আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

শিক্ষামন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি: নবম ও দশম শ্রেণিতে ভুলে-ভরা ইংরেজি পাঠ্যবই

প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ  

মাননীয় মন্ত্রী,
সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। আজ প্রথমেই আমি আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করতে চাই: “বন্ধু গো! বড় বিষ জ্বালা এই বুকে, দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে”।

আপনার বরাবরে লিখিত আমার বিগত খোলা চিঠিখানার শিরোনাম দিয়েছিলাম একজন ইংরেজ কবিকে স্মরণ করে এভাবে: “বিউটি ইজ ট্রুথ, ট্রুথ বিউটি’, শিক্ষামন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি”। আজ শিরোনাম দিতে চেয়েছিলাম অপর এক ব্রিটিশ কবিকে স্মরণ করে এভাবে: “দ্য বেস্ট ইজ ইয়েট টু বী’, শিক্ষামন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি”। কিন্তু, তৎক্ষণাৎই আবার ভাবলাম, কবিতা দিয়ে পেট ভরবে না, আর বাচ্চাদেরও ইংরেজি শেখা হবে না, বরং আসল জায়গায় হিট করা ব্যতিরেকে গত্যন্তর নেই। তাই, আজকের শিরোনামটি সরাসরি মূল বিষয়ের উপরই দিলাম।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত বিগত চিঠিটি লিখেছিলাম ৯ম-১০ম শ্রেণির ইংরেজি টেক্সটবইটির মাত্র তিনটি পৃষ্ঠার উপর, আর এই তিন পৃষ্ঠার উপরই বেরিয়েছিল ডজন-ডজন ভুল, এবং ভাষাগত ও বৈয়াকরণিক দুর্বলতা (দাড়ি-কমা-প্রশ্নবোধক চিহ্ন-আশ্চর্যবোধক চিহ্ন-কোলন-সেমিকোলন-হাইফেন-একবচন-বহুবচন-ক্যাপিটাল লেটার-স্মললেটারের ব্যবহার ইত্যাদিসহ)। আর আজকের এ খোলা চিঠিটি, বলতে গেলে, সম্পূর্ণ বইটির উপর, যদিও, এ বইটির মোট ২০৩ পৃষ্ঠার উপর লিখা অনেক দীর্ঘ ব্যাপার, এবং যদিও, প্রায়-পৃষ্ঠায়ই মন্তব্য করার মত কিছু না কিছু ভুল পাওয়াই যাবে। এটা বোধ হয় আমার মত ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের উপর ডিগ্রি অর্জনকারী উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের দুর্ভাগ্য, অপারগতা এবং লজ্জা-শরমের মাথা-খাওয়া; আর সর্বোপরি আমাদের কচিমনা শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে পুতুল-খেলা।

‘ক্ষুদ্র এ আমি’ ব্যক্তিটির পরিচয় দিতে গিয়ে ঐ চিঠিতে আমি এ-ও লিখেছিলাম, আমি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের একজন ছাত্র এবং দেশে-বিদেশে ৪৫/৪৬ বছরেরও অধিককালের শিক্ষক। একমাত্র শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় ২৯ বছর। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন ও প্রায় দেড়যুগেরও বেশি সময়ের বিভাগীয় প্রধান। বাধ্য হয়ে এ-ও লিখেছিলাম, ভাগ্যিস, দীর্ঘ ৭ বছরে ইংলিশের উপর আমি একটিমাত্র ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। নতুবা, আজ হয়ত আমি এই জায়গায় উঠে আসতে পারতাম না।

দেশের, বিশেষ করে মাধ্যমিকের, বিভিন্ন শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবই নিয়ে অনেক দিন থেকে আমি খুবই বিব্রত আছি। কোন কোন শ্রেণির বই মাঝে-মধ্যে হাতে আসে, আর চোখ বুলিয়ে ঠান্ডা হয়ে যাই/অনেকটাই বোকা বনে যাই। এখন লিখতেই বাধ্য হলাম। বিগত চিঠিতেও আমি উল্লেখ করেছি, আজ আবার উল্লেখ করছি, আমার এই লেখা কোন সাধারণের জন্য নয়, কারণ, কোন সাধারণ মানুষ তো এগুলো হুবহু বুঝা দূরের কথা; আমার বিশ্বাস, অনেক উচ্চ-শিক্ষিতজনেরও, এগুলো সত্যিকারভাবে অনুধাবন করা কষ্টকর হবে। তাই, আমার এ লেখা শুধু আপনার জন্য, সম্মানিত বিষয়-এক্সপার্টদের জন্য, এবং জাতীয় পাঠক্রম বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-সদস্যবৃন্দের জন্য।

আপাদমস্তক একজন শিক্ষক হিসেবে আমি দেখতে ও শুনতে চাই, গোটা দেশের বাচ্চাদের ইংরেজি শেখার বিশুদ্ধতা। নচেৎ, এত দীর্ঘদিনের একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমাদের বাচ্চাদের কাছে, ও একদিন জাতির কাছে, নীতিগতভাবে, দায়বদ্ধ থেকে যাব।

আজ আমি নবম-দশম শ্রেণিদ্বয়ের ইংরেজি পাঠ্যবইটির এখান-ওখান থেকে ভুল-দুর্বলতাগুলো আপনার সামনে তুলে আনব, যাতে গোটা বইটির ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট ধারণা আপনি পেয়ে যান। এটি একটি মহা পরিতাপের বিষয় যে, এ বইটির প্রথম প্রকাশনা ২০১২-তে, প্রথম রিভাইজড ইডিশন ২০১৪-তে, দ্বিতীয় রিভাইজড ইডিশন ২০১৭-তে এবং তৃতীয় রিভাইজড ইডিশন বেরিয়েছে নভেম্বর-২০২০-এ, এবং, একই বইয়ের অন্য একটি কপিতে দেখেছি, ওটা রিপ্রিন্ট হয়েছে অক্টোবর-২০২১-এ।

এখন ভুল-দুর্বলতাসমূহে আসা যাক:

১/ প্রথমেই ধরি ১৫০ নম্বর পৃষ্ঠা:
ক/ তৃতীয় লাইনের ‘নাও’ এবং ‘এফ’ এর ‘নাও’=প্রতিটির পরে একটি করে কমা বসবে।
খ/ ‘জি’-এর ‘কর্পোরেশন’ এর সাথে ‘এস’ লেগে এটি বহুবচন হবে।

২/ ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠা
ক/ ৮ম লাইনের ‘কুয়্যেশ্চন্স’ বহুবচনের পূর্বে ‘দ্য’-এর প্রয়োজন নেই।
খ/ একই পৃষ্ঠার অন্য আরেক বহুবচনেও ‘দ্য’ নিষ্প্রয়োজন।
গ/ দুই জায়গায় দু’টি ‘সো’-এর পরে একটি করে ‘কমা’ বসবে।
ঘ/ সর্বশেষ লাইনে ‘গুড’ এর পূর্বে আর্টিকেল ‘এ্য’ অবশ্য প্রয়োজন।

৩/ পৃষ্ঠা ১৪
ক/ ‘বি’ এর দ্বিতীয় লাইনে ‘কারেজ’ এর পরে অবশ্যই একটি ‘কমা’ বসবে।
খ/ এ পৃষ্ঠার বাকি ভুলগুলোর ব্যাপারে আগের চিঠিতে লিখেছি।

৪/ পৃষ্ঠা ১৮৮
ক/ ৬ নং লাইনে ‘উড’ এর স্থলে ‘উইল’ হলে উত্তম হত।
খ/ পরের লাইনেও ‘উইল’ বা ‘উইল শিউরলি’ বললে সুন্দরতর হতো।
গ/ দ্বিতীয় প্যারার শেষ লাইনে ‘সো’ এর পরে ‘কমা’ হবে।
ঘ/ এর পরের প্যারায় ‘ফুলফিল’ এর পূর্বে ‘টু’ বসানো মারাত্মক ভুল হয়েছে।
ঙ/ শেষ প্যারার দ্বিতীয় লাইনে ‘এপোস্ট্রফি’ ‘মান্থ্স্’ এর ‘এস’ এর পূর্বে দেয়া ভুলের শেষ সীমাও ছাড়িয়ে গেছে। এটা সীমাহীন অজ্ঞতার জাজ্বল্য প্রমাণ।

৫/ পৃষ্ঠা ৫৫
ক/ ‘রাইট নাও’ পরে ‘কমা’ বসবে।
খ/ ‘ফিউচার প্লান’ এর ‘প্লান’ শব্দটি বহুবচন হলে সম্ভাবনার দ্বার অনেক বেশি উন্মুক্ত হত। কারণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কোন ব্যক্তিরই মাত্র একটি থাকে না, একাধিক পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে পারে, এবং থাকা উচিৎও।
গ/ ‘ডি’-তে ‘১৮ বছর’ এর মধ্যখানে ইংরেজিতে অবশ্যই একটি ‘হাইফেন’ হবে। এটাও মারাত্মক ভুল, এবং না জানা ও দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।
ঘ/ ‘ওয়ান ড্যা’ পরে ‘কমা’ হবে।
ঙ/ সাংঘাতিক ভুল হয়েছে ‘বি’ এর দ্বিতীয় লাইনের প্রথম শব্দ ‘এ্যবাউট’ বসানো। এটার কোনই প্রয়োজন নেই/ছিল না। লেখক যে জানেন না, এটাও তার স্পষ্ট উদাহরণ।

৬/ পৃষ্ঠা নং ০২
ক/ ‘প্যায়ার’ এর ভুল পূর্বের চিঠিতে লেখা হয়েছে।
খ/ ‘ব্যাবি সুন’ এর পরে ‘কমা’ বসবে।
গ/ ‘চিটোগং’ এর পূর্বে ‘এ্যট’ না হয়ে ‘ইন’ হবে। কারণ, কোন গ্রাম বা ছোট্ট জায়গার পূর্বে ‘এ্যট’ বসে, অথচ, উল্লেখ্য শহরটি কোন অবস্থাতেই কোন ছোট্ট শহর নয়, এটি একটি বিরাট/বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ শহর।
ঘ/ ‘ল্যাফট’ এর আগে ‘এইচএ্যডি’ ‘হেড’ লাগবে।

৭/ ‘কন্টেন্টস’ এবং ‘ইউনিট ওয়ান’ পৃষ্ঠাদ্বয়:
*** ‘ফাদার অব দ্য ন্যাশন’, যে কোন দেশে, অবশ্যই চির-সুনির্দিষ্ট একজনই হয়ে থাকেন। আমাদের মাথায় কী আছে জানি না? অনাগত ভবিষ্যতে আমরা আরেক কোন নতুন ‘ফাদার...’ চাই কিনা!? নতুবা হিমালয়পর্বতসম ওয়ার্ল্ড-নেতার সর্বোচ্চ ত্যাগের আলোচনার সময় ‘ফাদার’ এর পূর্বে সুনির্দিষ্ট করে ইংরেজিতে ‘দ্য’ কেন বসল না? বুদ্ধিজীবীদের মাথায় কেন এটা ধরেনি? অথচ, সরকার যখন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভিসি দেয়, তখন ঐ ভিসিকে তাড়ানোর জন্য আমরা সব বুদ্ধিজীবী এক হয়ে যাই! আর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করে তুলি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলি ও শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে পুতুল-খেলা খেলি? এবার তো ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির শিশুদেরকে নিয়ে দস্তুরমত পুতুল-নাচ আরম্ভ করে দিয়েছি!? অজ্ঞতা আর কাকে বলে? এ অজ্ঞতার কাজ যারা করেছেন, তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিৎ।

৮/ পৃষ্ঠা ১০৭
ক/ ‘বি’ এর দ্বিতীয় লাইনের ‘জবস’ এর পরে একটি ‘কমা’ বসবে।
খ/ ‘হী’ এবং ‘দ্যান’ এর পরে একটি করে ‘কমা’ দিতে হবে।
গ/ কোম্পানির নামের ‘সি’, ‘পি’, ‘ডি’ এবং ‘সি’=সবগুলো ক্যাপিটাল লেটার হবে।
ঘ/ পরের লাইনের ‘জেড’ হবে ‘এস’। আমরা পড়াই ব্রিটিশ ইংলিশ, আমেরিকান ইংলিশ নয়। আর, ব্রিটিশ এবং আমেরিকান ইংলিশের জগা-খিচুড়ি করে ইচ্ছামত চলা যাবে না। এটা ইংরেজি ভাষা-বিজ্ঞানের দাবি। কম্পিউটারের মাথায় ‘এস’ না থাকুক, একজন সুস্থ, সচেতন ও কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষের মাথায় তো আছে!

৯/ পৃষ্ঠা ৫৪
*** ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের মাথায় কত রকমের স্বপ্ন থাকে, তাই ‘ড্রিম’ এর সাথে ‘এস’ লাগবে, এবং এটি বহুবচন হবে। কোন একটিমাত্র স্বপ্ন দিয়ে/নিয়ে জীবন চলতে পারে না।

১০/ ১৯৬ নং পৃষ্ঠা
ক/ দ্বিতীয় লাইনে ‘সেন্স’- এর পরে একটি ‘কমা’ বসানো ভাষা-বিজ্ঞানের দাবি, যুক্তিসঙ্গত দাবি উপেক্ষা করে ইচ্ছামত চলার কোন সুযোগ নেই। আর, বাচ্চাদেরকে ভুল শেখানো, নীতিগতভাবে, মারাত্মক অপরাধ।
খ/ ‘বীঙ্স্’ এবং ‘রূট্স্’, শব্দদ্বয়ের পরে একটি করে ‘কমা’ হবে।
গ/ ‘থ্রি’ এবং ‘মান্থ’, ও ‘সিক্স’ এবং ‘মান্থ’, এগুলোর মধ্যখানে ২টি ‘হাইফেন’ না দেয়া চরম অজ্ঞতার পরিচায়ক, এবং না জানার অপরাধ।
ঘ/ ‘এ্যলাউ’-এর সাথে ‘এস’ লাগবে, নয়ত শিশু-তুল্য ভুল হয়েছে। এটা ক্ষমার অযোগ্য। থার্ড-পারসন-সিঙ্গিউলার নাম্বর-প্রেজেন্ট টেন্স হলে কী হয়, তা চতুর্থ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীও জানে। হায়/সাবাস, আমাদের কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের!

১১/ পৃষ্ঠা নং ১৫
ক/ ‘লাহোর’ এর পর একটি ‘কমা’ বা নীয়।
খ/ দ্বিতীয় প্যারায় ‘টুডে’-র পরে ‘কমা’ বসানোর প্রয়োজন ছিল।
গ/ শেষ প্যারায় ‘লিডার্স এবং ‘হিম’- এ পরপর দু’টো ‘কমা’ দেয়া হয়নি; কিন্তু, দেয়ার প্রয়োজন ছিল। একটা উচ্চশিক্ষিত মানুষ কেমন করে এমন অজ্ঞ হন?
ঘ/ মহা মজার ব্যাপার হল এর পরের লাইনে। ‘লিডার’ শব্দটি পাশাপাশি বসেছে দু’বার, প্রথমটির ‘এল’ স্মল এবং দ্বিতীয়টির ‘এল’ ক্যাপিটাল; হায়, লজ্জা! এর নামই কি স্বাধীনতা? এটা কি ‘লিডার’কে মজবুত করার জন্য? বইটি কিন্তু ১৭ জন মানুষের সহযোগিতায় বার বার লিখিত, সম্পাদিত, রিভাইজড, প্রিন্টেড ও তারপর প্রকাশিত!

১২/ পৃষ্ঠা ১০৬
ক/ প্রারম্ভেই, ‘নাও’-এর পরে ‘কমা’ লাগবে।
খ/ ‘ডি’ এর ‘এ্যান্সার’-এর সাথে ‘এস’ লেগে এটা হবে বহুবচন=‘এ্যান্সার্স’।
খ/ ‘বুক’-হবে ‘বুকস’, কারণ ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী একজনমাত্র অবশ্যই নয়।

১৩/ পৃষ্ঠা ৫৬
ক/ বহুবচন ‘কুয়্যেশ্চন্স’ এর আগে ‘দ্য’ এর ব্যবহার ভুল।
খ/ একইভাবে ‘ভাষাসমূহ’, - এ বহুবচনের আগেও ‘দ্য’ বসানো ভুল হয়েছে।
গ/ ‘সো’ এর পর ‘কমা’ হবে।
ঘ/ শেষ প্যারায়ও ‘সো’ এর পরে ‘কমা’ বসবে।
ঙ/ শেষ লাইনে ‘গুড নিউজ’ এর পূর্বে আর্টিক্যাল ‘এ্য’ বসবে।

১৪/ পৃষ্ঠা ৫৭
ক/ তৃতীয় প্যারায় ‘রেডিও’-র পূর্বে ‘দ্য’ দিলে এ জাতীয় অন্যগুলোর পূর্বেও ‘দ্য’ লাগবে, নচেৎ কোনটার আগেই ‘দ্য’ দেয়া যাবে না।
প্রসঙ্গক্রমে বলছি, এবং আপনারও জানা আছে বিজ্ঞ মন্ত্রী মহোদয়: বাংলা ‘ভুল’ শব্দরে ইংরেজি সিনোনিমস হচ্ছে মূলত দু’টি ‘মিসটেক’ এবং ‘এ্যারার’। ‘মিসটেক’ হচ্ছে সেটা যা ব্যক্তি জানে, কিন্তু কোনভাবে স্লিপ হয়ে গেছে। এটা ক্ষর্মাহ। আর, ‘এ্যারার’ হচ্ছে সেটা যা ব্যক্তি আদৌ জানেই না। সত্যিকার শিক্ষিতদের জন্য এটা ক্ষমার অযোগ্য। আর, একটা বোর্ডের জন্য তো বটেই।

এখানে আমার বলার বিষয় এই যে, বইটির সাথে জড়িত ১৬/১৭ জন ব্যক্তি পর্দার আড়ালে ‘এসি’ রুমে বসে বসে গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকায় লম্বা লম্বা বেতন খেয়ে কচিমনা বাচ্চাদের বইটি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে যে কর্তব্যনিষ্ঠাহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তার ১৬-আনা জবাব/হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।

১৫/ ১৭৯ নং পৃষ্ঠা
ক/ ‘সাপোজ’ এর পরে একটি ‘কমা’ অবশ্যই লাগবে।
খ/ ক্যাপিটাল ‘বি’ এর ‘নাও’ এর পরেও ‘কমা’ দিতে হবে।

১৬/ পৃষ্ঠা নং ৮৮
ক/ ‘বি’ এর ১ নম্বরের ‘এ্যরিয়া’-র সাথে ‘এস’ যুক্ত হয়ে এটা বহুবচন হবে।

১৭/পৃষ্ঠা ১৮৯
ক/ ‘বি’ এর প্রথম লাইনে ‘গ্রান্ডলি ড্রেসড’, শব্দযুগল, আগে-পিছে ‘কমা’ সহ বসবে ‘ব্যাসানিও’-র পরেই। তা হলে, বাক্যটির অর্থ, ছেলে-মেয়েদের কাছে পুরো ক্লিয়ার হবে।
খ/ ‘ডেথ’ এর পরে ‘কমা’ বসবে।

১৮/ পৃষ্ঠা ১৮৬
ক/ দ্বিতীয় লাইনে ‘শী বট্’ হবে ‘শী হ্যাড বট্’। এটা ‘ট্যান্স’ শিখানোর দাবি।
খ/ দ্বিতীয় প্যারায় ‘দেন’ এর পর ‘কমা’ লাগবে।
গ/ ‘র্পৌ ইট আউট’ হবে ‘পুল ইট আউট’। এটাও অক্ষমার্হ ভুল।
ঘ/ ‘এ্যভ্রি ড্যে’, এবং, ‘দাস্/দাজ্’=শব্দগুলোর পরে পরে একটি করে ‘কমা’ বসবে।
ঙ/ ‘বি’, দুই-তে ‘টেক্’ এর স্থলে ‘বিইউওয়াই=বাই’ বসালে সুন্দরতর হত। এত আল্ট্রামডার্ন হওয়ার প্রয়োজন ছিল না, বরং, এটা বাচ্চাদের শেখার ও বুঝার ব্যাপার/সময়।
চ/ ‘ওয়াজ্’/‘ও...জ্’, এবং, ‘ইন ফ্যাক্ট’ - এর পর পর দু’টো ‘কমা’ বসবে।
ছ/ ‘গ্লাস জার’=মধ্যখানে ‘হাইফেন’ প্রয়োজন। ‘হাইফেন’ দিয়ে ভিন্ন শব্দ দু’টোকে এক করতে হবে। হায়! আমাদের বাচ্চাদের কপাল মন্দ, নাকি, বই-প্রণেতাদের অজ্ঞতা?
জ/ সিরিয়্যেল ৪-এ ‘র্হা’ এর জায়গায় ‘এ্যপোস্ট্রফি এস’ সহকারে মেয়েটির নাম বসানো বাধ্যতামূলক ছিল।

১৯/ ৬৮ নং পৃষ্ঠা:
ক/ একজন বাংলাদেশি বাচ্চা-মানুষকে ‘মাছ’ না বানিয়ে একজন ‘ওয়ার্ল্ড-সিটিজেন’ বানালে কি কোন পাপ হতো? ১৭ জন উচ্চ-শিক্ষিত পুস্তক-প্রণেতাদের চিন্তার দরিদ্রতা যে কোন নাগরিককে/অভিভাবককে মর্মাহত করবে (আমার আদরের সন্তানকে ‘মাছ’ বানানো হয়েছে), যদি সবাই বইটি বুঝতেন।
খ/ কোন ব্যক্তির সাথে ‘এগ্রি উইথ’ হয়, কোন বিষয়ের সাথে ‘এগ্রি টু’ হবে, এখানে ‘উইথ’ দেয়া আর একটি মারাত্মক ভুল হয়েছে।
গ/ ‘টু ডিগ্রি’=মধ্যখানে ‘হাইফেন’ বসবে। এটা অল্প-ইংরেজি-শিক্ষিত একজন ব্যক্তিও জানেন।

২০/ পৃষ্ঠা ১৫৮
ক/ ‘সি’ এর ‘সি’-তে ‘হার্ডশিপ’ শব্দটির সাথে ‘এস’ লেগে শব্দটি বহুবচন হবে। এটা ইংরেজি ভাষা ও ঐ কালের/সময়ের দাবি।
খ/ ‘ঈ’-তে কোজেটিভ্ ‘হেল্প’ এর পর ‘টু’ বসানো অক্ষমার্হ ভুল।

২০/ পৃষ্ঠা ১৫৯
ক/ ‘ল্যাটার’ পরে ‘কমা’ হবে।
খ/ ‘ডো..টার’ (কন্যাশিশু) এর আগে আর্টিক্যাল ‘এ্য’ বসবে।
গ/ পৃষ্ঠার নিচের ‘এ্য’-তে ‘প্রোব্লেম প্যা...জ’=মাঝখানে ‘হাইফেন’ বসবে এবং ‘এস’ লেগে ‘প্যাজ’ শব্দটি বহুবচন হবে।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়,
আমি আপনার ও আপনাদের সকলের দোয়াপ্রার্থী। আমিও রক্ত-মাংসের একজন মানুষ, যতই শিক্ষক হই না কেন, লিমিট্যাশন্স আমারও আছে। তবে, টেক্সটবুক বোর্ড তো একজনমাত্র কোন ব্যক্তি নয়। একটিমাত্র পাঠ্যবইয়ের এই যদি হয় অবস্থা, আমার আর বলার কিছুই থাকতে পারে না। সত্যিই আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। না জানি, বইটির মোট ২০৩ পৃষ্ঠার উপর লিখতে গেলে, কতটি কলামস লিখতে হবে।

আমরা এ-ও জানি: দোষা-দোষীর খেলা সব চাইতে বাজে খেলা; তাই, এখানে কোন দোষা-দোষী নয়, এটা স্রেফ আমাদের কচি-মনা বাচ্চাদের সুন্দর ও সফল ভবিষ্যতের জন্য। সবাই বলেন: শিক্ষকগণ তো মানুষ গড়ার কারিগর! হায় আফসোস, এই ‘আমরা’ কারিগরদের জন্য! আর, এই আমরা কারিগরগণ, সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে পুতুল-খেলা খেলছি। যে কোন মূল্যে/উপায়ে এগুলো অবশ্যই দ্রুত বন্ধ করতে হবে।

প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও ২৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান, বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, ও দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরের ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ