আজ বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

Advertise

সিলেটে আরিফুল হকের রেড সিগন্যাল-গ্রিন সিগন্যাল থিয়োরি

জুয়েল রাজ  

অনেক জল ঘোলা করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র, বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০ মে সিলেটে সমাবেশ করে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর নির্বাচন করবেন না। তিনি মোটাদাগে যে অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন বর্জন করেছেন সেই অভিযোগগুলো হল নির্বাচনের পরিবেশ নেই, ইভিএম ভোটের প্রতি অনাস্থা, দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি। সর্বোপরি দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

আরিফুল হক নির্বাচন করবেন না, সেটি গত ২ এপ্রিল যখন তিনি লন্ডনে এসেছিলেন তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়। ২ এপ্রিল লন্ডনে এসে তিনি প্রায় ১৫ দিন লন্ডনে অবস্থান করেন। আর তখনই গল্পের গরু আকাশে উড়ার মত অবস্থা শুরু হয়। একবার তিনি নির্বাচন করবেন, আরেকবার তিনি নির্বাচন করবেন না। একবার বিএনপি ছাড়ছেন আরেক বার বিএনপি তাকে বহিস্কার করছে; নানা আলোচনা ছিল দেশে-বিদেশে।

আরিফুল হক চৌধুরী কিংবা তার নেতা তারেক রহমান টু-শব্দটি করেননি। লন্ডন ছাড়ার আগে এক ইফতার পার্টিতে তারেক রহমানসহ তিনি আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সেখানেই প্রথম উল্লেখ করেন, ‘আমার নেতা আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন। সেটি গ্রিন না রেড তা সময়মতো সবাই জানবেন।’ এরপর দেশে ফিরেও তিনি একই কথা বলেন। এরপর একের পর এক অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন প্রচারণা, জনসংযোগ সভা সমিতি কিছুই করেননি। সিগন্যাল আসলে কী ছিল? সিলেটে তার জনপ্রিয়তার হিসাবনিকাশ দেখিয়ে ভোটে দাঁড়াতে, লন্ডন থেকে গ্রিন সিগন্যাল চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আরিফুল হককে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে- ভোটে দাঁড়ালেই রেড সিগন্যাল! কারণ আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোন নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। এটা একদম পরিস্কার বলে দিয়েছিলেন তারেক রহমান। তাই যারা বিদ্রোহী হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছে তাদেরকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে। মূলত এই রেড সিগন্যাল নিয়েই দেশে ফিরেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী ।

এবং সাক্ষাতের এই সুযোগে বিএনপির রাজনীতির মাঠের চমক জনাব আরিফ, তার নেতা তারেক রহমানের সাথেও রাজনৈতিক বাজি খেলে নিয়েছেন। তিনি নিজের জনপ্রিয়তার ইতিহাস পূঁজি করে, সেই বাজি জিতে আসেন। জাতীয় নির্বাচনে তাকে নমিনেশন দিতে হবে, এবং কেন্দ্রীয় বিএনপিতে সহসভাপতি পদ দিতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন সময় হলে দেখবেন। মানে দুইটি বাকি আশ্বাস নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

তাহলে দীর্ঘ এক মাস এতো নাটকীয়তা কেন? কোন গ্রিন সিগন্যাল এর জন্য? তিনি তো এসেই ঘোষণা দিতে পারতেন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আমি নির্বাচন করব না। কিন্তু তিনি তা না করে, বিগত একমাস নির্বাচনী মাঠ জরিপ করেছেন, তিনি কতটা ঝুঁকি নেবেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত ১৬ মে ২৯ জন নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সিলেটে ২৫ জনের তালিকা গেছে কেন্দ্রে তো এইসব হিসাবনিকেশ তো ছিলই, সাথে, তিনি যে দুইবার নির্বাচিত হয়েছিলেন যতোটা না বিএনপির ভোটে, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের কোন্দলে। কারণ দুই নির্বাচনের ভোটেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পাশ করেছেন কিন্তু একই সেন্টারে মেয়র পাশ করেননি। আরিফুল হক এখনো সিলেটে প্রয়াত বদর উদ্দিন কামরানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় নেতা নন। কিন্তু সেই কামরানই দুই দুইবার পরাজিত হয়েছেন আরিফুল হকের কাছে। আরিফুল হক হয়ত এবারও দলীয় রেড সিগন্যাল অমান্য করেই ঝুঁকি নিতেন, কিন্তু বিএনপি তাকে বহিস্কার করলে যে সমস্যা, কোন নেতা কর্মীকে আর প্রচার প্রচারণায় পাবেন না। সব সেন্টারে এজেন্ট দেওয়ার মানুষও খুঁজে পাবেন না।

অভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা আরিফ। স্থানীয় নেতারা তাকে পছন্দ করেন না আবার নেতাদের বিরোধিতার মুখেও মেয়র নির্বাচিত হওয়াতে কর্মীদের কাছে তিনি আস্থার জায়গা তৈরি করেছেন। তেমনি দলীয় কর্মী হত্যার অভিযোগে ও দলের একটা অংশ তার বিরোধী আছে। তাই সব মিলিয়ে বিএনপির নিজেদের ঘরে আরিফুল হকের এক হিসাব, আবার আওয়ামী লীগের ঘরে তার হিসাব ভিন্ন। প্রথমত প্রবাসী প্রার্থী হিসাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে কেমন প্রভাব পড়ে তা তিনি অবলোকন করেছেন, বুঝতে চেষ্টা করেছেন। হাওয়া কোনদিকে বহে। আর সেই হাওয়াতে তিনি বুঝে গেছেন, এবার আর আওয়ামী লীগকে পাশে পাচ্ছেন না আরিফ, মূলত আওয়ামী লীগের এই রেড সিগন্যালেই তিনি আটকে গেছেন। আর সেই রেড সিগন্যালটি হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

কারণ গত দুই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতাকে দেখা যায়নি দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। নীরব থেকে তারা বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন বলে বাজারে প্রচলিত ছিল। আর ভোটের মাঠের হিসাবও তাই বলে। সব বড় বড় নেতাদের সেন্টারে নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল। মূল গ্রিন সিগন্যালটি আওয়ামী লীগ থেকে পাননি বলেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরিফুল হক। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রেকর্ড ভোটে সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বদর উদ্দিন কামরান। বড় ধরনের কোন অভিযোগ ছাড়াই সেই একই প্রার্থী সরকারি দলের প্রার্থী হিসাবে পরাজিত হয়েছিলেন প্রয়াত এই নেতা। অভিযোগের তীর ছিল দলের নেতাদের দিকে।

কিন্তু আনোয়ারুজ্জামান প্রার্থী হওয়াতে আরিফের হিসাবনিকেশ উলটপালট হয়ে গেছে। তিনি যে আওয়ামী লীগের নৌকায় পা দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন সেই সুযোগ এবার হচ্ছে না। এখন দলের প্রতি শ্রদ্ধা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, ইত্যাদি অজুহাতে রেড সিগন্যালে আটকা পড়ে গেছেন আরিফ।

ইতিহাস আপন গতিতে চলে। তাই রাজনীতিতে আরিফের ফিরে আসা কীভাবে হবে সেটি আগামীর গ্রিন সিগন্যাল বলে দেবে।

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৪ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৮ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ