প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ০৮ মে, ২০২২
গত দুই দিন সামাজিক যোগাযোগ, পত্র-পত্রিকা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালে একটি সংবাদ বেশ চাউর হয়েছে। যাকে ‘টক অব দা কান্ট্রি’ হিসাবে উল্লেখ করলে ভুল হবে না। গত ৬ এপ্রিল খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী উঠেছিলেন। যাদের টিকিট ছিলো না। এরা আবার দখল করেছে রেলওয়ের কেবিন। যাচ্ছিলেন ঢাকা। তারা নাকি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপির স্ত্রীর ফুপাতো ভাই।
ওই তিন যাত্রীকে কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম, তার রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা থেকে অপরাধী যাত্রীদের ১০৫০/- টাকা ভাড়া আদায় করেন, টিটিই শফিকুলকে স্যালুট। এই যাত্রীরা ঢাকা পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন। আর যায় কই? বিনাটিকেটে ট্রেন ভ্রমণকারীর অভিযোগে বরখাস্ত হন, দেশপ্রেমিক টিটিই শফিকুল ইসলাম। এই নিয়ে তুলকালাম।
তবে মন্ত্রী এই ব্যাপারে বলেছেন পাবনার ঈশ্বরদী রেল জংশন থেকে বিনাটিকেটে ভ্রমণ করা যাত্রীরা তার আত্মীয় নন। অন্য দিকে ওই যাত্রীর মা অর্থাৎ রেলপথ মন্ত্রীর স্ত্রীর ফুপাতো বোন সাংবাদিকদের বলেছেন, বিনাটিকেটে রেল ভ্রমণকারী তার সন্তান। তিনি রেলমন্ত্রীর স্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পর যা হবার তাই হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ। একজন মন্ত্রীর স্ত্রীর জানা থাকা দরকার, দেশ জনগণের, জনগণের সম্পদ রেল। আর এই রেলকে রক্ষা করার জন্যই মন্ত্রী। একজন মন্ত্রী একটি মন্ত্রণালয়ের টিমলিডার যার নেতৃত্বে একটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের সুফল-কুফল নির্ভর করে। কোন মন্ত্রীর স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন, ভাই বোন মন্ত্রী নন। এটা ভুলে গেলে চলবে না।
একই সাথে বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতি আক্রান্ত খাতটি এখন রেলবিভাগকে বলা যায়। আমাদের দেশের প্রথম টার্মে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এই মন্ত্রীকেও কালোবিড়ালে পেয়েছিলো বলে অভিযোগ তুলে তাকে কুপোকাত করা হয়েছে। আজ বুঝা যাচ্ছে সেদিনের ওই ঘটনাটিও একটি ষড়যন্ত্র। দ্বিতীয় টার্মে মন্ত্রিত্ব পান কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের মুজিবুল হক। এই মন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন রেলবিভাগকে পরিচ্ছন্ন করতে। কিন্তু পেরে না উঠার কারণ, তার স্ত্রীর অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য। যা প্রধানমন্ত্রীও জানতে পেরেছিলেন। এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনের অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ইমেজের কর্মীবান্ধব নেতা এলাকার সার্বজনীন ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি’র গত নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি তার স্ত্রীকে হারান। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই আজকের রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। উনি মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর রেলখাতের বিভিন্ন দুর্বল সেক্টর গুলোকে সবল এবং দুর্নীতি মুক্ত রেলখাত বিনির্মাণে নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। যে কারণে দেশের সর্বমহলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান মন্ত্রীর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তবে মন্ত্রী নাকি অফিসার নির্ভর বলে মনে করেন রেল বিভাগের ঠিকাদাররা। আবার অফিসাররা মনে করছেন রেলপথ মন্ত্রী ঠিকাদারপন্থী।
যে যাই বলুক না কেনো, মন্ত্রীর কড়াকড়ি, দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান যে তাঁকে রেল বিভাগের একটি অংশের সুবিধাবাদীদের মুখোমুখি দাড় করিয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই । রেলপথ মন্ত্রীকে যারা চিনেন, জানেন তারা কখনো বিশ্বাস করতে পারেন না যে, রেলপথ মন্ত্রী বিনাটিকেটে রেল ভ্রমণকারী কোন ব্যক্তিকে সমর্থন দেবেন হোক সে সাধারণ, হোক সে তার কোন আত্মীয়। তবে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী অফিসারদের নাম্বার কিভাবে পেলেন? সবকিছু মিলিয়ে মন্ত্রীকে বিপদে ফেলার জন্য এই নাটক তৈয়ার হয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাদের এই যুক্তির সত্যতা মিলাতে তারা বলেন, (ক) রেলপথ মন্ত্রীর স্ত্রীর ফুপাতো ভাইয়ের টিকিটের জন্য রেলমন্ত্রীর স্ত্রী আগেই স্টেশন মাষ্টারকে ফোন করেছিলেন বলে বিনাটিকেটে ভ্রমণকারী একযাত্রীর মা সাংবাদিকদের বলেছেন। স্টেশনমাস্টার সম্ভবত এই সংবাদটি তার ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, জানানো এই বিষয়টিকে কাজে লাগানোর জন্য কোন ষড়যন্ত্র হতেও পারে। কারণ ওই স্টেশন মাষ্টার তাকে কেনো টিকিট সংগ্রহ করে দেয়নি। ধরে নিলাম ছিলো না। ওই যাত্রীরা যখন ট্রেনে উঠলেন তাদের কেবিন কে দিলো? তবে কি ট্রেন অরক্ষিত? তারা আরও বলেন, যে কোন যাত্রী যে কোন মুহূর্তে রেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেবা বিষয়ক অভিযোগ করতেই পারেন, সেক্ষেত্রে সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে কাউকে সাময়িক বরখাস্ত করার অধিকার কেউ রাখে না। এ থেকে প্রমাণ হয় রেল এখনো আইন প্রয়োগে গড়িমসি করছে যা বিধি সম্মত নয়। যে রেলবিভাগের টিকিট চোরাকারবারিকে র্যাব গ্রেফতার করতে পারে সেখানে এই যাত্রীদের আইনের আওতায় না এনে একজন টিটিই কেই বরখাস্ত করা হলো?
যে মন্ত্রী তার ছেলে মেয়ে এবং নিজে লাইনে দাড়িয়ে টিকিট ক্রয় করে রেল ভ্রমণ করেন সেখানে তথাকথিত আত্মীয়রা কেনো বিনাটিকেটে রেল ভ্রমণ করবেন। মন্ত্রীর জন্মস্থান পঞ্চগড়ের কোন একগ্রামে। এই অঞ্চলের মানুষরা কোন দিন কখনো রেলে ওঠে ক্ষমতা দেখানো তো দুরের কথা তারা পঞ্চগড়ের মানুষ হিসাবেও পরিচয় দিয়ে মন্ত্রীকে খাটো করতে নারাজ। রেলপথ মন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন এবং চেনেন। এই ঘটনাটি কাকতালীয় নয়, একেবারেই পরিকল্পিত সেটা হতে পারে বিনাটিকেটে ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে অথবা মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ধ্বংস করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে সুযোগ খুঁজছিলো তাদের মাধ্যমে। আমরা রেলপথ মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ তবে তাঁর আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে বিনাটিকেটে কেউ রেল ভ্রমণে করুক তার পক্ষে মন্ত্রীও নন আমরাও নই। এই ঘটনাটি মন্ত্রীর জন্য একটি আশীর্বাদের হুশিয়ারি, বিশ্বাস তিনি এখন আরও কঠিন এবং কঠোর হস্তে মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকার জঞ্জাল পুরোধা কালো বিড়াল ও সাদা ইঁদুরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য