আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বাবা হতে হলে পিতৃত্ব লাগে!

রহিম আব্দুর রহিম  

প্রায় সাড়ে তিনবছর পর ২৪ এপ্রিল ভারত ভ্রমণে এসেছি। কর্মস্থলের ঈদের ছুটি চলছে। শেষ হবে ২৯ এপ্রিল, ক্লাস শুরু ৩০ এপ্রিল। দেশের অবস্থা জানার জন্য বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে চোখ বুলাচ্ছিলাম।

দিনমান চোখে পড়ছিলো। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের শপথ নেওয়ার সংবাদটি। তাঁকে নিয়ে একটা নিবন্ধ লেখার সকল প্রস্তুতি নেওয়ার পরও তা লেখা সম্ভব হয়নি। কারণ, একটি সংবাদ আমাকে মানসিকভাবে আহত করেছে।

বহুল প্রচারিত সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর অনলাইন পোর্টালে ২৪ এপ্রিল রাতে আপলোড করা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলো, ‘ছেলের মার্বেল খেলা নিয়ে বিরোধে খুন হলেন মা’। সংবাদের সারসংক্ষেপ, হবিগঞ্জের মাধবপুরের বহেরা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রাম, ওইগ্রামের দুই কিশোর তোফায়েল ও শামীম মার্বেল খেলতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এই স্বাভাবিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর তোফায়েলের বাবা শফিক মিয়া ও তার দলবল সংঘবদ্ধ হয়ে কিশোর শামীমের পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এতে শামীমের বাবা আব্দুস সালাম (৫৫), শামীমের মা মিনার বেগম (৪৭) ও শামীমসহ এক শিশু আহত হয়। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শামীমের মা মিনারা বেগম (৪৭) মারা যান।

এই ঘটনায় হয়ত থানায় মামলা হবে, বাদী এবং বিবাদী পক্ষ আদালত আসা যাওয়ার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে একদিন বিচারকের রায় শুনতে পারবেন।

শামীম-তোফায়েল ওরা দুজনই কিশোর এবং একে অপরের বন্ধু। তা না হলে এক সাথে মার্বেল খেলার কথা নয়। যখন দেশে হরহামেশাই কিশোর গ্যাংদের নেতিবাচক খবর আমরা দেখতে পাচ্ছি সেখানে শামীম—তোফায়েল গ্রামের বিলুপ্তপ্রায় মার্বেল খেলছে। এটা বাহ্বা পাওয়ার কথা। না ,বাহ্বা পায়নি। খেলতে গিয়ে ওরা দুজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। দুই বন্ধুর মারামারিকে কেন্দ্র করে তোফায়েলের বাবা এবং তার দলবল মারামারিতে জড়াতে পারে না।

এই বাবার মাঝে যদি সত্যিকার অর্থে পিতৃত্ব থাকতো, তবে তিনি ঘটনাটি কেন্দ্রকে তার ছেলে কিশোর তোফায়েল এবং ছেলের বন্ধু শামীমকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঈদ উপলক্ষে তাদের সাধ্যমতো আপ্যায়ন শেষে একটা বিচার করা পারতেন। তিনি দুইজনকে এক জায়গায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারতেন— তোমাদের দুজনকে আমরা একসাথে খেলতে বলিনি, তোমারা নিজেরাই খেলতে গিয়েছো। এরপর কেন মারামারি করেছো—তার সঠিক জবাব দাও! এই বলে তাদের বাড়িতে রেখে এই বাবা বাইরে চলে যেতেন। পরে দেখতেন ওরা দুই বন্ধুই মিলেমিশে এই আদর্শ বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতেন—আমাদের মাফ করে দেন, আর এমনটা হবে না! এতে করে তোফায়েলের (বর্তমান) অভিযুক্ত বাবা শামীমের অন্তঃকরণে শ্রেষ্ঠ একজন বাবা হিসাবে আমৃত্যু সম্মান পেতেন।

আর এখন? শফিক মিয়া খুনের আসামি হলেন, মা খুন হওয়ার তীব্র জ্বালা শামীমের কিশোর মনে এক সময়কার পরমবন্ধু তোফায়েলকে চরমশত্রু হিসেবে দাঁড় করালো। একইসঙ্গে অনেক কিশোর-কিশোরীর বাবা -মায়ের মনে-ধ্যানে মার্বেল খেলাটাই যেন অভিযুক্ত, অপরাধী এবং দায়ী বলে গণ্য হলো।

সন্তান জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। বাবা হতে হলে পিতৃত্ব লাগে। টাকা আর জনবল থাকলে সম্মান পাওয়া যায় না। মনে রাখবেন, আপনার টাকা আছে, জনবল প্রচুর; এতে মানুষ আপনাকে ভয় করে, আপনাকে অতিথি করে ওদের কার্য হাসিল করে।

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ