আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কোথায় কবি? গেয়ে ওঠো...

রহিম আব্দুর রহিম  

‘শিক্ষা’ এমন একটি অর্জন যা দেখা, ছোঁয়া, শোনা বা বলা যায় না। যার নেই কোন স্তূপাকৃত ভাণ্ডারখানা। তবে পাঠ্যবইয়ের বিষয়ের সাথে বাস্তবতা মেলানোর প্রচেষ্টায় হলো ‘শিক্ষাকাল’। এই কাল ঘরে-বাইরে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন আঙিনার সাথে সম্পৃক্ত এক আনন্দঘন কর্মযজ্ঞ।

মানুষ সুন্দর এবং আলোকিত হয়ে বেঁচে থাকার জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করে তার কোন পাঠ্যসূচি নেই; নেই কোন সিলেবাস। বয়স, বুদ্ধি-বিবেক বাড়ার সাথে সাথে যে, প্রকৃতির সাতকাহনের ঘোলাজলে, নোনাস্থলে, তপ্ত বালুর মরুভূমিতে, বরফগলা শীতল হাওয়ায় কঠোর পরিশ্রম এবং প্রাণান্ত চেষ্টায় দুর্বিষহ অভিজ্ঞতায় গড়ে ওঠে সেই মানুষরাই শিক্ষিত, সু-শিক্ষিত ও সশিক্ষিত। যে শিক্ষার ক্ষয় নেই। আর প্রতিযোগিতার শিক্ষা হলো নিরস, স্তব্ধ, গণ্ডিবদ্ধ, মৃত প্রাণের ভাগাড়ে। যা বারবার ওলট-পালট হয়ে একই কায়দায় একই স্থানে গন্ধ ছড়ায়।

মানব প্রেম, সামাজিক বন্ধন, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা কোন পাঠ্যসূচি কাউকে দিতে পারে না। এই শিক্ষা শিক্ষার্থীরা পায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে, কৃষক পায় ফসলের মাঠে, পরিবার পেয়ে থাকে তার পারিবারিক গণ্ডি থেকে।

আবেগ-অনুভূতি, রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্নার বিশাল রাজ্যই মানুষের জীবনাচরণের পাথেয়। যে মানুষ জীবন সংগ্রামের বিশাল সমুদ্রে সাঁতরাতে জানে না, সেই ব্যক্তিই মূর্খ, বধির এবং প্রতিবন্ধী। আর এই বিশাল সংগ্রামের দক্ষ মহাসৈনিক তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের উন্মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করা সময়ের দাবি।

করোনা ইস্যুতে বাংলাদেশের শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা অংকের হিসেবে পরিমাপ সম্ভব নয়। তবে দেশের রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুদ্ধিমত্তায় রাষ্ট্রের অন্যান্য উন্নয়ন সেক্টরগুলো বন্ধ হয়নি। ফলে জীবন-জীবিকায় তেমন কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি। তবে ‘শিক্ষা’ ক্ষেত্রে চরম বৈরি প্রভাব পড়েছে। লটারির মাধ্যমে ভর্তি, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, সাপ্তাহিক ২ দিন প্রতিষ্ঠানে ৪টি করে ক্লাসে পাঠগ্রহণ ইত্যাকার। টেলিভিশন কিংবা অনলাইনের ক্লাসেই যদি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা দেওয়া যেত, অর্জন বা গ্রহণ সম্ভব হতো তবে এই পৃথিবী আজ মানবের না হয়ে দানবের ভূ-স্বর্গে পরিণত হতো।

করোনা ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটাকে দেশের মানুষ কোনভাবেই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখেনি, দেখছেও না। কারণ, দেশের হাটে-ঘাটে, মাঠ-ময়দানে, কল-কারখানায় সর্বস্তরে মানুষের গিজগিজে অবস্থান, অথচ শিক্ষাদুয়ার বন্ধ হয়েছে। যা বিজ্ঞানসম্মত হয়নি বলে সর্বমহলের প্রতিক্রিয়া। যা একধরনের ‘গোঁড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতই অবস্থা। করোনা ইস্যুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ‘সরকার বিরোধী’ কোন রাজনৈতিক দল কোন প্রকার মিটিং-মিছিল, সমাবেশ করেনি; কারণ তারা চেয়েছে সরকারের প্রতি মানুষ কোন না কোন ইস্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠুক। তাদের দর্শন অনেকটাই কাজেও লেগেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অশিক্ষিত মায়ের রান্নাঘর থেকে প্রভাবশালীদের অট্টালিকায় নাড়া পড়েছে। যার একটা ভাল দিকও আবিস্কার করছে অনেকেই; গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ করোনার ইস্যুটি জানতে পেরেছে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। যেটা অন্য কোন উপায়ে জানানো ততটা সম্ভব হতো না বলে অনেকেই মনে করছেন। তারা এটাও স্পষ্টভাবে বলেছেন, করোনা ইস্যুতে শিক্ষার ওপর স্টিমরোলার বেশি চালানো হয়েছে।

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকা, খণ্ডকালিন চালু রাখা; আবার যা স্বাভাবিক নয়। দিনে তিনটি ক্লাস, সপ্তাহে দুই দিন আসা-যাওয়া, পরীক্ষার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পরও অভাবনীয় ফলাফল সাফল্য। এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা সাধারণের মাঝে নেই। বন্ধকালিন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি, উপবৃত্তি অনেকেই পায়নি। বঞ্চিত হয়েছে সরকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক সহপাঠ কার্যক্রমের অবনতি ঘটেছে। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনের ভৌত অবকাঠামোর অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটার পরও, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম অর্থাৎ ‘ফুল পেইজ’ পাঠদান কেনো সম্ভব নয়? এ প্রশ্ন সচেতন মহলে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে সেই ঘুরে-ফিরে আগের মতই, প্রতিদিন একটি শ্রেণির চারটি করে বিষয়ের পাঠদান চলবে। মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সব বিষয়ে পড়ানো হবে। যা মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের বেলায় কার্যকর। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ মার্চের প্রথমদিকে ক্লাস চলবে। এসময়ে অনলাইনে ক্লাস হবে। এ কি! যে বয়সে শিশুদের দেহ,মন-মনন গঠন এবং মেধার বিকাশে উড়ন্ত, দুরন্ত মুক্ত পরিবেশ দরকার, সেই বয়সে শিশুরা করোনা ইস্যুতে ঘরে আবদ্ধ।

কোথায় কবি নজরুল? জেগে ওঠো, গেয়ে ওঠো, “থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগত টাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ, যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে...।”

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ