আজ সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

Advertise

আমিত্ববাদই কি বিপদ ডেকে আনছে না?

এখলাসুর রহমান  

আওয়ামী লীগের দলীয় বড়ত্ব নিয়ে অনেক নেতাকে অহমিকা করতে দেখা যায়। ১৪ দলের শরিকদের খুবই ছোট করে দেখে তারা। বলে এসব দলের কোন ভোট নেই। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? বেশ কটি উপনির্বাচন হয়ে গেল। কোথায় গেল তাদের ভোটার উপস্থিতি। কেন তারা ৮/৯ পার্সেন্টের বেশি ভোট পেতে পারলো না? বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ ও অপরাপর বিরোধী পক্ষের ভোটাররা না হয় ভোট কেন্দ্রে যায়নি। আওয়ামী লীগ দলীয় ভোটারদেরতো না যাওয়ার কথা না। মাত্র এই ৮/৯ পার্সেন্ট ভোট নিয়ে কেন তাদের এই এত অহমিকা? এতদিন সরকারে ১৪ দল ছিলো না। একদলীয় মন্ত্রিসভা নিয়ে সরকার পরিচালিত হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দল শরিকদের নিয়ে কোন বৈঠক করারও প্রয়োজন বোধ করেননি। এখন আবার ১৪ দলকে সক্রিয় করা হচ্ছে। তাদেরকে নিয়ে রাজপথে মিছিল করা হচ্ছে। শরিকদের চীনে পাঠানো হচ্ছে চীন সরকারকে আওয়ামী লীগের প্রতি ইতিবাচক মনোবৃত্তি সৃষ্টি করানোর চেষ্টায়।

আসলে দলের ছোট বড়ত্ব যে ভোটের নিয়ামক নয় তা উপনির্বাচনগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। আর আমিত্ববাদ ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাই স্বাগত জানাচ্ছে বিদেশি হস্তক্ষেপকে। যার মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এক গ্রামে আগুন লাগলে নিজেরা নিভাতে না পারলে বাইরের গ্রাম আসবেই। সুতরাং দায় আগুন লাগা গ্রামেরই। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সবার দৃষ্টি বাংলাদেশের দ্বাদশ নির্বাচনের দিকে। তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অর্থ পাচারের বিরুদ্ধেও সক্রিয় হচ্ছে। পাচারকৃত অর্থের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার কেন পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলো না? যদি নিতো বিদেশিরা কি হস্তক্ষেপের সুযোগ পেতো?

বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ১৪ দল কর্মসূচি দিচ্ছে। কিন্তু এর দায় কি ১৪ দলের না আওয়ামী লীগের? বিএনপি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক বড় দল। বেশ কয়বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছে দলটি। অথচ এই দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবি কি যৌক্তিক? নির্বাচন কমিশন কি পারবে এর নিবন্ধন বাতিল করতে? যা হবার নয় তা করতে চাওয়া কি চরম হঠকারিতা নয়? এতে কি দেশে বিদেশে এটা প্রমাণিত হয়না যে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে? আর আওয়ামী লীগ তার ভোটাধিকার হরণ করতে চাচ্ছে? এভাবে একের পর এক বিরোধাত্মক আমিত্বের বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে আরও প্রশ্নবিদ্ধতাকে কি স্বাগত জানানো হচ্ছে না?

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১,২০০৮ এ দেখেছি সরকার দল সরকার গঠন করেছে ও বিরোধী দল যথার্থ বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেছে। ব্যত্যয় ঘটলো ২০১৪ ও ২০১৮ সালে। ২০১৪-তে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলো। ২০১৮-তে মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করলো জাতীয় পার্টি আবার তারা বিরোধী দলও হয়ে গেল। সে সময় একতরফা ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে ১৪ দলের শরিকদেরও বিরোধী দল হয়ে যেতে বলা হলো। এগুলো গণতান্ত্রিক রীতি বাস্তবায়নে চরম ব্যর্থতার নজির নয় কি? এগুলোকে ঔদ্ধত্যও বলা যায় খামখেয়ালিও বলা যায়। ঔদ্ধত্য ও খামখেয়ালির পরিণতি যে ভালো হয় না। এটাই এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। বিএনপিকে বাদ দিলে তা নির্বাচনের মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে। রাজপথ কিংবা নিবন্ধন বাতিলের চেষ্টার মাধ্যমে নয়। এগুলো আরও সংকট সৃষ্টি করবে। আর তার আলামতও দেখা যাচ্ছে।

সংসদে সরকার দল থাকবে বিরোধী দল থাকবে। মহাজোট গতভাবে একসাথে নির্বাচন করে পরে নামধারী বিরোধী দল নয় যথার্থ বিরোধী দল চাই। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাংসদ চাই না। আগে দেখতাম সরকারি কোন সিদ্ধান্তের সাথে বিরোধ হলে বিরোধী দলীয় সাংসদরা ওয়াকআউট করতো। আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলেরই ওয়াকআউট করার নজির রয়েছে। সরকার দলের জনসভার বদলে অন্য একদিন বিরোধী দল জনসভা করতো। জনগণকে দুই পক্ষেরই বক্তব্য শোনার সুযোগ দিতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে সেই গণতান্ত্রিক স্বর্ণযুগ।

ঋণের দায়ে জর্জরিত দেশ। ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলেছে পাচারকারী দুর্বৃত্তরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এমন অস্থির সময়ে আমলাদেরকে দামি গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। কেন আগের গাড়িগুলো কি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে? সরকারের এই অতিরিক্ত আমলাতোষণই যে বিপদ ডেকে এনেছে। এই বোধ কি জাগবে না? বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙার সাহস পান না। আমলা ও ব্যবসায়ীদের প্রতি নতজানুতাই বিপদের কারণ। আমলারা আমলাগিরি করে পরে আবার সাংসদ হওয়ার খোয়াব দেখে। খোয়াব বাস্তবায়িতও হয়। একজন রানিং সচিব এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে। বহুবিধ ব্যর্থতার কারণেই আন্তর্জাতিক মহল এদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে খবরদারি করবে।

ওয়ান ইলেভেনের সময় মাইনাস টু ফর্মুলা ছিল। বিএনপির নিবন্ধন বাতিলসহ কিছু কর্মকাণ্ডে এখন ফুটে উঠছে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার ইঙ্গিত। এগুলো ভালো লক্ষণ নয়। দ্বাদশ নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ সুষ্ঠু। বিদেশিদের উপর নয়, দায়িত্ব ছাড়তে হবে এদেশের জনগণের উপর। উন্নয়ন-উন্নয়ন বলে গলা ফাটানো আর কতদিন। আওয়ামী লীগ যেভাবে বলে মনে হয় তাদের টাকায় এসব উন্নয়ন হয়েছে। সব উন্নয়ন হয়েছে জনগণের টাকায়। আর এসব উন্নয়ন বাস্তবায়নে লুটপাটও হয়েছে। আর লুটপাটের দায়ও সরকার এড়াতে পারে না।

আমিত্ব, অহমিকা, ঔদ্ধত্য, দুর্বৃত্ত, আমলা ও ব্যবসায়ীতোষণেই আন্তর্জাতিক ভাবে এদেশের প্রতি নেতিবাচক মনোবৃত্তি সৃষ্টি হয়েছে। এখনও সময় আছে। সময় থাকতে আত্মসমালোচনা ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা নিজ ও দেশ উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক।

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৭ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ