প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ১৬ এপ্রিল, ২০২২
আমি বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বেতারে কিছুদিন কাজ করেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ডিএফপিতে বিশেষ সংযুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় লক্ষ্য করতাম তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিছু নির্দেশনা আসতো। কিন্তু এই নির্দেশনার অর্থ বুঝতে পারতো না প্রতিষ্ঠানগুলো। হয়তো নির্দেশ আসতো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশুদিবসে কিছু প্রাসঙ্গিক অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমাকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হতো অডিটোরিয়ামে শিশু কিশোরদের নিয়ে একটি লাইভ শো আয়োজনের।
সেই লাইভ শোর প্রস্তুতিকালে লক্ষ্য করতাম, রুটিন প্রতিটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর স্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সেসময়ের তথ্যমন্ত্রী আমাকে স্নেহ করে সরাসরি ফোন করতেন। আমিও উনাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতাম, প্রতিটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বিষয় সংযোজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিনা। উনি হেসে বলতেন, সবাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু প্রচার করে নজরে থাকতে চাইছে। আমি তো কেবল দর্শকের উপস্থিতিতে শিশু কিশোরদের অনুষ্ঠানটির কথা বলেছি। আর একটি আলোচনা অনুষ্ঠান করতে পারো।
এই যে আমাদের হুজুগ প্রিয়তা ও পরিমিতির অভাব, এর জন্য কখনো সরকার দায়ী নয়। সিভিল সার্ভিসে কাজ করার সময় বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারো ওপর অনুরক্ত বা বিরক্ত না হয়ে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। কোনদিন কোন মন্ত্রী বলেলনি যে, ❛তেলাঞ্জলি❜ দিচ্ছো না কেন! যারা বলে দলীয় সরকারের মন যুগিয়ে চলতে হয়, তারা আসলে নিজের ব্যক্তিত্বের দুর্বলতার দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপায়। সিভিল সার্ভিসে শত্রুতা হয় ভেতর থেকে। বনসাই ব্যর্থ সহকর্মীরা কানকথা লাগায়। কিন্তু অপদার্থ কানভারী করা কর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত কেউ পাত্তা দেয় না।
পহেলা বৈশাখের দিনে একটি শিশুর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাকে একজন টিভি সাংবাদিক প্রশ্ন রেখেছিলো, কেমন লাগছে বৈশাখ উদযাপনে এসে। শিশুটি বঙ্গবন্ধুর রচনা বলতে শুরু করে। শিশুটি দেখেছে, আকাশে মেঘ করলে চারপাশের মানুষ বলে, বঙ্গবন্ধু মেঘ পছন্দ করতেন। রোদ বাড়লে বলে, বঙ্গবন্ধু রোদে হেঁটে জনসংযোগ করতেন। সংগীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখার্জি মারা গেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সন্ধ্যার ছবি দেয়। ফলে শিশুটির বৈশাখ কিংবা বসন্তের রচনা আর পাঠ করা হয়ে ওঠেনি।
শিশুরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই উনাকে জানতে পারে। চারপাশে পদ পদক ক্ষমতার জন্য ❛তেলাঞ্জলির❜ মাধ্যমে যে বঙ্গবন্ধু চর্চা তা নেহাত শব্দদূষণ। ধর্ম ব্যবসায়ীরা শিশুদের দিয়ে ওয়াজ করায়, দেশ ব্যবসায়ীরা শিশুকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অভিনয় করায়। এসবই লালসালু সমাজের উপজাত অপসংস্কৃতি।
ফেসবুকে কয়েকজন ❛সহমত ভাই❜ শিশুর ট্রল হচ্ছে বলে হাপুস নয়নে কাঁদলো। অথচ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে এই সহমত ভাইয়েরা হেলমেট পরে শিশু নির্যাতন করেছিলো। শিশুটির ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সহমত ভাইয়েরা সাংবাদিককে বেআদব বলছে। গোস্বা করেছে কেন শিশুর বক্তব্য শেষ করতে দিলো না। সহমত ভাইদের আদব ও শিষ্টাচার সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। আর তাদের আইকিউ বা বুদ্ধাংকের অবস্থা তথৈবচ।
সহমত ভাইদের ❛তেলাঞ্জলির❜ প্রকোপে সমাজ একেবারেই নির্বোধ কোলাহলে পরিণত হয়েছে। ভিডিওর শিশুটি বুদ্ধিহীন দলদাস জনপদে বুদ্ধিমান তোতা পাখি। সে হ্যাঁচকা টানে সমাজের এক্সরে রিপোর্ট দিয়েছে। কীরকম চর্বিত চর্বণের মাজুল সমাজে আমরা আমাদের দেবশিশুদের বিকাশের পথ রুদ্ধ করে তাদের বনসাই করে রাখছি, শিশুটি সেই বাস্তব চিত্রের প্রয়োজনীয় কেসস্টাডি।
এই যে দলদাসত্বের মনোজগৎ, অতিরঞ্জন আর চর্বিত চর্বণের ভেউ ভেউ গ্রাম, সত্য উন্মোচিত হলে চট কইরা রাইগা ফোস্কা পইড়া যাওয়া, মিথ্যাবাদী রাখালের গ্রামে অনুভূতির শাপ শাপান্তর, শিশুর বুদ্ধি বিকাশ স্তব্ধ করে রাখার অপরাধীরা এসে শোনাচ্ছে চাইল্ড সেনসিটিভির গল্প। এই ভেক ধরা ডিএনএরা কদিন আগে আইজাক নামে এক চাইল্ড প্রডিজিকে গোষ্ঠী ধইরা গোবর ছুঁইডা আসছে। এখন ওর ❛তেলাঞ্জলি❜ কালচারের বাইপ্রডাক্ট শিশুটির জন্য কান্নারত কুমির হয়েছে। শিশুদেরকেও এরা দলীয় শিশু বানাতে উদ্যত।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য