প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জাকিয়া সুলতানা মুক্তা | ২৯ জুলাই, ২০২৩
নৃশংসভাবে হত্যার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহেরের খুনের বিচার এত বছর পর তাঁর পরিবার তথা দেশবাসী পেলো। এই খুনের ইতিহাস এদেশের শিক্ষক রাজনীতি তথা দেশীয় রাজনীতির বিষয়ের একটি দুর্ভাগ্যজনক ধারণা দেয়। আর সেটি হলো এদেশের যেকোনো পর্যায়ের রাজনীতিতে খুনে লোকজনের অবাধ বিচরণ রয়েছে।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জীনাত ইমতিয়াজ আলী স্যার প্রায়ই একটি কথা বলতেন, "বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়।" অর্থাৎ সমাজে ঘটমান যেকোনো অন্যায়-অবিচারের চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রেও দৃশ্যমান হতে পারে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই আমরা অবাক হই না যখন দেখি—অধ্যাপক তাহেরের হত্যার পরিকল্পনাকারীদের একাংশ তাঁরই সহকর্মী ও সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা, তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ আশেপাশের কাছের মানুষেরাই!
আসলে খুন, হত্যা, জখমের মতন নৃশংস ঘটনাগুলো যারা ঘটায় তারা আমাদের/আপনাদের মতোই মানুষ। তাই তাদেরকে ও তাদের স্বভাব-চরিত্রের হালহকিকত, স্বাভাবিক চিন্তার মানুষের ভাবনা দিয়ে ঠিকভাবে চিনে নেওয়া বড় দায়।
এই দেখুন না, এই সপ্তাহে যেমন প্রায় বিশ বছর পরে হলেও অধ্যাপক তাহের হত্যার সুবিচার দেশবাসী পেয়েছে, ঠিক একই সপ্তাহে উক্ত একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থাৎ রাবি'রই শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষিকা আখতার বানু আলপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসে কী বীভৎস খুনে চাহিদার উদগীরণ ঘটেছে! এই শিক্ষিকা পদধারী ব্যক্তির বক্তব্যে ফুটে ওঠা খুনে চাওয়ার সাথে কি অধ্যাপক তাহের হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি আসামি ড. মিয়া. মো. মহিউদ্দিনের খুনে স্বভাবের কোনো পার্থক্য রয়েছে? আমারতো তা মনে হচ্ছে না!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক রাজনীতিতে এমন উদগ্র খুনে বাসনার সহকর্মী-শিক্ষার্থী এখনও সেভাবে না পেলেও, কিছু কিছু ঘটনার পরম্পরায় বিবেচনা করলে অনুধাবন করা যায় সময় ও সুযোগ পেলে এদের অনেকের পক্ষেই রাবি'র উক্ত ঘটনার দৃশ্যায়ন করা অসম্ভব কিছু হবে না। আর হবে নাইইবা কেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষক ও গবেষকের মন-মানসিকতায় বা বক্তব্য প্রকাশে যখন, পৃথিবীর অন্যতম দয়াহীন নিষ্ঠুর ঘটনা দেখবার গোপন ইচ্ছা প্রকাশ পায়; তখন তার প্রযত্নে থাকা বেশ কয়েকটা প্রজন্ম যে কী খুনি শিক্ষায় দীক্ষিত হচ্ছে তা ভাবনাতেও আনা দুষ্কর। এরকম কতশত খুনি চাহিদার শিক্ষক/শিক্ষিকা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে ভাবতেই কষ্ট হয়!
খুনি ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিনের তো বিচারিক আদালতে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, একইসাথে বাক স্বাধীনতার এই যুগে শিক্ষিকা আখতার বানু আলপনার স্বাধীনতা নামের স্বেচ্ছাচারিতার জন্য দেশের শিক্ষিত/সচেতন মানুষদের সোচ্চার প্রতিবাদ হলে ভালো হতো। অন্তত যাদের অন্তরে খুনি ভাবনাগুলো বিরাজ করে তাদের খুনি প্রকাশে দ্বিধা কাজ করত, সেগুলো কাউকে হত্যায় উৎসাহিত হয়ে ম্যানহোল পর্যন্ত কাউকে খুন করে ফেলে রাখার শিক্ষা পেত না।
দিনশেষে হারানো ব্যক্তিকে আমরা ফিরে পাই না, এটাই সত্য। বরং দিনের পর দিন এই নিষ্ঠুর লোকগুলো দ্বারাই বেষ্টিত থাকি। কী দুর্ভাগা আমরা!! অথচ এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন গড়তে আমাদের নানান অনীহা।
ভাবতে হবে, এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। নইলে কখনো ম্যানহোলে, কখনো বইমেলার ফুটপাতে রক্তাক্ত হয়ে খুনের শিকার হয়ে পড়ে থাকতে হবে নীরবে-নিভৃতে!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য