ্রবিতে আন্দোলনে দুটো বিষয় জরুরি ছিল; বাইরে থেকে অনেকেই হয়তোবা খেয়াল করেননি। ক্যাম্পাসে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্তকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল; শিক্ষার্থীরা বলছিলেন, ক্যাম্পাসের আশেপাশের দোকানপাটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এর পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের চিকিৎসাসেবাসহ নানা খাতের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন সাস্টের সাবেক শিক্ষার্থীরা। সিনিয়ররা দাঁড়িয়েছিলেন জুনিয়রদের পাশে। রাষ্ট্র এরপর আন্দোলনকারীদের ওপর আঘাত না করে আঘাত করে সেই জায়গায়। সিনিয়রদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, একাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়া হয়। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দমনের এই তরিকা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার। প্রথমত, ধরেন এরপর শাবিপ্রবিতে কোনো আন্দোলন বা অন্য যেকোনো ভার্সিটিতে আন্দোলন দেখা দিলে, আন্দোলনকারীদের পাশে সিনিয়রদের পাশে দাঁড়ানোকে মুশকিলে ফেলে দেয়া হলো। ব্যক্তিগত একাউন্ট ফ্রিজ, বা হামলা-মামলা-বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া- কেবল আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা দানের জন্য- কেউ এই চাপ নিতে চাইবে না। ফলে আপনি আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে চাইলেও, ইতোমধ্যে যেহেতু ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে, সেহেতু আপনি দাঁড়াবেন না।
দ্বিতীয়ত, জিন শার্প তার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার রূপরেখাতে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলেছিলেন। আগে বুঝিনি ভালো করে, এখন বুঝতেছি। যখন আন্দোলন গড়ে তোলার কাজ করা হবে, তখন কিছু কিছু ছোট ছোট বিষয়কে নজরে আনতে হবে। যেমন আন্দোলনকারী কেউ আহত হলে, তার চিকিৎসা কীভাবে দেব? রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীনরা প্রচলিত ব্যবস্থা ব্যবহার করতে নাও দিতে পারে। [সাস্টে ঘটছে এটা]। আবার, আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হলে, আপনার তো আর্থিক সহায়তা দরকার। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর্থিক সাহায্য করতে এগিয়েও আসলেও, দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র চাইলে আপনার যে কোনো ধরনের একাউন্ট ফ্রিজ করে দিতে পারে। এই মুহূর্তে আপনি ট্রানজেকশন করবেন বিকাশ, নগদ ইত্যাদি দিয়ে। শাবিপ্রবির ঘটনা থেকে দেখলাম, কোনো নোটিশ ছাড়াই একাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়া হয়েছে। যদিও, কোনো ধরনের মানবাধিকার সংগঠন বা কেউ এটা করার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না। আমি জানি না, আইনিভাবে এটা সম্ভব কিনা।
আমরা যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই, সেই নিরিখে সমাজে কাজ করতে চাই, তাদেরকে এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। আমি আসলে জানি না, এই সঙ্কটকে সামলানো উচিৎ কীভাবে? আমাদের এগুলো নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো যত শক্তিশালী হচ্ছে, আন্দোলন গড়ে তোলাও তত কঠিন কাজ হয়ে যাচ্ছে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য