প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ | ২৮ অক্টোবর, ২০২২
আগামীকাল (২৮ অক্টোবর) রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ। একই দিনে ঢাকার পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা সম্মেলন। বলা হচ্ছে, রংপুর বিভাগে শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বিএনপির খুলনা মহাসমাবেশের আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিলো!
এই ধর্মঘটের মাঝেও আগামীকাল রংপুরের বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগদান উপলক্ষে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা আজ শুক্রবার থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছে। একাত্তর টিভিতে এমনই একটি প্রতিবেদন দেখলাম। ব্যাপারটি এমন হওয়ায় স্বাভাবিক।
ধরুন, আজ যদি বিএনপির জায়গায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থাকতো তাহলে আমরা যারা আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী তাদেরকে কোন বাঁধা দিয়েই আপনি ঠেকিয়ে রাখতে পারতেন না। যদিও বলা হচ্ছে শ্রমিক ইউনিয়নের তরফ থেকেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তারপরও সাধারণ ও সচেতন নাগরিকদের (বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কথা না হয় বাদই দিলাম) অনেকেই এটা মানতেই চাচ্ছেন না, তাদের ধারনা এই পরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকার ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধন আছে।
একাত্তর নিউজের প্রতিবেদনে দেখলাম রংপুরের পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের কাছে যখন এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিলো তখন তিনি বলেছেন যে তিনি এই ধর্মঘটের কারণ জানেন না! আশা করি, বুঝতেই পারছেন সাধারণ সচেতন নাগরিক ও ভোটারদের কাছে কী মেসেজ যাচ্ছে। সাধারণ নাগরিকেরা ধরেই নিচ্ছে, বিএনপির মহাসমাবেশগুলোতে জনসমাবেশ যেন পর্যাপ্ত আকারে না হয় সেইজন্যই এই ধরনের অপকৌশল নেওয়া হচ্ছে।
আমি আওয়ামী লীগের কর্মী। আমার লাশটাও আওয়ামী লীগকেই সমর্থন দেবে! কিন্তু যারা আওয়ামী লীগ বিএনপি বুঝে না সেইসব ভোটারদের কাছে এমন 'হটকারি মেসেজ' দেওয়াটা কি খুব জরুরি ছিলো? এতে কি আদৌ কোন লাভ হচ্ছে? বিএনপি নিবেদিত কর্মী-সমর্থকদের কি আদৌ আটকানো যাচ্ছে? বরং যদি কোন বাধা না থাকতো তাহলে কালকের সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য হয়তো আজ দুপুর থেকেই বিএনপি'র নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হওয়ার জন্য এতোটা তাড়না পেত না, যদি কোন বাধা না থাকতো তাহলে হয়তো বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে এতোটা মরিয়া হয়ে উঠতো না।
বাস্তবতা হলো, এই ধরনের রাজনৈতিক প্রোগ্রাম যতই বাধাগ্রস্ত হয় ততই বরং খরস্রোতা হয়। এটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বিএনপির মহাসমাবেশগুলোতে লাখ লাখ লোকের সমাবেশ না হলেও যেটুকু হচ্ছে মৃতপ্রায় বিএনপির কাছে সেটুকুই অনেক অনেক বেশি এবং এইসব মহাসমাবেশ থেকে যে শক্তি ও মনোবল বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা পাচ্ছে তা প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া দলটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।
আগামীকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা সম্মেলন উপলক্ষে আমাদের দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের এই জেলা সম্মেলনে যে গণজমায়েত হবে তা বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের চেয়েও বেশি হবে। তা হয়তো হবেও কারণ আমরা এখন ক্ষমতায় আছি, ক্ষমতায় থেকে অনেক কিছুই করা যায় যেখানে স্বার্থ থাকে কিন্তু স্ব-ইচ্ছা থাকে না।
ব্যাপারটা একটু ভেঙে বলি। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার সুবাদে দেখছি ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাবেশগুলোতে যে জনসমাবেশ হতো সেগুলো ছিলো একেবারে জেনুইন, যত বাধাই থাকুক এইসব সমাবেশে প্রতিটা নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা পুরোটা প্রাণ দিয়েই অংশ নিতো এবং তীর্থের কাকের মতো নেত্রীর বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতো এবং নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউই সমাবেশস্থল ত্যাগ করতো না। দল ক্ষমতায় আসার পর দেখলাম চিত্র পাল্টানো শুরু হলো, নেত্রীর সমাবেশগুলোতে আগের চেয়ে লোকসমাগম বাড়তে থাকলো কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করা শুরু করলাম যে এই সমাবেশের একটা বিরাট অংশ সমাবেশস্থলে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেই সমাবেশস্থল থেকে কেটে পড়া শুরু করে এমনকি নেত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার আগেই কিংবা নেত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই তারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করে!
এই বিরাট অংশটি কারা? এরা কি আদতেই আওয়ামী লীগের কর্মী? নাকি ভাড়া খাটা অ-আওয়ামী লীগের কেউ? আওয়ামী লীগের কেউ হলে তো নেত্রীর বক্তব্যের আগে সমাবেশস্থল ত্যাগ করার কথা না! সেজন্যই বলছিলাম, ক্ষমতায় থাকলে মিছিল সমাবেশে জমায়েত ঘটানো যতোটা না চ্যালেঞ্জ তার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জ ক্ষমতার বাইরে থেকে মিছিল সমাবেশে জমায়েত ঘটানো। ক্ষমতায় থেকে একলাখ জমায়েত ঘটানো যতোটা সহজ ক্ষমতার বাইরে থেকে পঞ্চাশ হাজার জমায়েত ঘটানোও তার চেয়ে কঠিন!
তাই বলছি, বিভিন্ন ছলছুতোয় তাদেরকে বাধা দিয়েন না বরং ছেড়ে দিন, দেখবেন জমায়েত এমনিতেই কমে যাবে! অন্যদেরকে বাধা না দিয়ে বরং নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির উপর আস্থা রাখুন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য