আজ শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

Advertise

সাংবাদিক নির্যাতন, সুরক্ষা এবং সুশাসন

রহিম আব্দুর রহিম  

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ৭১ টিভির বকশীগঞ্জ প্রতিনিধি ও বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এর জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন।

বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'গত বুধবার (১৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নাদিম। তিনি স্থানীয় পাটহারি মোড়ে পৌঁছলে সেখানে ওঁত পেতে থাকা ১০ থেকে ১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তাঁর ওপর হামালা চালায়। সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি মারধরে গুরুতর আহত হন তিনি। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এরপর ওই রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান।

সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে সারাদেশের সাংবাদিক মহলে।

এবিষয়ে বকশিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, "সন্ত্রাসীরা চিহ্নিত হয়েছে, গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।" সর্বশেষ জানা গেছে, বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ ১৬ জুন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৭ জুন র‍্যাবের একটি টিম হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু ও তার দুই সহযোগীকে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চরতিস্তা গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করছে। এই গ্রেপ্তার প্রমাণ করে খুনি যে হোক আইন তাকে ছাড়বে না।

প্রতিটি সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের একই চিত্র, তবে ধারা ভিন্ন। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ৪৫০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, খুন হয়েছেন ১৬ জন সাংবাদিক। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল একুশে টিভি, এই চ্যানেলের চট্টগ্রাম স্টেশনে ছাত্রদলের ক্যাডাররা ডুকে সাংবাদিকদের পিটিয়েছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বাসসের ৪০ জন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশনের অনেক সাংবাদিককে চাকুরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিলো।

২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনে বিএনপি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। "ওইদিনই ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, "বর্তমান সরকারের সময় সাংবাদিকদের ওপর যত নির্যাতন ঘটেছে, অতীতে কখনো এমনটি হয়নি।" ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছিলেন, "বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিকবান্ধব।" তাঁদের প্রত্যেকের বক্তব্যই সত্য, সঠিক এবং প্রমাণিত। যাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যে অহরহ নির্যাতিত হচ্ছে তার প্রমাণ তাঁরাই স্পষ্ট করছেন।

সেই আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের ধাঁচ, ধারা একরকম, এই আমলে ধাঁচ-ধারা অন্যরকম। একটি মানবাধিকার সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন ওঠে এসেছে, গত ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের (২০২৩) এপ্রিল পর্যন্ত দেশ ডিজিটাল অ্যাক্টে মামলা হয়েছে ১ হাজার ২ শত ৯৫টি। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ মামলা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এ হিসেবে গত চার বছরে ৩৫৫ জন সাংবাদিক ডিজিটাল অ্যাক্ট আইন মামলার আসামি। গ্রেপ্তার সাংবাদিকের সংখ্যা ৮৪ জন। মামলাগুলোর বাদীরা সবাই বর্তমান সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা। সরকারের উদ্দেশ্য যদি সংবাদ শৃঙ্খলা, সুরক্ষার জন্যই ডিজিটাল আইন করা হয়ে থাকে, তবে সাংবাদিকরা কেন আসামি হবে, কেন তারা গ্রেপ্তার হবে বিষয়টির সমীকরণ আদৌ ইতিবাচক নয়, চরম নেতিবাচক।

সম্প্রতি জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখলাম, পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন প্রায় ১৩ বছর যাবত নিজ জেলা শহরে কর্মরত। নিজ জেলা শহরে অবস্থান করায় তিনি নানাবিধ অনিয়মের সাথে যে জড়িয়ে পড়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই।' এই কর্মকর্তা মাঝে মধ্যেই হুঙ্কার ছাড়েন, আমি ছাত্রলীগ করে এসেছি, উড়ে আসিনি!' এই রকম অনেক কর্মকর্তাই রয়েছেন যারা মফস্বল শহর থেকে শুরু করে রাজধানীর অফিস-আদালত দলীয় পরিচয়ে যুগযুগ ধরে রয়েছেন। যারা বিভিন্নভাবে ভিন্ন সময়ে একতরফা ভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি করে যাচ্ছে। এটা কি সুশাসনের অন্তরায় নয়?

সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন কেন বন্ধ হচ্ছে না? কারণ, যে যেখানে আছে সেখানে থেকেই দলীয় পরিচয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যার সামষ্টিক দায়ভার সরকারকে নিতে হচ্ছে। সাংবাদিকেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখতে গেলেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সরকার ইচ্ছা করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে পারবেন; যদি তারা সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর হোন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোন কর্মকর্তা দলীয় পরিচয়ে নিজ জেলায় যেমন কর্মরত থাকতে পারবেন না। তেমনি অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনতেই হবে। সংবাদ শৃঙ্খলার মতো সরকার যদি সাংবাদিক সুরক্ষায় আইন করে তা কার্যকর করতে পারেন তবে তা সম্ভব। অন্যথায় 'যেই লাউ, সেই কদু। 'আমরা চাই সুশাসন এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা।

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ