আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

‘বিউটি ইজ ট্রুথ, ট্রুথ বিউটি’: শিক্ষামন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি

প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ  

মাননীয় মন্ত্রী,
সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। আমি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র এবং দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরেরও অধিককালের শিক্ষক। একমাত্র শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় ২৯ বছর। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন ও প্রায় দেড়যুগেরও বেশি সময়ের বিভাগীয় প্রধান। ভাগ্যিস, দীর্ঘ ৭ বছরে ইংলিশের উপর আমি একটিমাত্র ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। নতুবা, আজ হয়ত এই জায়গায় উঠে আসতে পারতাম না।

কিছুদিন থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ২/৩ টি নতুন পাঠ্যবই নিয়ে অনেক কথা শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু কোন একটি বই আজও আমি হাতে পাইনি, বা পাওয়ার চেষ্টাও করতে পারিনি। পত্রিকান্তরে দেখলাম, প্রয়োজনীয় সংশোধনের নিমিত্তে বইগুলো আপনি উঠিয়ে নিচ্ছেন। যদি কখনো হাতে পাই, তাহলে আমার পাঠ-মতামত/পাঠ-প্রতিক্রিয়া আপনাকে লিখব/জানাব।

আমি দেশের, বিশেষ করে মাধ্যমিকের, ইংরেজি পাঠ্যবই নিয়ে অনেক দিন থেকে খুবই বিব্রত আছি। কোন কোন শ্রেণির বই মাঝে-মধ্যে হাতে আসে, আর চোখ বুলিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাই/অনেকটাই বোকা বনে যাই। আজ লিখতেই বাধ্য হলাম। আমার এই লেখা কোন সাধারণের জন্য নয়, কারণ, কোন সাধারণ মানুষ তো এগুলো হুবহু বুঝা দূরের কথা; আমার বিশ্বাস, অনেক উচ্চ-শিক্ষিতজনেরও এগুলো সত্যিকারভাবে অনুধাবন করা কষ্টকর হবে। তাই, আমার এ লেখা শুধু আপনার জন্য; আর, বিষয়-এক্সপার্টদের জন্য।

আমি আপাদমস্তক একজন শিক্ষক; দেখতে ও শুনতে চাই গোটা দেশের বাচ্চাদের ইংরেজি শেখার বিশুদ্ধতা। নচেৎ, এত দীর্ঘদিনের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমাদের বাচ্চাদের কাছে ও একদিন জাতির কাছে নীতিগতভাবে দায়বদ্ধ থেকে যাব।

অনেক দিন পূর্বে আমি প্রথমেই ৮ম শ্রেণির ইংরেজির টেক্সটবইটি নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম, ওটা একসময় আমার হাতে এসেছিল। এ মুহূর্তে আর সেটি পাইনি।

আজ আমি ৯ম-১০ম শ্রেণিদ্বয়ের একটি ইংরেজি পাঠ্যবই যোগাড় করতে পেরেছি, আর তাই, এটির উপরেই লিখতে বসেছি। দেখলাম, এ বইটির থার্ড রিভাইজড ইডিশন বেরিয়েছে নভেম্বর-২০২০-এ, এবং, রিপ্রিন্ট হয়েছে অক্টোবর-২০২১-এ। বইটি খুলতেই বইয়ের ২০২ নম্বর পৃষ্ঠাটি অকস্মাৎই বেরিয়ে গেল, পড়লাম। তারপর নিজের ইচ্ছায় পড়লাম ‘প্রিফেস’, পরে বেরিয়ে গেল ১৪ নম্বর পৃষ্ঠা। আর, আজ আমি এগুলোর মধ্যেই আমার লিখা সীমাবদ্ধ রাখব:

ক) ২০২ নম্বর পৃষ্ঠা এবং ‘প্রিফেস’-পৃষ্ঠা:
১) ২০২ নম্বর পৃষ্ঠার শুরুতে ১১ নম্বরে ‘সাপোজ’ এর পরে ‘কমা’ আছে। অনুরূপভাবে, একই লাইনে ‘ইয়েস্টারডে’-র পরেও একটি ‘কমা’ বসা উচিৎ ছিল। এটা ইংরেজি ভাষাবিজ্ঞানের দাবি। একই পৃষ্ঠায়, ‘সাবজেক্ট’ এর পরে শিরোনামের বিষয়টির ‘এস্’ অক্ষরটি যেমন আছে ক্যাপিটাল লেটার, তেমনি ‘প্যাট্রিওটিজম’ এর ‘পি’-অক্ষরটিও ক্যাপিটাল লেটার হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল।

২) ‘আই নো’, এর পরে একটি ‘কমা’ বসবে। পরের লাইনে ‘বাট’ এর পরেও ‘কমা’ দেয়া জরুরি ছিল।

৩) বড় প্যারাগ্রাফের ‘ইন এ্য রিকশো’ বসা উচিৎ ছিল ‘মাই স্কুল’ এর পরে। আর, এখনে ‘ইন্’ হবে না, হবে ‘বাই’। ‘ইন এ্য রিকশো’ শেষে হওয়ায় বুঝা যায়, আফসানা রিকশার ভেতরে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। কত বড় ভুল? প্রসঙ্গক্রমে বলছি, এবং আপনারও জানা আছে: বাংলা ‘ভুল’ শব্দের ইংরেজি সিনোনিমস্ হচ্ছে মূলত দু’টি: ‘মিসটেক’ এবং ‘এ্যারার’। ‘মিস্টেক’ হচ্ছে সেটি, যেটি ব্যক্তি জানেন, কিন্তু কোনভাবে স্লিপ হয়ে গেছে। এটা ক্ষমার্হ। আর, ‘এ্যারার’ হচ্ছে ঐটি, যেটি ব্যক্তি আদৌ জানেনই না। সত্যিকারের শিক্ষিতদের জন্য এটা ক্ষমার অযোগ্য।

৪) ‘অন্ দ্য রোড সাইড’ দিয়ে বুঝানো হয়েছে রাস্তার যে কোন এক সাইড, নির্দিষ্ট কোন এক সাইড নয়। তাই, নির্দিষ্ট না হওয়ায় ‘দ্য’ এর পরিবর্তে এখানে হবে ‘এ্য রোড সাইড’, অথবা ‘ওয়ান রোড সাইড’, অথবা ‘ওয়ান অব দ্য রোড সাইডস’।

৫) ‘১৬ ডিসেম্বর’ আমাদের একটাই নির্দিষ্ট বিজয় দিবস। তাই তার আগে ‘দ্য’ বসবে।

৬) ‘আই রিয়্যেলাইজড’-এ আছে ‘জেড’, আর, এক লাইন পরে ‘রিয়্যেলাইজিং’-এ আছে ‘এস্’। ‘প্রিফেস’ পৃষ্ঠার ‘গ্লোবালাইজেশন’-এ আবার আছে ‘জেড’। এ যাচ্ছে-তাই লাইসেন্স কে কীভাবে পেলেন, মাননীয় মন্ত্রী? আমরা তো পড়াই ব্রিটিশ ইংলিশ, আমেরিকান ইংলিশ নয়।

৭) ‘প্রিফেস’ পৃষ্ঠায় ‘ই’ দিয়ে ‘বেঙ্গলি’ শব্দটি যেহেতু একটি ঔপনিবেশিক শব্দ, তাই এটা হওয়া উচিৎ ছিল ‘এ্য’ দিয়ে ‘বাঙালি’। আমাদের ২৬৬ দিনের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল নির্দিষ্ট একটাই। তাই, ‘লিবারেশন ওয়ার’ এর পূর্বে ‘দ্য’ বসাতে হবে। ‘১৯৭১’ এর পূর্বে এবং ‘ওয়ার’ এর পরে একটি ‘কমা’ দেয়া প্রয়োজন, অথবা বলতে হবে, ‘ইন্ ১৯৭১’।

৮) একই প্যারার শেষ লাইনে ‘রিলিজন্স’ শব্দটি যেমন বহুবচন, ‘সেক্স’ শব্দটিও তেমনি বহুবচন হওয়ার একান্ত প্রয়োজন ছিল। ‘অনারেবল’-এ ‘ইউ’ দেওয়া হয়নি। ইচ্ছামত চলার কি সুযোগ আছে আমার, মন্ত্রী মহোদয়? ‘এ্যট হোম এ্যন্ড এব্রোড’-এখানে ‘হোম‘ এর আগে ‘এ্যট’ লাগবে না। কারণ, ‘এ্যট হোম’ মানে হচ্ছে ‘দক্ষ’। ‘টেক্সটবুক্স’ শব্দটি বহুবচন; তাই, বাক্যের প্রথমে ‘দ্য’-এর প্রয়োজন নেই, যেমন হয়েছে ‘এ্যডিটোরিয়্যাল’ পৃষ্ঠায়, ওটা শুদ্ধ।

৯) ‘লার্নার’ এবং ‘ফ্রেন্ডলি’-শব্দ দু’টির মাঝখানে একটি ‘হাইফেন’ বসবে। ‘২০১৭’ এবং ‘২০২০’ যেহেতু আলাদা দু’টো সাল/বছর, সেহেতু, ‘২০২০’ এর পূর্বেও আবার প্রিপোজিশন ‘ইন্’ বসবে।

খ) ১৪ নম্বর পৃষ্ঠা:
১) প্রথম লাইনের ‘আধার’-এর ‘ও’/‘অ’ হবে ক্যাপিটাল লেটার।

২) দ্বিতীয় লাইনের ‘প্যায়ার’ শব্দটি হবে বহুবচন=‘প্যার্য়াস্’, কারণ, যে কোন একটি ক্লাসে অনেক জোড়া শিক্ষার্থী থাকতেই পারে।

৩) ‘রিল্যাশনশিপ’-এর সাথে ‘এস্’ লাগবে, হবে বহুবচন=‘রিল্যাশনশিপস’।

৪) সেকশন ‘বি’ এর প্রথম লাইনের ‘বাট’ পরে ‘কমা’ আছে=শুদ্ধ। অপরপক্ষে, উপরে উল্লেখিত ‘বাট’-এর পরে ‘কমা’ দেয়া হয়নি; কিন্তু, দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, এটা ইংরেজি ভাষার দাবি।

৫) দ্বিতীয় লাইনের ‘কারেজ’ শব্দটির পরে অবশ্যই একটি ‘কমা’ বসবে।

৬) ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘লেড’, শব্দযুগলের এর মধ্যখানে একটা ‘হাইফেন’ লাগবে।

৭) ‘ইয়েট’-এর পরে ‘কমা’ বসবে।

একটিমাত্র পাঠ্যবইয়ের মাত্র ৩টি পৃষ্ঠার উপরে আমাকে এতকিছু লিখতে হল, সত্যিই আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। না জানি বইটির মোট ২০৩ পৃষ্ঠার উপর লিখতে গেলে কতটি কলামস লিখতে হবে।

আমরা এ-ও জানি: দোষা-দোষির খেলা সব চাইতে বাজে খেলা; তাই, এখানে কোন দোষা-দোষি নয়, এটা স্রেফ আমাদের কচি-মনা বাচ্চাদের সুন্দর ও সফল ভবিষ্যতের জন্য।

সবাই বলেন: শিক্ষকগণ তো মানুষ গড়ার কারিগর! হায় আফসোস, এই ‘আমি’ কারিগরের জন্য! আর, এই আমি কারিগর, সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে পুতুল-খেলা খেলছি, এই আর কী!

প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও ২৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান, বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, ও দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরের ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ