প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ০৪ মার্চ, ২০২৩
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া (কাদিয়ানী) মুসলমানদের উপর হামলা করেছে অন্যান্য মুসলমানরা। ওদের বার্ষিক একটা জলসা হওয়ার কথা ছিল, সেই জলসা করতে দিবে অন্যরা। সেই নিয়ে বিক্ষোভ, হামলা হচ্ছে। আহমদিয়াদের কিছু বাড়িঘরে হামলা করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনায় কয়েকজন আহত ও নিহত হয়েছে। শহরে গতকাল থেকেই উত্তেজনা চলছে। প্রথম আলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, এদিকে প্রশাসন থেকে নাকি মাইকে বলা হচ্ছে যে আহমদিয়াদের সেই কর্মসূচি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে।
এই ঘটনা হচ্ছে একটি উদাহরণ, যা থেকে বুঝা যায় বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা ঠিক কোন মাত্রায় আছে। একদল লোকের ধর্মবিশ্বাস আপনার সাথে মেলে না, তার জন্যে আপনি তাকে আঘাত করতে পারেন?
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এরা নিজেদেরকে মুসলমান বলেই চিহ্নিত করে। আপনার মনে হতে পারে যে না, ওরা মুসলমান না। ঠিক আছে, আপনার মতামত আপনার কাছে। আপনি ওদেরকে মুসলমান করবেন না, ওদের সাথে সামাজিকতা করবেন না বা ওদের মসজিদে যাবেন না। কিন্তু ওরা ওদের মতামত অনুযায়ী যদি ধর্ম পালন করে সেটাতে বাধা দেওয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?
এখানেই আমাদের রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে দেশে সার্বক্ষণিক একটা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখে। ওদের হাতে কোন সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী নিরাপদ নয়।
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন গত দশ বছরে কী পরিমাণ সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটেছে আমাদের দেশে? যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না এরকম লোকজনকে হত্যা করেছে ওরা। হিন্দু ধর্মের পূজা ইত্যাদির উপর যে হামলা হয় নিয়মিত তার কথা বললাম না। খ্রিস্টানদের উপর হামলা হয়েছে, বৌদ্ধদের উপর হামলা হয়েছে।
এমনকি সূফি ধরনের যারা, নিতান্ত ভাল মানুষ, নিরীহ ফকিরালি করে বা গানবাজনা করে, ওদের উপরও হামলা হচ্ছে নিয়মিত। এই ফকির বাউল ধরনের লোকগুলো এরা তো নিতান্ত প্রেমের কথা বলে, কারো ক্ষতি করে না, কারো সাথে উচ্চকণ্ঠে কথাও বলে না। ওদেরকে কেন আপনারা মারতে যান?
আপনি আপনার মতো ধর্ম পালন করেন, ওরা ওদের মতো করুক। আপনারা জোর করে, আক্রমণ করে, হত্যা করে অপরের কণ্ঠ রুদ্ধ করবেন? এটা তো অন্যায়- অপরাধ। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এসব ঘটনার সাথে যারা যারা জড়িত ওদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করা।
যে শাসনব্যবস্থায় মানুষ ইচ্ছামতো কথা বলতে পারে না সেই শাসনব্যবস্থা নৈতিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে বৈধ নয়। এই মতামতটা সকলে সঠিক মনে করেন না বটে, তবে এটার পক্ষের পণ্ডিতদের যুক্তি খুবই প্রবল। এটা এই অধমেরও মতামত। যে শাসনব্যবস্থায় মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়, সেই শাসনব্যবস্থা অবৈধ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য