আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

হিরো আলম ও আমাদের আইনের শাসন

সঙ্গীতা ইয়াসমিন  

ভেবেছিলাম, এ বিষয়ে নীরবতাই শ্রেয়। যদিও এর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে কথা বলার, তথাপি এ বিষয়টিকে অপরাপর বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে বলেই মনে হল। গত জুলাই ২১ তারিখে প্রকাশিত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন দৃষ্টিগোচর হওয়াতে এ লেখার অবতারণা।

প্রসঙ্গ হিরো আলম; হিরো আলম কর্তৃক গীত রবীন্দ্রসংগীতসহ আরও তিনটি গানের মিউজিক ভিডিও "আমারও পরাণ যাহা চায়" ইউটিউবসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেবার নির্দেশ দিয়েছে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্ট।

নোটিশ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে সে মূল গান বিকৃত সুরে ও নতুন বাক্য সংযোজনায় গেয়েছে। হিরো আলমের বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা দেখে সত্যিই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে আমার দেশে আদতেই আইনের শাসন রয়েছে!

এছাড়াও তরুণ-যুবাদের সুপথে পরিচালিত তথা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং সর্বোপরি শিল্প সাহিত্যের সংরক্ষণে আমাদের রাষ্ট্র যে কতটা তৎপর তার সুস্পষ্ট প্রমাণও মিলেছে নোটিশের এই বয়ানে।

তথাপি কিছু প্রশ্ন জাগে:
১. হিরো আলমের কার্যক্রম যেখানেই যেভাবেই থাক, সে কি কাউকে বাধ্য করেছে তার গান শুনতে? না করে থাকলে আমরা কেন তাকে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছি? জনগণের সামান্যতম স্বাধীনতায়ও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ?

২.হিরো আলম বেসুরো কণ্ঠে গান গেয়ে, প্যারোডি কিংবা নিজস্ব শব্দযোগে গেয়ে যতটা অপরাধ করেছে তা কি ধর্ষণ, হত্যা, খুন কিংবা রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে চুরি এবং সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির চেয়েও মারাত্মক অপরাধ?

৩. ধর্মীয় বয়ানের নামে ওয়াজের নামে হাদিস এবং কোরানের ভুল তরজমা, বিশ্রী মুখভঙ্গি, নাচন, কোদন করে, চীৎকার করে নারীদেরকে গালাগাল দিয়ে অধিক বিবাহে উৎসাহিত করে ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কান ঝালাপালা করে ফেলেছেন একদল মানুষ। সেখানে দাওয়াত দিয়ে হাজার হাজার জনতাকে, যুবকদেরকে শুনতে বাধ্য করা হয় সেই ওয়াজ, এবং সেসব যথারীতি বিনেপুঁজিতে জমজমাট ব্যবসার নামান্তর। যার প্রভাব সরাসরিই পড়ে যুবকদের মনোজগতে। সেসব বিষয়ে কি সুপ্রিম কোর্ট ওয়াকিবহাল আছেন? যদি হ্যাঁ হয়, তবে সেক্ষেত্রে তাঁদের পরিকল্পনা কী?

৪. সর্বোপরি, হিরো আলম সমাজের উঁচু স্তরের কেউ নয়, তার খুঁটির জোর নেই বলেই কি তার টুটি চেপে ধরার পায়তারা? অন্য কারও বেলায় একইরকম ঘটনা হলে কি একইরকম ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতেন রাষ্ট্রপক্ষ?

এমন প্রশ্ন আদতেই অসঙ্গত নয়। যখন দেশজুড়ে আইনের শাসনহীনতা, খুন, হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা পত্রিকার পাতাজুড়ে নিতান্ত মামুলি ব্যাপার, সেখানে হিরো আলমকে নিয়ে রাষ্ট্রের এই টানাটানিকে মশা মারতে কামান দাগানোর মতই মনে হচ্ছে।

যদিও ব্যক্তিগতভাবে হিরো আলম সম্পর্কে আমি খুব স্বল্পই জানি। আর খুব বেশি আগ্রহও নেই জানার। একজন মানুষ নিজের খেয়ালখুশি মত যা ইচ্ছে করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র তখনই কথা বলতে পারে যদি তা পেনাল কোড অনুযায়ী অপরাধ হয়ে থাকে, যদি তা জনসাধারণের জান-মাল-নিরাপত্তার কোনো ক্ষতিসাধন করে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় হিরো আলমের কার্যক্রমগুলো কোনোভাবেই কারও ক্ষতি করছে না, বরং হাসির খোরাক যোগাচ্ছে।

ব্যক্তিগতভাবে হিরো আলম, ড. মাহফুজুর রহমান এবং অনন্ত জলিল, কারও কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলার, সমালোচনা করার কোনো আগ্রহ কিংবা রুচি আমার নেই। এই তিনজনের জীবন এবং আজকের পর্যায়ে নিজেদের নিয়ে আসতে তাদের যে সততা, যে দৃষ্টিভঙ্গি, যে ইতিবাচক মনোভাব, পরিশ্রম সেগুলো বরং আমাদের আলোচনা-সমালোচনার বিষয় হতে পারে। আদতে আমরা কারও কোনো ইতিবাচক বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করি না। আমরা ট্রলে ওস্তাদ জাতি। জাতি হিসেবে আমরা কি খানিকটা সার্কাজম প্রিয়ও নই? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ট্রল করেই আমরা হিরো আলমকেও হিরো আলম বানিয়েছি।

সেকারণেই আমাদের হাতে অপশন থাকা স্বত্বেও আমরা রিমোট নিয়ে যথাসময়ে এটিএন চ্যানেলের সামনে বসে থাকি। আমরা টিকেট কেটে অনন্ত জলিলের ছবিও দেখে তার গোষ্ঠি উদ্ধার করি।

আমরা জানি আইনের হাত অনেক লম্বা, এবং আইন অন্ধ। আইন যত্রতত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহল আরও একটু বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন বলেই আমরা আশা করতে পারি। ভবিষ্যতে দেশের ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, এবং বৃহৎ যেকোনো বিষয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্ট তার ন্যায়নিষ্ঠ ও সুচিন্তিত ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি।

সঙ্গীতা ইয়াসমিন, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ