প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ০৫ মে, ২০২৩
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ শব্দগুলো যেমন পরিপূরক ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক ও সমান্তরাল। যদিও রাষ্ট্রীয় ভাবে গত বছর ব্রিটেনের সাথে বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদযাপন করা হয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনের সাথে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ছিল আরও পুরাতন।
যতদূর জানা যায়, ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রথম চীন এবং রাশিয়া সফর শেষে যুক্তরাজ্য সফরে আসেন। সেই থেকে শুরু করে আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগ গঠন। ১৯৬৪ সালে সেই সময়ের ১০ হাজার পাউন্ড দিয়ে কেনা হয়েছিল ভবন যা ইস্ট পাকিস্তান হাউজ নাম ছিল। সেখান থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা এবং ইংরেজি দুটি পত্রিকা। বঙ্গবন্ধুর ১৯৬৬ সালে ঘোষিত ছয় দফাকে প্রবাসীরা তখনই মুক্তির সনদ হিসাবে প্রচার শুরু করে, এবং ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে যে ডিফেন্স কমিটি গঠন হয়েছিল তার কনভেনার মনোনীত হয়েছিলেন মিনহাজ উদ্দীন, এবং মিনহাজ উদ্দীন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন "আগরতলা মামলার জন্য আমরা আইনজীবী নিয়োগ দিলাম অনেক কষ্টে ১২শ পাউন্ড জোগাড় হলো, বেগম মুজিব জায়গা জমি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করলেন এবং আমার কথামত চট্টগ্রামের একটি ব্যাংকে জমা দিয়ে আমাকে রশিদ পাঠালেন, আমার পকেট থেকে সেই সময় ৫ হাজার পাউন্ড খরচ হয়েছিল, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু আমার সেই টাকা ফেরত দিয়েছিলেন।
১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর ব্রিটেন সফরের পর গঠিত হয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। এবং সেই পথ ধরে ৭১-এর মুক্তি সংগ্রামে যুক্তরাজ্য হয়ে উঠেছিল ১২ নম্বার সেক্টর। মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অবদান নিয়ে প্রচুর লেখা হয়েছে যারা সরাসরি জড়িত ছিলেন তাঁরা যেমন লিখেছেন তেমনি অন্য অনেকেই গবেষণা ও করছেন সেই সব নিয়ে। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যে অন্ধকার গ্রাস করেছিল চারপাশ, বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ খামচে ধরেছিল পিশাচের দল, বঙ্গবন্ধু নামটিই তখন বাংলাদেশ থেকে ছিল নির্বাসিত।
নির্মলেন্দু গুণ যেমন তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন:
সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
শহিদ মিনার থেকে খসে-পড়া একটি রক্তাক্ত ইট গতকাল আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।
বাস্তবতা এমন ছিল যে কবিতায় শেখ মুজিব বলাটাও তখন ছিল দুরূহ কাজ। তখনও আন্তর্জাতিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল যুক্তরাজ্য থেকেই। ১৯৭৯ সালের ১০ মে স্টকহোমে সর্বইউরোপীয় বাকশালের সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি সেই সময় কেন স্টকহোমে আসতে পারেননি, তাঁর পরিবর্তে শেখ রেহানা সেদিন স্টকহোমে সেই সভায় সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবি উত্থাপন করেছিলেন।
শেখ হাসিনার পরামর্শ অনুযায়ী ১৯৮০ সালের ২০ জানুয়ারি সেন্ট্রাল লন্ডনের কনওয়ে হলে সর্বইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ড. সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। ড. শফিক সিদ্দিক সভাপতি পদে প্রস্তাব করেন স্যার টমাস উইলিয়ামসের নাম। যা সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকন্যাদের সম্মতিতেই ড. শফিক সিদ্দিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ব্রিটিশ আইনজীবীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর পঞ্চম শাহাদাতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ১৬ আগস্ট ১৯৮০ সালে পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তি সংগ্রামের পর প্রবাসী বাঙালিদের এর চেয়ে বড় সমাবেশ আর অনুষ্ঠিত হয়নি। যেখানে শেখ হাসিনাকে সেদিন গণসংবর্ধনাও দেয়া হয়েছিল। বলা যায়, শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক যাত্রায়ও যুক্তরাজ্য ছিল সহযাত্রী। বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার হত্যা সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য বিশ্বখ্যাত আইনজ্ঞদের নিয়ে ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
এই প্রসঙ্গগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করার কারণ অনেকেই বলেন, প্রবাসীরা কী পেয়েছে, সেই তালিকা ধরলে, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের প্রথম মূল্যায়নই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী ছানু মিয়াকে সিলেটের নবীগঞ্জ-১ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন এবং ছানু মিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিংবা পরবর্তীতে এক-এগারোতে, মঈনুদ্দিন ফখরুদ্দীনের সেনা সরকারের রক্তচুক্ষ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার দেশে যাওয়া, গ্রেপ্তার পরবর্তীতে তাঁর মুক্তির দাবিতে যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের অবদান ছিল জোরালো। তার প্রতিদানও শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শফিকুর রহমান চৌধুরী শুধু সংসদ সদস্যই নির্বাচিত হননি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেটের রাজনীতিতে যার সুদৃঢ় অবস্থান এখন।
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন হাবিবুর রহমান হাবিব। সর্বশেষ সংযোজন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। প্রবাসীদের প্রতি সেই আস্থা বিশ্বাস আওয়ামী লীগ ধারণ করে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে।
প্রবাসীরা বারবার বলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসাবে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন তাঁরা, শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং প্রবাসীবান্ধব নীতির কারণে ২.৫% প্রণোদনা, বৈধভাবে অর্থ প্রেরণে মানুষকে উৎসাহিত করেছে ব্যাপক ভাবে। অন্যদিকে ডিজিটাল সুবিধার সর্বোচ্চ সুযোগ নিচ্ছেন প্রবাসীরা। আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগেও, দেশে কথা বলতে কলিং কার্ডের জন্য প্রত্যেক সপ্তাহে বেতনের পয়সার একটা অংশ বরাদ্দ রাখতে হতো। এবং লন্ডন বার্মিংহামের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ছাড়া সেইসব কলিং কার্ডও পাওয়া যেত না। যারা বাইরের শহরে থাকতেন বা রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন তাঁরা একটা কার্ডের জন্য যে কী পরিমাণ হাহাকার করতেন। সেটা আমরা জানি। টাকা দিয়েও সেই কলিং কার্ড জরুরি সময়ে পাওয়া যেত না। এখন সেই কলিং কার্ড আর দূরবীন দিয়েও খোঁজে পাওয়া যায় না।
কিন্তু যুক্তরাজ্যে বাঙালি কমিউনিটিতে আওয়ামী বিরোধী শক্তি দিনদিন প্রকট হচ্ছে। বিগত ১৪ বছরে পেশাদার জায়গাগুলোতে আওয়ামী বিরোধী শক্তিই দৃশ্যমান হয়েছে। কোন কোন সংগঠন, তাদের সংবিধানে আইন করে বাংলাদেশি রাজনীতি যারা করেন তাদের সদস্য পদ বাতিল করে দিয়েছে এমন নজিরও আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন মাধ্যম, অনলাইনের টকশো সব জায়গায় দিনরাত বসে শুধু আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার নিন্দাবাদই যেন চলছে দিনরাত। আমার জানামতে ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলো দুই একটা বাদ দিলে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় কেউ শরিক হয়নি। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেলসহ বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে নান গুজব আর মিথ্যাচারই বেশি হচ্ছে। তাদের অবস্থাটা এমন, "বিচার মানি তালগাছ আমার" দিন শেষে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি বিরূপ মন্তব্য না করলে চলবে না।
১৯৭১ সালে বাঙালি হয়েও মুক্তিযুদ্ধকালে ১৬৯ জনের একটা তালিকা ছিল, যারা ব্রিটেনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে আবুল হায়াতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার দেশের বাড়ি বৃহত্তর সিলেট জেলায়। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাঙালিদের অধিকাংশ এই অঞ্চলে থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে তিনি বাংলাদেশ-বিরোধী প্রচারণা চালান।
১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অজুহাতে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ-বিরোধী এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আবুল হায়াত। ১৬ আগস্ট 'দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, দু'সপ্তাহ আগে ট্রাফালগার স্কোয়ারে বাংলাদেশ সমর্থক। বাঙালিদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশের জবাব হিসেবে 'পাকিস্তান সলিডারিটি ফ্রন্ট এই সমাবেশের আয়োজন করে। এপ্রিল মাসে আবুল হায়াতের নেতৃত্বে বার্মিংহামে প্রতিষ্ঠানটি জন্মলাভ করে। এই আবুল হায়াত আবার আমাদের সিলেটের লোক ছিলেন। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী প্রচারণা চালাবার জন্য আবুল হায়াতের সম্পাদনায় যুক্তি নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করে।
ছিলেন বিচারপতি আব্বাস আলী, যার মৃত্যুর পর তার লাশ পাকিস্তানে কবর দেয়ার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও লন্ডনে এসেছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রচারণায়।
বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী প্রচারণা চালানোর জন্য পাকিস্তান সরকার যাঁদের বিদেশে পাঠায় তাদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তান অবজারভার-এর (পরবর্তীকালে 'বাংলাদেশ অবজারভার) মালিক হামিদুল হক চৌধুরী এবং তৎকালীন গণতন্ত্রী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মাহমুদ আলী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুলফিকার আলী ভুট্টো, মাহমুদ আলীকে দালালির পুরস্কার হিসেবে মন্ত্রী পদে নিয়োগ করেছিলেন। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হামিদুল হক চৌধুরী ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করে লন্ডনে পৌঁছান। ইতোমধ্যে মাহমুদ আলীও লন্ডনে পৌঁছান। তারা উভয়ে বেজওয়াটার এলাকার ব্যয়বহুল রয়াল ল্যাঙ্কাস্টার হোটেলে ওঠেন। পাকিস্তান সরকার তাদের ব্যয়ভার বহন করে। তাদের ভাতাদান সম্পর্কিত দলিলের ফ্যাক্সিমিলি' লন্ডনের সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকার ৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাদেরও মূল বক্তব্য ছিল ভারত বিরোধিতা। এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। অবজারভার'র মত পত্রিকা সম্পাদক বাংলাদেশে এখনো বিদ্যমান। খোদ লন্ডনেও খুঁজলে দুই একটা পাওয়া যাবে। তারা এমন ভাবে প্রচার প্রচারণা করে চলছে যেন বাংলাদেশ ডুবে যাচ্ছে, শ্রীলংকা-পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে। ভারত সব বুদ্ধি দিয়ে এসব করছে। আর এর সব দায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুকে শত শত গ্রুপ, নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে। কেউ অনুমতি নিয়ে কেউ অনুমতি না নিয়ে সে সবে যুক্ত করে নেয়। সাংবাদিকতার রসদ খুঁজতে সেসব দেখি। তথাকথিত মানবাধিকার নামধারী সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ইস্যুতে একই মানুষজন, একই ধরণের অপতৎপরতা। শুধু ব্যানার বদল করে দাঁড়িয়ে যাওয়া।
কিন্তু প্রবাসীদের যে সমস্যাগুলো নিয়ে তাদের সরব হওয়ার কথা ছিল সেগুলোতে কোন আন্দোলনও নাই, দাবিদাওয়াও নাই। তারা ব্যস্ত সাঈদীর মুক্তি নিয়ে, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে, আল জাজিরা নিয়ে, বাংলাদেশ কয়বার ইন্ডিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, এই সব নিয়ে। কেউ বলে না, বাংলাদেশ বিমানের টিকেট বিড়ম্বনার কথা অন্য বিমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে টিকেট কিনে লাল সবুজের বিমান চড়তে হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের। বিমানের ভাড়া অন্য এয়ারলাইন্সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার দাবি করেন না।
প্রবাসীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস অথবা ডিজিটালাইজসড করার দাবি কেউ জানায় না। যাতে করে ঘরে বসেই অনলাইনে ফিস দিয়ে, একজন লোক যাবতীয় পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন করতে পারে। যেমন উদাহরণ হিসাবে লন্ডনে একজন রেস্টুরেন্টে মালিককে অন্তত ৫/৬ ধরণের লাইসেন্স করতে হয়। এবং সে ক্ষেত্রে কাউকেই কোন অফিসে যেতে হয় না। ঘরে বসেই সব ধরনের আবেদন করে সেই সব লাইসেন্স পাওয়া যায়। দ্বৈত নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য কোন দাবি নেই, ব্যানার নেই। তারা বিচার মানা তালগাছের মতো সেই ১৯৭১'ই পড়ে আছে। ভারত সব নিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ২০২৩ সালে এসেও একটি বিষয় তারা বুঝতে চাইছেন না।
সংসদে দাঁড়িয়ে আমেরিকার মত পরাশক্তির সমালোচনা করার ক্ষমতা যিনি রাখেন তিনি শেখ হাসিনা। আজ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ তাঁকে কুর্নিশ জানায়। ৫০ বছরে বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের প্রতিফলন’ শীর্ষক এ প্লেনারি সেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু যখন আমরা বানাতে যাই তখন আমাদের ওপর দুর্নীতির একটা মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি বাবা-মা, সব হারিয়ে দুর্নীতি করতে আসিনি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। আমি এসেছি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। আর সেখান বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাসকে পদ্মা সেতুর একটি বাঁধাই করা ছবি উপহার হিসাবে দিয়ে এসেছেন তিনি।
এই যে চোখে চোখ রেখে কথা বলা, বাংলাদেশ যে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সেটি শেখ হাসিনার হাত ধরে, আওয়ামী লীগের হাত ধরে। কৃতজ্ঞতা স্বীকারে আমরা বড় কার্পণ্য বোধ করি। বিগত এক দশকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতে আজ কারো কোন হীনমন্যতা নেই। শেখ হাসিনাকে এই ধন্যবাদটুকু অন্তত দেওয়া প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের আলাদা ভাবে বারবার মূল্যায়ন করেছেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ভালবাসার প্রতিদান দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি যুক্তরাজ্য/আব্দুল মতিন
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য