প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ০৭ মে, ২০২২
খবরে এসেছে, টিকেট না কেটে রেলে ভ্রমণ করায় রেলমন্ত্রীর তিন আত্মীয়কে জরিমানা করেছিলেন রেলের এক টিটিই (ট্রাভেলিঙ টিকেট এক্সামিনার)। রেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বরখাস্ত হয়েছেন সেই টিটিই নিজেই! টিটিইরা বিনা টিকেটের এরকম অসংখ্য যাত্রীকে প্রায় প্রতিদিনই জরিমানা করে থাকেন, তাদের কাউকে কখনো বরখাস্ত করা হয়েছে বলে আজ পর্যন্ত শুনিনি।
অবশ্য আজ এক বিবৃতিতে, টিকেট না কেটে রেলে ভ্রমণ করা সেই যাত্রীদের সাথে নিজের আত্মীয়তার কথা পুরোদমে অস্বীকার করেছেন রেলমন্ত্রী। বিনা টিকেটের যাত্রীরা যদি রেলমন্ত্রীর আত্মীয় না-ই হন তাহলে কার ইশারায় ওই টিটিইকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করা হলো সেটাও একটা বার্নিং কোশ্চেন বটে!
কারণ এই বাংলায় আমাদের যে অপ-কালচার সেই আবহমানকাল থেকে চলে আসছে তার বদৌলতে এ কথা প্রায় চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায় যে, বিনা টিকেটের যাত্রীদের জরিমানা করার অপরাধে কোন টিটিইকে একমাত্র তখনই বরখাস্ত করা সম্ভব যখন সেই বিনা টিকেটের যাত্রীদের খুব উঁচুমানের(!) কোন মামা-চাচা থাকেন!
ভিন্নচিত্রও আছে। নিজে প্রায়ই রেলে ভ্রমণ করার সুবাদে দেখেছি এরকম বিনা টিকেটের যাত্রীদের বাগে পেলে টিটিইরা মোটামুটি হাতে স্বর্গ পেয়েছি এমন একটা ভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন। অনেকসময়ই দেখেছি টিটিইদের অনেকেই বিনা টিকেটের এইসব যাত্রীদের সাথে রেল আইনানুযায়ী না এগিয়ে ‘নিজেদের আইনানুযায়ী’ আগান। তারমানে সেই বিনা টিকেটের যাত্রীর কাছ থেকে রেল আইনানুযায়ী ভাড়া না নিয়ে নিজের মতো করে একটা ভাড়া রফা করে নিয়ে ভাড়াটি নিজের পকেটে ঢুকান, বিনিময়ে যাত্রীকে কোন টিকেট দেন না। এতে বিনা টিকেটের যাত্রীরা আশকারা পেয়ে টিকেট না কেটেই আবারও রেলে ভ্রমণ করার সাহস দেখান এই আশায় যে ধরা না পড়লে ছক্কা আর ধরা পড়লে টিটিইর সাথে রফা! এতে বিনা টিকেটের যাত্রী এবং টিটিই উভয়ই লাভবান হন কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্র।
যাইহোক, বরখাস্তকৃত টিটিইর বরখাস্তের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ আজ এমনই একটি ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন যে—রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বিচারে নয় বরং বিনা টিকেটের ওই যাত্রীদের সাথে অসদাচরণের জন্যই ওই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের এই ব্যাখ্যা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে সাধুবাদ দিতে চাই। কারণ বিনা টিকেটের যাত্রী এবং রেলের অসাধু কিছু টিটিইদের মাঝে যে ভিসিয়াস সাইকেল তৈরি হয়েছে তা ভাঙতে এই ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি ছিলো। সাথে সাথে এটাও বলে রাখা জরুরি যে, রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা যদি হয় 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকা'র অপচেষ্টা তাহলে সেটাও একটা অশুভ লক্ষণ। কারণ কোন বিনা টিকেটের যাত্রীকে যদি কোন টিটিই রেল আইনানুযায়ী জরিমানা করে থাকেন তাহলে তার লভ্যাংশ রাজকোষেই জমা হবে।
সুতরাং বিনা টিকেটের যাত্রী রেলমন্ত্রী বা কোন হোমড়াচোমড়ার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে তাকে জরিমানা করার কারণে কোন টিটিই বরখাস্ত হবেন এটা মেনে নেওয়া যেতে পারে না। কারণ এতে করে রেলের যাত্রীসেবায় বিশৃঙ্খলা বাড়বে, বাড়বে নৈরাজ্য। রাষ্ট্র হারাবে তার প্রাপ্য।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য