আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কারা ফেরাবে রাজনৈতিক আস্থা ও বিশ্বাস?

এখলাসুর রহমান  

ক্ষমতাধরের স্তুতি যারা করে তারা কেবলই স্তুতিবাজ ও সুবিধাভোগী। এদের মধ্যে আদর্শিকতার ছিটেফোঁটাও নেই। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন ক্ষমতাধরের সঙ্গে থেকে ও স্তুতি করে আর্থিক সুবিধা এবং চাকরি নিয়েছে। আবার ক্ষমতার ভোল পাল্টে গেলে তাদের স্তুতির ক্ষমতাধরও পাল্টেছে। এরকম নজির ভূরি ভূরি। এই স্তুতিকাররাই রাজনীতি ও দেশকে বিপর্যয়ের তপ্ত চুল্লিতে ঠেলে দেয়। আরও রয়েছে আমলাতান্ত্রিক ঔদ্ধত্য। রাজনীতি এখন আর রাজনীতিকদের হাতে নেই। দুর্দিনে যারা জেল জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয় তাদের কাছে নেই। অর্থ ও স্তুতিকার গোষ্ঠীর জোরে হঠাৎ করে রাজনীতির সম্মুখ মঞ্চে এসে হাজির হয় উড়ে এসে জোরে বসা লোক। গণতন্ত্রও এখন আর গণতান্ত্রিক নৈতিকতার ধারে কাছে নেই। ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়াকে ঘিরে তারা সকল ধরনের নৈতিকতাকে হারিয়ে বসে।

বিগত দিনের নির্বাচন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এদেশের নির্বাচন প্রথা। আন্তর্জাতিক মহল সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান চায়। বিএনপি চায় কেয়ারটেকার সরকার। সরকার দল তা চায় না। আগামী ৮/৯ মাস পরে নির্বাচন। নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু স্পিকারের কাছে শপথ নিলেন। তিনি কি পারবেন গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে সকল দলের অংশগ্রহণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে? নির্বাচনের আগে কি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে না যে সরকার আছে সে সরকারই থাকবে?

২০০৬ সালে দুপক্ষের অনড় অবস্থানে আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতায় এলো ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দীনের অগণতান্ত্রিক সরকার। বিষয়গুলো কিন্তু স্তুতিকাররা ভাবে না। কারণ স্তুতিকারতো স্তুতিকারই তারা স্তুতি বর্ষণের পাত্র বদলে ফেলবে সহসা। তখনও কেউ কেউ ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দীনেরও স্তুতিকার হয়ে উঠেছিল। দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য মনোনয়ন দেয়া রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দীনের পদচ্যুতি ঘটে। ইয়াজ উদ্দীনকে তখন বিরোধী পক্ষ বলতো ইয়েস উদ্দীন। এবারের নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ হলো। দেখা যাক আগামী দিনের চ্যালেঞ্জিক নির্বাচনে কী ভূমিকা নেন তিনি। তবে আমরা চাই সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। প্রত্যেকেই যেন প্রত্যেকের মত করে ভোট দিতে পারে নির্বিঘ্নে। স্তুতিকাররা মুখিয়ে থাকে অভিনন্দনের ঢালি নিয়ে। তারা ক্ষমতাধরকে স্তুতি জানাবেই। কারণ স্তুতিই তাদের কাজ। দেশ, জনগণ ও নৈতিকতার দিক তারা ভাবে না। ভাবার প্রয়োজনও বোধ করে না।

স্তুতিচক্রীয় লেখক, কবি ও গাইয়েদেরও আবির্ভাব ঘটেছে বেশ। যারা একসময় যেসব ক্ষমতাধরের স্তুতি করতো তারা এখন ক্ষমতায় নেই তাই তাদের নিয়ে কোন স্তুতিও নেই। একশ্রেণির লোক সংবাদপত্রে অথবা বইয়ের পাতায় লিখে বিশেষ ক্ষমতাধরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। তাই আবির্ভাব ঘটছে উদ্দেশ্য স্তুতিবাজ লেখকচক্রের। তারা লেখার জন্য লিখে না লিখে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। বিশেষ কারো দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে এত এত লেখা হতো না যদি ক্ষমতায় না থাকা হতো। এত গান গাওয়া ও কবিতা রচনা হতো না যদি ক্ষমতায় না থাকা হতো। আর এসব স্তুতিতে উচ্ছ্বসিত হওয়াটাই ভয়ের। খোদ বঙ্গবন্ধুকে যারা স্তুতি করতো ১৫ আগস্টের পরে তারাও চুপসে যায়। অথচ মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তখন দেশের মানুষের অগ্নিগিরির মতো জ্বলে ওঠার কথা ছিল। অথচ যারা জ্বলে উঠেছিল তারা উপেক্ষিত। এতটুকু মূল্যায়ন তাদের ললাটে জুটেনি। সর্বক্ষেত্রেই এমনটি ঘটে চলছে। দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোরা সুদিনের পাশ হতে ছিটকে পড়ে যায়।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাজপথে পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছেন সোহেল তাজ। তিনিও আজ উপেক্ষিত। লাঠিপেটা খেয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ তথা ১৪ দলের নেতাকর্মীরা। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর উপর পুলিশি নির্যাতনের দৃশ্য এখনও মানুষ ভুলে যায়নি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হলো। সে সরকারেও মেনন, ইনু ছিলেন। আর এই থাকার জন্য তারা হামলার শিকারও হয়েছেন। এখন তারাও উপেক্ষিত। সে সময় যদি তারা নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ না দিতেন কী হতো তখন? আওয়ামী লীগ কি পারতো নির্বাচন অনুষ্ঠানের? সে সময় গণজাগরণ মঞ্চও সরব ছিলো। তাদের ভূমিকাও এ সরকারের সহায়ক হয়েছে। এখন তারাও উপেক্ষিত। ভেঙে খান খান করে দেয়া হয়েছে এই তারুণ্য-শক্তিটাকে। এককথায় প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে হারিয়ে যায় দুঃসময়ের প্রয়োজনীয়রা। সুসময়ে আবির্ভূত হয় দুঃসময়ের অপ্রয়োজনীয়রা। এটাই বুঝি ধারাবাহিক নিয়তি।

নির্বাচনকালীন সরকারে ১৪ দল, আন্দোলনে ও রাজপথের নির্বাচনে ১৪ দল ক্ষমতায় এক দল। মেনন, ইনুকে মন্ত্রিসভা হতে কেন বাদ দেয়া হলো তারা কি মন্ত্রিত্ব পরিচালনায় কোন ভুল করেছিল? তাদের বক্তৃতা, বিবৃতিতে কি মানুষ হাসতো? মন্ত্রিসভার কত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তো কত অভিযোগ। কত অবান্তর কথা বলেন অনেকেই। যা শুনে মানুষ হাসে ও সরকার বিব্রত হয়। মেনন, ইনুর বেলায় কি কখনো এমন কিছু ঘটেছে? ২০১৪ এর নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিয়ে সরকার গঠন না করলে কি ২০১৮-এর নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হতো? নির্বাচনকালীন সরকারের ধারাবাহিকতা কেন রাখা হলো না? কেন সেটাকে নির্বাচনী সংকটে একটা ফর্মুলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা গেল না। কেয়ারটেকার সরকার প্রথা যেহেতু নেই এটাকেই কি একটা ফর্মুলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যেতো না। আসলে এই গানটা কেউ শোনে না যে সময় গেলে সাধন হবে না।

নির্বাচনের যতই দিন ঘনাচ্ছে ততই সংকটের পূর্বাভাস আরও বেশি স্পষ্ট হচ্ছে। কী হবে এবার নির্বাচনকালীন সরকার, কেয়ারটেকার সরকার না আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার? ২০১৮-এর নির্বাচন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে দেশে বিদেশে। স্তুতিকাররা যতই সাফাই গাক, দুঃসময় নেমে আসলে দূরবীন দিয়েও এসব স্তুতিকারদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। যারা সংকটের চেয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন ও স্তুতিকার পোষা নিয়ে ব্যস্ত আছেন তখন তাদের কাউকে পাওয়া যাবে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর কয়জন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লিখেছেন? কবিতা, গান রচনা করেছেন? ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫, ২০০১ থেকে ২০০৫ এসময়ে সকল ধরনের স্তুতিকাররা ছিল অনুপস্থিত। তারা উপস্থিত হয় ক্ষমতার সুদিনে। এভাবেই বারবার দুর্দিনের সাথীরা সুদিনে দূরে সরে যাচ্ছে আর সুদিনের স্তুতিকাররা সুদিনে সামনে চলে আসছে। আর রাজনীতি হারাচ্ছে রাজনৈতিক নৈতিকতা। গণতন্ত্র হারাচ্ছে গণতান্ত্রিক নৈতিকতা। আর মানুষ হারাচ্ছে রাজনীতির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস। কখনো ফিরবে কি এই আস্থা ও বিশ্বাস? ফিরলে কারা ফেরাবে?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ