প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এনামুল হক এনাম | ১৮ জুন, ২০২৩
গত বছর ঠিক একই সময়ে বৃহত্তর সিলেটের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্বেই ভারতের আসাম এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যা সতর্কীকরণ জারি করে বন্যা পূর্বাভাসের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে স্থানীয় ভাবে এ নিয়ে কোন কাজ করেনি। যার ফলে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খাদ্য ও পানি সংকট সংকট, দুর্ঘটনা, মৃত্যু এবং বন্যা পরবর্তী রোগবালাই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল সেই সময়ে। অথচ বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী সতর্কীকরণ অবস্থা জারি করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটাই মোকাবেলা করা যেত।
কী হতে পারে বন্যা পূর্ববর্তী উদ্যোগ বা Preparedness?
১. জনসচেতনতা তৈরি এবং বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করা।
২. Emergency Evacuation Planning বা দ্রুত জনগণকে দুর্যোগ প্রবণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ও জিও এনজিও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নিম্নাঞ্চলে মানুষ এবং তাদের গবাদিপশু, হাঁসমুরগি সবকিছু উঁচু স্থানে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করতে হবে। স্থানীয় সরকারের অধীনে থাকা স্কুল, কলেজসহ সরকারি বেসরকারি উঁচু স্থাপনাগুলোকে অস্থায়ী শেল্টার হিসেবে চিহ্নিত করে স্থানীয় জনগণের কাছে লিস্ট পৌঁছে দেয়া, যাতে বন্যা শুরুর প্রাথমিক পর্যায়েই নিম্নাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ দ্রুত জান মাল রক্ষা করতে পারে৷
৩. শুকনো খাবার, পানীয় ও জরুরি ঔষধ মজুদ করা, ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় স্যানিটেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. গ্রাম/শহর রক্ষা বাঁধ পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা।
৫. গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন পরীক্ষা পূর্বক সর্তকাবস্থায় থাকা। ইতিপূর্বে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে গত বন্যায় অনেকেই আহত এবং নিহত হয়েছেন।
৬. জরুরি ত্রাণ তহবিল গঠন এবং সরকারি সংস্থা এবং এনজিও এর সমন্বয়ে পূর্বপরিকল্পনা প্রস্তুত করা এবং যে কোন দুর্যোগে তা বাস্তবায়নের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
৭. এলাকাভিত্তিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ: দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় তরুণদের সমন্বয়ে ভলান্টিয়ার টিম গঠন করতে হবে, যাদের দ্রুত সময়ে কাজে লাগানো যায়। প্রয়োজনে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে তাদের জরুরি ব্যবস্থায় করণীয় সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা করতে হবে। বন্যার পানি বিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে একই সাথে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট/কিট মজুদ রাখতে হবে।
৮. Preparedness এর এই প্রক্রিয়ায় নারী এবং শিশুদের প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ যে কোন দুর্যোগে তারা সবচেয়ে বেশি Vulnerable.
৯. সেন্ট্রালের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে ব্যাকআপ প্লান রাখতে হবে, যাতে চরম দুর্যোগে ঢাকা বা আশপাশের জেলা থেকে থেকে দ্রুত ত্রাণ আনা সম্ভব হয়।
১০. জনগণের জানমালের স্থানান্তরে জন্য পর্যাপ্ত নৌকা বা স্পিড বোটের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চলের সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে আগাম সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
১২. সর্বোপরি পূর্ববর্তী বন্যায় চিহ্নিত সমস্যাগুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
এ বিষয়গুলো বন্যা পূর্ববর্তী Preparedness এর খুবই বেসিক বিষয়। ইতিমধ্যে বন্যার পূর্বাভাস আমরা পেয়ে গেছি। আমি মনে করি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগেই নজর দেওয়া উচিত।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য