আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বাংলাদেশের শত্রু কারা: শত্রুদের চেনা উচিত

কবির য়াহমদ  

এমন না যে এর আগে বাংলাদেশে কারো মৃত্যুদণ্ড হয়নি, এমন না যে বাংলাদেশের আইন অনুসারে মৃত্যুদণ্ড সর্বোচ্চ শাস্তি নয়, এমন না যে শুধুমাত্র রাজাকারদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড তবু 'তাহারা' একচক্ষুনীতি ধারণ করে রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে কেবল এর বিরোধিতা করেন। 'তাহারা' আর কেউ নন তাহারা হচ্ছেন জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকারওয়ালা।

আমরা কথায় কথায় পশ্চিমাদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হই কিন্তু যখন অর্থের বিনিময়ে নীতি-নৈতিকতাকে বিক্রি হয়ে যাওয়া দেখি তখন নিশ্চয়ই তাদের এ দিক নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। রাজাকারদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে যাওয়া পশ্চিমা মানবাধিকারওয়ালাদের একপেশে মানবাধিকারের বয়ানকে নৈতিকতার মানদণ্ডে তুলনা করতে গেলে দেখা যায় পুরোটাই ফাঁপা এক অদ্ভুত বাঁশঝাড়! তারা কেবল বাঁশ দিতে চায় অথচ খেয়াল করে দেখে না তাদের তেড়ে আসা বাঁশগুলো ইউটার্ণ নিয়ে তাদের দিকেই ধেয়ে যায়!

আজ যারা রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে কুঁইকুঁই করছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় সে তারাই বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করে পাকিস্তানি এবং রাজাকারদের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল। মাত্র ৪৩ বছর আগে যারা গণহত্যাকে সমর্থন দিয়েছিল তারা কীভাবে এখন তাদের অবস্থান পালটায়?

পশ্চিমা মানবাধিকারওয়ালা আগেও বাংলাদেশবিরোধি ছিল, এখনও তাই আছে। সুতরাং রাজাকারদের ফাঁসির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া তাদের জন্যে নতুন কিছু নয়। আমাদের অনেকেরই কাছে হতে পারে নতুন সংবাদ তবে খেয়াল করে দেখুন আমরা পুরনো ইতিহাসকে নতুন করে দেখছি। ফলে বলা যায়- একাত্তরের গণহত্যার সমর্থনকারি বরাহদের ঘরে জন্ম নিয়েছে সহজাত বরাহ শাবক। বরাহ আর বরাহ শাবকদের নখর আর দংশন কিন্তু একই!

জাতিসংঘের মানবাধিকারওয়ালারা যখন রাজাকারদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তখন একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায় ২১ অক্টোবর ২০১৪ সালের এক সরকারি প্রেসনোটের মাধ্যমে জানা যায় জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশ ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মনোনীত হয়েছে এবং সেটা রীতিমত ভোটাভুটির মাধ্যমে। উক্ত পদে ভোটের অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।  ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ সর্বমোট ১৪৯টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়।

মনোনয়ন এবং নির্বাচনের দুই সপ্তাহের মাথায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কেন্দ্রিয় কমিশনের পক্ষ থেকে আগের মতোই রাজাকারদের বাঁচাবার অনৈতিক দাবি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ৬ নভেম্বর ২০১৪ জাতিসংঘের এক্সিকিউশন-বিষয়ক স্পেশাল রিপোটিয়ার ক্রিস্টফ হেইন্স এবং বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল রিপোটিয়ার গ্যাব্রিয়েলা নাউল জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের পক্ষে দু'জন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জেনেভা থেকে রাজাকার কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে এই কমিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের কোন মানে আছে কীনা সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতে পারিনা। হতে পারে, এই কমিশনের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ একেবারে নবিস এবং কোন ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি অথবা মানবতাবিরোধি অপরাধের বিচারের যৌক্তিকতা বাংলাদেশ এখনও বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে পারেনি যথাযথভাবে। এটা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, যার দায় এসে পড়ে সরাসরি সরকারের ওপর!

রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর মুহুর্তে আমরা দেখেছিলাম বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালি মহলের অনুরোধ-উপরোধের ঢালি। এক্ষেত্রে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকাকে উল্লেখ করতেই হয়, তিনি সব ধরণের চাপকে উপেক্ষা করে রাজাকারদের বিরুদ্ধে দেওয়া আদালতের রায়ের প্রতি আস্থা রেখে সাহসি সরকারি সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। আমরা আশা করছি, এখনও তিনি সে ধরণের মানসিক শক্তিসামর্থ্য ধারণ করেন এবং বাংলাদেশের মানুষদেরকে দেওয়া তাঁর অঙ্গীকারের প্রতি অবিচল আছেন। বাংলাদেশের মানুষদের আস্থার জায়গা এখানেই যে সব ধরণের ভয়ভীতি, অনুরোধ-উপরোধ, চাপ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা তাঁর অবস্থানে ঠিক আছেন। যদিও এই সরকারের মধ্যকার অনেক প্রভাবশালি মহলের প্রতি জনগণ আস্থা রাখতে পারে না, বিশেষ করে সরকারের আইনমন্ত্রি আনিসুল হক- যিনি ইতোমধ্যেই রাজাকারদের প্রতি তার অনুরাগের জায়গাকে স্পষ্ট করে তুলেছেন অযাচিতভাবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এই আহ্বানকে সরকার হয়ত পাত্তা দেবে না, দেওয়া উচিতও নয় কিন্তু এসব অযাচিত বেআইনি আবদার আমাদের দায়মুক্তি প্রক্রিয়ার বাঁধা হিসেবে পরিগণিত হবে। যখন বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের ইতিহাস নিয়ে লিখা হবে তখন অনেকেই হয়ত এরকম বিষয়কে উপস্থাপন করে খণ্ডিতভাবে প্রমাণ করতে চাইবে এই বিচার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল, হয়ত তুলনামূলক আলোচনায় অযৌক্তিক এরকম উদ্ধৃতি টিকবে না কিন্তু যখন কেউ ইচ্ছেকৃতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইবে তখন সে বা তারা খণ্ডিতভাবেই এক শ্রেণিকে উদ্দেশ করে লিখবে। ফলে সার্বজনিন এই দাবির প্রতি কালিমালেপনের চেষ্টা করা হবে। আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না সরকার কেন বহির্বিশ্বে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরছে না? যদিও আমরা সবাই জানি অর্থের বিনিময়ে কিছু লোক ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। এ সত্যকে মেনে নিয়েও বাংলাদেশ সরকারের উচিত সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া। কারণ কলংকমুক্তির এই প্রক্রিয়া আওয়ামীলীগ সরকারের হাত দিয়ে শুরু হলেও এটা গণদাবি ছিল এবং এখনও আছে।

এদিকে রাজাকার গোলাম আযমের লাশ সরকারি সহযোগিতায় বাংলাদেশের জাতিয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সম্পাদন হওয়ার পর সারা দেশে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। একাত্তরের গণহত্যার সাইনবোর্ড, মাস্টারমাইণ্ড রাজাকার গোলাম আযমের জানাজায় আমরা দেখেছি সরকারি ব্যবস্থাপনার কুৎসিত রূপ। লাশ নিয়ে আসতে পুলিশি ব্যবস্থা দেখে মনে হয়েছিল উচ্চপর্যায়ের কোন সরকারি, জাতিয় ব্যক্তিত্বের মর্যাদাকর ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট আটকে রেখে যেভাবে জানাজার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তাতে করে মনে হয়েছিল সমগ্র প্রশাসন ব্যস্ত ছিল সৎকারকার্যে। বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দেশদ্রোহির অন্তিম সৎকারে এর আগে কোন দেশ কখনও কী করেছিল সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণার দরকার আছে হয়ত তবে খুব সাধারণভাবে যদি দেখা হয় তাহলে বলা যায় এটা নজিরবিহীন। রাজাকারতোষণের এমন ঘৃণ্য কাজ সম্পাদন করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। আমরা নিশ্চিত না কেন এমন করা হলো? সুযোগ পেয়ে জামায়াতে ইসলামি বেশ লোক সমাগম করতে পেরেছে। গোলাম আযমের পুত্রদের বিদেশ থেকে আসার অজুহাতে তারা দুই দিন পিছিয়েছিল জানাজার নামাজ, মুল উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশ থেকে লোক নিয়ে এসে শোডাউন। জামায়াত সেটা করতে পেরেছে অপ্রকাশ্য সরকারি সহযোগিতায়। অথচ দাফন পিছিয়ে দেওয়ার যে কারণ তারা দেখিয়েছিল সে কারণ তথা গোলাম আযম পুত্রগণ বিদেশ থেকে আসেনি।

রাজাকার গোলাম আযমের জানাজার নামাজের আড়ালে ঢাকায় শোডাউন প্রক্রিয়া সম্পাদনের পর সরকার একটু নড়েচড়ে বসেছে বলে মনে হচ্ছে। চুড়ান্ত রায়ে রাজাকার কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার পর জামায়াতে ইসলামি একইভাবে ঢাকায় জানাজা সম্পাদন করে শোডাউনের প্রস্তুতি যখন নিচ্ছিল তখন সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রি বলেছেন- ঢাকার মাটিতে আর কোন যুদ্ধাপরাধির দাফন হবে না।সরকারের এই বোধোদয় দেরিতে হয়েছে তবু ধন্যবাদ। তবে এই বিধিনিষেধ শুধু দাফনে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না জানাজাতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। মাত্র নয় মাসের মাধ্যমেই এই দেশ এই স্বাধিন ভূখণ্ড আর পতাকা পায়নি- এর পেছনের ছিল দীর্ঘ আত্মত্যাগের ইতিহাস। এই ত্যাগ মাটির জন্যে; স্বাধিনতার জন্যে। দুঃখের বিষয় হলো রাজাকারদের দাফন এই বাংলাদেশেই হচ্ছে। অথচ রাজাকারদের লাশ এই মাটি সহ্য করার কথা নয়। আমরা মানুষ বলে আমাদের সহজাত সীমাবদ্ধতায় আমরা মাটির আর্তনাদ বুঝতে অক্ষম ছিলাম বলে বুঝতে পারছি না এই বাংলাদেশের মাটি অভিশাপ দিচ্ছে নিয়ত তাঁর বুকে রাজাকার কাদের মোল্লা, রাজাকার আলীম এবং রাজাকার গোলাম আযম শুয়ে আছে বলে। রাজাকারদের লাশের প্রকৃত দাবিদার পাকিস্তান বলে  পাকিস্তানের লাশ পাকিস্তানেই বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। বাস্তবতা মেনে নিয়েহয়ত এটা সম্ভব না তবু অন্তত একবার হলেও পাকিস্তানকে তাদের মানুষ তাদের কাছে নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো উচিত। ফলে অন্তত ইতিহাসে এটাও লিখা থাকত রাজাকারদের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পাকিস্তানও যাদের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যার সহযোগি ছিল রাজাকারেরা।

প্রশ্ন আসতে পারে কী হিসেবে পাকিস্তান রাজাকারদের লাশ ফিরিয়ে নেবে? সহজ উত্তর- শুধুমাত্র একাত্তরেই পাকিস্তানের প্রতি রাজাকারদের আনুগত্য ছিল না জীবদ্দশায় তারা প্রকৃত ছিল একেকজন পাকিস্তানি, যা তারা বিভিন্ন সময় তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতেও প্রকাশ করেছে। উপরন্তু রাজাকারদের শাস্তি ঘোষিত এবং কার্যকর হওয়ার পর সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া হয় পাকিস্তানে। রাজাকার কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান পার্লামেন্ট শোক প্রস্তাব গৃহিত হয়েছিল এমনকি পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশে আক্রমণের হুমকি সম্বলিত বিভিন্ন আহ্বান জানানো হয়েছিল তাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ রাজাকার মতিউর রহমান নিজামির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর পাকিস্তানের বর্তমান স্বরাষ্টমন্ত্রি অতীতকে ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রাজাকারদের বিচার বাংলাদেশের জন্যে সুখকর হবে না বলেও হুমকি দিয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি চৌধুরী নিসার আলী খান পাকিস্তান জামায়াতের ইসলামির নেতা নন। পাকিস্তানের দৈনিক দ্যা ডনে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেন- “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, ৪৫ বছর আগে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ সরকার এখনো সেটাকে সামনে নিয়ে আসছে। বাংলাদেশে যা ঘটছে তা একান্ত তাদের ব্যাপার হলেও ১৯৭১ এবং এর পরে ঘটনাসমূহ থেকে দূরে অবস্থান নিতে পারে না পাকিস্তান”।

পাকিস্তান রাষ্ট্র, জামায়াতে ইসলামি যখন তাদের অবস্থান বদলায় না তখনও আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো রাজাকারদের রাজাকার বলতে ভীষণ রকমের অনীহা প্রকাশ করে চলেছে। আদালত কর্তৃক মানবতাবিরোধি অপরাধি রাজাকারদের গণহত্যা সম্বলিত অপরাধ প্রমাণের মাধ্যমে যখন রায় হচ্ছে তবু তারা এখনও রাজাকারদের তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েই আখ্যা দিয়ে চলেছে। অভিধা দেখে মনে হয় আদালত জামায়াতে ইসলামি নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দিচ্ছে অথচ প্রকৃত ঘটনা হলো অন্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধি অপরাধি রাজাকারদের বিচারের কাজ সম্পাদন হচ্ছে। আদালত যখন রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাইদির যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় দিচ্ছিলেন তখন স্পষ্ট করেই উচ্চারণ করেছিলেন তাঁরা বিচার করছেন রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাইদির, কোন মাওলানা কিংবা জামায়াত নেতার নয়। এরপরেও বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর সম্ভোধন প্রক্রিয়া আদতে কাদের জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়।

রাজাকার গোলাম আযমের মৃত্যুর পর রাজাকারপুত্র আজমি আমাদের সব মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছিল এমনকি একাত্তর টেলিভিশনের মতো টিভির টকশোতে গিয়ে রাজাকার পিতার পক্ষে সাফাই গেয়ে এসেছে। সব মিডিয়া তার বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে ছাপিয়েছে, প্রচার করেছে। এর মধ্যে সংবাদমূল্য কোথায় ছিল দর্শক-পাঠক হিসেবে আমরা খুঁজে পাইনি অথচ আমাদের সাংবাদিকেরা পেয়েছিলেন। রাজাকার পরিবারকে হাইলি প্রমোট করার মধ্যে সংবাদমূল্যের মুখরোচক বক্তব্যের আড়ালের রাজাকারবন্দনার কৌশল আছে কীনা সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। উপরন্তু মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই এখনও রাজাকারদের 'অভিযুক্ত' হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে, তারা রাজাকারদের রাজাকার বলার মতো শব্দ উচ্চারণ করতে ভীষণ রকমের অনিচ্ছুক। অথচ আদালতের রায়ে এবং ইতিহাসের সত্যাসত্য দলিলের হিসেবে এরা কেবল অভিযুক্তই নয় প্রমাণিত দেশদ্রোহি রাজাকার।

রাজাকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল থাকার পর মিডিয়াগুলোর উৎপাত রাজাকারবন্দনার আগেকার রূপের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে। কামারু রাজাকার জেলখানায় বসে মিষ্টি খেলেন কী না খেলেন সেটাই এখনকার সংবাদ। কার হাত দিয়ে মিষ্টি মুখে গেল, কে কে কাঁদল আর কে কে বিষণ্ণ হয়ে ছিল সেটা যদি হয় সংবাদের বিষয়বস্তু তাহলে মিডিয়াওয়ালাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দেয়। রাজাকারপুত্ররা মিডিয়ার সামনে কী বলেছে সেটা যদি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করতে হয় তাহলে রাজাকারপরিবারগুলো নিশ্চয়ই রাজাকারদের কৃতকর্মের জন্যে গর্বিত হবে। ফলে রাজাকারদের ঘর থেকে একেকটা রাজাকার জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে সারাদেশে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা রাজাকার অনুসারিরা উপকৃত হবে।

রাজাকারবন্দনার এসব সত্যকথনের পর তারা হয়ত বলবে মিডিয়া জানে কার সংবাদ মূল্য কত এবং কাকে কীভাবে নিউজ করতে হয়। হ্যাঁ, আমরা হয়ত সাংবাদিক নই, হয়ত আমরা সাংবাদিকতার কিছুই জানি না তবে পাঠক-শ্রোতা-দর্শক হিসেবে জানি কার কী সংবাদমূল্য। আমাদের উদ্দেশ করে সংবাদগুলো যখন নিবেদিত তখন আমাদের চাওয়ার মূল্য থাকা উচিত বৈকি!স্বভাবত মিডিয়াওয়ালাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- সংবাদমূল্যে রাজাকারপ্রচারের সাথে বাণিজ্যিক, নৈতিক আদর্শের কতখানি সম্পর্ক? দেশবাসি রাজাকারদের বিচারের বিপক্ষে বলে কী মিডিয়া মনে করে? সারাদেশে রাজাকার অনুসারিদের সংখ্যা হয়ত দুই ভাগ, এই ক্ষুদ্র সংখ্যাই কী মিডিয়ার উদ্দিষ্ট দর্শক-শ্রোতা?

বাংলাদেশের কলংকমুক্তির বর্তমান প্রক্রিয়ায় সফল হবে ধারণা করি। এই সময়ে বর্ণচোরা যারা, অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে যায় যারা এবং যারা একাত্তরের গণহত্যাকে সমর্থন করে ক্রমান্বয়ে তাদের চেহারা প্রকাশ হয়ে চলেছে। পশ্চিমা মানবাধিকারওয়ালা কিংবা দেশের মধ্যকার যারা রাজাকারবন্দনা করে চলেছেন তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত।  রাজাকারদের পক্ষাবলম্বন মানেই হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যাওয়া। বাংলাদেশ তাঁর শত্রুদের আগেও ক্ষমা করেনি, এখনও করবে না- আমরা নিশ্চিত!

একাত্তরে কারা ছিল বাংলাদেশের শত্রু, এখন কারা আছে বাংলাদেশের শত্রু হিসেবে। আমরা কী তাদের চিনি? চেনা ত উচিত; অন্তত নিজেদের স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থে!

কবির য়াহমদ, প্রধান সম্পাদক, সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর; ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ