আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আজগুবি শিশুশিক্ষায় গজবি কাণ্ড!

রহিম আব্দুর রহিম  

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, বিনোদন নিশ্চিত করার দায়িত্ব তার অভিভাবকের। এর মধ্যে আনন্দঘন, সহজলভ্য শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার সামষ্টিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

উন্নত পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রনায়করা প্রথমেই শিশুর ভবিষ্যৎ যাতে আলোকিত হয় এমন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। শিশুশিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। প্রথমেই তারা টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য গবেষণালব্ধ দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নের সূচক স্থির করে, এরপর শিশুশিক্ষায় রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে থাকেন। ফলে তাদের শিক্ষায় সুদক্ষ কর্মী সৃষ্টি এবং শিক্ষা শেষে কর্মময় জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠেন একজন অবলা, অবুঝ, অদক্ষ মানুষ।

ওই সমস্ত দেশের শিক্ষা ভাবনায় সবচেয়ে সর্তক ও সুরক্ষিত পরিবেশে পাঠদান, পাঠ উদ্দেশ্য কার্যকর করতে হয়। কোনভাবেই শিশুমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে এমনটি কোনক্রমেই হতে দেওয়া হয় না।

উচ্চশিক্ষিত, শিশুদের বুঝে এমন সব জনবল দিয়ে গঠন করা হয় শিক্ষাকর্মী বাহিনী। অথচ আমাদের বাংলাদেশে উল্টো। আমাদের শিশুরা অবহেলিত, গুরুত্বহীন। এদের শিক্ষাক্ষেত্রে হরহামেশা ভুতের আঁচড়। শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কোন কালেই গবেষণা হয়নি, প্রয়োজনও মনে করেনি। ফলে দেশে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, তার ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি শিশুশিক্ষায় যে কলংক লেপন হলো তাতে বাহাত্তরে কলংককেও হার মানাল। কত শিশুর কোমল মনে যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিষাক্ত ছুরি বসানো হলো তা কি কেউ কখনো ভেবেছেন? পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় স্কুলের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষের মর্জি-মেজাজে নির্বাচিত হয়েছে শিক্ষার্থী। পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণায় আজগুবি কারবার, পরীক্ষা দেয়নি এমন শিক্ষার্থীর ব্যাগেও ঢুকেছে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার সার্টিফিকেট। বেরসিক সাংবাদিকরা গোমর ফাঁস করে দেওয়াতে আজগুবি ফলাফল স্থগিত।

সংশ্লিষ্টদের জবাব, কারিগরি ত্রুটি! এই কারিগরি কারখানার কারিগর কিন্তু সরকারের অর্থে লালিত পালিত রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই।

স্থগিত ফলাফল পুনরায় ঘোষণা হলে গজবকাণ্ড পরিলক্ষিত হয়েছে। ২০০৮ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়াইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন মাত্র শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর আর কেউ ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি পায়নি। এবছর এই প্রতিষ্ঠানের ৩ জন বৃত্তি পেয়েছিল। এতে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যে আনন্দ উদ্দীপনা বিরাজ করছিলো তার চেয়ে বহুগুণে আনন্দ উল্লাসে ভরে ওঠেছিলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মনে। এই আনন্দ উল্লাস বেশিক্ষণ টেকেনি। পুনরায় ফল ঘোষণায় তাদের তিনজনের একজনের নামও নেই।

যে শিক্ষার্থী পরীক্ষা না দিয়ে বৃত্তি পেয়েছিল এটা আজগুবি হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মনে পাওয়ার আনন্দ কিংবা না পাওয়ার কোন বেদনা নেই। কিন্তু যে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাওয়ার আনন্দ ভোগ করার পর, পুনর্ঘোষিত ফলাফলে গজব দেখলো তাদের মন, চিত্ত,ধ্যান-ধারনার ভবিষ্যৎ খাতায় কি অঙ্কিত হলো? তা দায়িত্বে থাকা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তিরা হিসাব মেলাতে পারছেন কিনা; এটাই ভাবনার বিষয়।

বৃত্তি কোন অর্থ-সম্পদের মাপকাঠি নয়। এটা শিক্ষাসম্মান মাত্র। জানা মতে, প্রাথমিক বৃত্তির মোট কোটা ৮২ হাজার ৫০০টি। এবছর (২০২২) প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে। এরমধ্যে মেধা কোটায় (ট্যালেন্টপুলে) ৩৩ হাজার, সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেধাবৃত্তিতে প্রতিমাসে ৩'শ টাকা, সাধারণ কোটায় মাসে ২'শ ২৫ টাকা পেয়ে থাকে। একই সাথে সকল স্তরের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বছরে এককালীন ২শ ২৫ টাকা পায়।

শিশুশিক্ষায় এবারের আজগুবি এবং গজব ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত সুকান্তের অমর কবিতা ছাড়পত্রের "এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" চরণগুলো আজ কতটাই না অসহায়!

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ