আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সর্বগ্রাসী অন্ধত্ব

জহিরুল হক বাপি  

শরীর সুস্থ। শুধু ডান হাতে একটা মান্দার গাছের কাঁটার আগা ঢুকে আছে বেশ ক'বছর ধরে। মাঝে মাঝে হালকা জানান দেয়। ছোট চিকিৎসা করলে কাঁটাটা বের হয়ে যেত। চিকিৎসাও শুরু হলো। অদ্ভুত চিকিৎসা। কাঁটাকে পোষ মানানোর চিকিৎসা। কাঁটাকে সহনীয় করার চিকিৎসা। মান্দার গাছের সাথে শরীর ঘষাঘষি। কাঁটা শরীরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে অথবা কাঁটার ঘায়ে কাঁটা বের হবে। ফল হয়েছে উল্টা। কাঁটা এখন শরীরের দখল নিয়েছে। শরীরের ভিতরেই কাঁটা গাছ জন্মাচ্ছে আগাছার মতো। বর্তমানে বাংলাদেশের মৌলবাদের অবস্থা এমন।

ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্ম বিকৃতকারীদের, মৌলবাদীদের সরকার ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে রেখেছে। তাদের খুশি করার জন্য অন্যায্য আচরণ মেনে নিয়েছে। হতে পারে এটা সরকারের পলিসি ছিল কিন্তু এদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা। কিন্তু এখন বেড়া বাগান দখল করে ফেলেছে। গত ক'বছরে ওয়াজের নামে কোরান, হাদিসের বানোয়াট রেফারেন্স দিয়ে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী, নির্দিষ্ট এজেন্ডার মাধ্যমে এগিয়েছে। তারা আজ সফল। এদেশে আজ ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্ম বিকৃতিকারী ছাড়া কারো কোন অনুভূতি নাই, অনুভূতির মূল্য নাই। এসব তথাকথিত হুজুরেরা কেবল হিংসা, ঘৃণা ছড়িয়েছে। মানুষকে বিপথে নিয়েছে।

করোনার শুরুতে এসব হুজুরেরা বাণী দিয়েছে- মুসলমানের করোনা হয় না, করোনা হলে কোরান শরিফ মিথ্যা হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু দিন পরে দেখা গেছে এসব হুজুরেরাও করোনার টিকা নিয়েছে। কিন্তু তাদের কথা মেনে গণজমায়েতে গিয়ে, করোনার টিকা না নিয়ে কত মানুষ মরেছে তার কোন হিসাব কোন দিন হবে না।

সদ্য দুইটা ঘটনায় বাংলাদেশ তোলপাড়। সপ্তাহ দুয়েক আগে মুন্সীগঞ্জের একটি স্কুলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এবং টিপ-কাণ্ড। বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের লেকচার বা প্রশ্ন-উত্তর পর্ব নেটে ভাইরাল অডিও ও লিখিত। একজন বিজ্ঞানের শিক্ষকের দায়িত্ব যা তিনি তাই করেছেন। তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেননি। খুব গভীরভাবে দুইটার অবস্থা, অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতেই নাকি ধর্ম অবমাননা হয়েছে। ওই শিক্ষকের কী করা উচিত ছিল? মেনে নেওয়া উচিত ছিল পবিত্র কোরান থেকে বিজ্ঞানের উৎপত্তি?

যে ছাত্রটি তর্ক করেছে, গোপনে পুরো অডিওটি ধারণ করেছে অনেকেই তাকে গালাগাল করছেন, জঙ্গি বলছেন। কিন্তু ছাত্রটির দোষ আসলে কতটুকু? ছাত্রটির বয়স কত হবে? ১৪ থেকে ১৫। সে এত বছর ধরে যা শুনেছে সকাল সন্ধ্যা তাই তার মগজে গেঁথেছে। যারা তাকে উল্টাপাল্টা শুনিয়েছে এবং যারা শুনতে দিয়েছে তারা দোষী, ওই ছাত্র না। বিজ্ঞান, ধর্ম, রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা বিষয়, অথচ একটি গোষ্ঠী সূক্ষ্মভাবে তিনটার খিচুড়ি তৈরি করে মানুষকে খাইয়ে দিয়েছে।

স্কুলশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের জামিন হয়নি। আমি খুব জানতে আগ্রহী কেন তার জামিন হয়নি। জামিন না হওয়ার কারণে আমরা ধারনা করতেই পারি প্রাথমিক ভাবে তিনি অপরাধী। কিন্তু তার বক্তব্যে তো কোন রকম ধর্ম অবমাননা পাইনি, উপরন্তু মনে হয়েছে তিনি কোহিনুর হীরা। তিনি শুধু শিক্ষিতই নন, তিনি জ্ঞানী। ওই ছাত্রের অভিভাবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। কিন্তু তাদেরই বা কি দোষ দেব যেখানে পাঠ্য পুস্তকেই সাম্প্রদায়িকতার বাস।

এবার আসি টিপ প্রসঙ্গে। অপরাধী পুলিশ সদস্য আগে সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তিন বছর আগে তিনি ধর্মকর্মে মনোযোগী হন। সেটা হতেই পারে। স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তিনি আসলে ধার্মিক হননি। তিনি উগ্রবাদী হয়েছেন। তিনি যদি পুলিশে চাকরি না করতেন তবে টিপ পরার অপরাধে ওই দিন হয়ত অধ্যাপকের গলায় ছুরি চালাতেন। হঠাৎ করে তিনি এতটা উগ্রবাদী, বিপথগামী হলেন কেন? নিশ্চয়ই কারো না কারো মাধ্যমে হয়েছেন।

সরকার এ মাধ্যমগুলোর বিষয়ে আন্তরিক। এই মাধ্যমগুলো সফলভাবে ধর্মীয় অনুভূতির নামে মানুষকে নাজেহাল করছে। এদের জন্য ধর্মকর্মও ঠিক মতো করা যায় না। ক্রমাগত এরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে।

সরকার এদের এত সুবিধা দিচ্ছে, এত ছাড় দিল এদের মনোজগতে কি বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম, আওয়ামীপ্রেম জন্ম নিয়েছে? বিন্দুমাত্রও না। বরং অনেকেই ভাবছে এরা সঠিক বলে সরকার এদের কিছু করার, বলার সাহস পাচ্ছে না। এই কারণেও অনেকেই এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করছে।

যদি ইসলাম নিয়েও বলি তবে আক্ষরিক অর্থে এরা ইসলাম ধর্মের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্টও দেখেছি যেখানে স্পষ্ট করেই পোস্টকারী লিখছে হুজুর বলৎকার করলে গোনাহ তো হবেই না উল্টা সওয়াব হতে পারে। অন্ধত্ব কোন মাত্রায় পৌঁছালে মানুষ এমন ভাবতে পারে!

পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, শতভাগ বিদ্যুৎ, সব উন্নয়নকে গ্রাস করেছে ভয়ঙ্করতম অন্ধকার। এ দায়, দোষ সরকারের!

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ