আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ভ্যাটানন্দ স্বামী ভণে ভ্যাট গরল সমান

আবু সাঈদ আহমেদ  

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকারসমূহ সুনিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম।

২.
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে নাই। অন্যদিকে রাষ্ট্রের সহযোগিতায় বেসরকারী বিনিয়োগ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক অধিকারকে লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্র ভর্তুকি দিলেও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে উচ্চহারে করের অধীন করেছে। ফলে সরকারী চিকিৎসা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যয় কম হলেও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে অনেক বেশি।

বেসরকারী চিকিৎসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মর্জিমাফিক ফি নির্ধারণ করে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রের কোন নজরদারী নেই। রাষ্ট্র তার কোষাগারে ট্যাক্স জমা হলেই আনন্দিত।

৩.
স্বভাবত প্রশ্ন সৃষ্টি হবে- নাগরিক সরকারি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয় কেন? প্রধানত দুটি কারণে নাগরিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়-
ক. রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান সকল নাগরিকের জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে নাই এবং
খ. উচ্চহারে ভর্তুকি প্রদান করা সত্বেও কিছু ব্যাতিক্রম বাদে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার মান অত্যন্ত নিম্ন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের ব্যার্থতায় ও নজরদারির উন্নাসিকতায় নাগরিক বেসরকারি চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হয়। অবশ্য একশ্রেণির অতি স্বচ্ছল নাগরিক আছে যারা বেসরকারি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহণে আগ্রহী হন- তাতে তাদের ইজ্জত আর স্ট্যাটাস দুটোই রক্ষা হয়।

৪.
রাষ্ট্রের উচিত অগ্রাধিকারভিত্তিতে চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সীমা প্রসারিত করে গ্রহণযোগ্য ব্যয়ে নাগরিকের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুনিশ্চিত করা। রাষ্ট্র নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা নিশ্চিত করে বেসরকারি খাতকে উচ্চ করের আওতাভূক্ত করলে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না। কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্বপালনে সফল হতে পারে নাই। ফলে যৌক্তিকভাবেই রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব যথাযথ নজরদারি ও নিয়মনীতির মাধ্যমে বেসরকারি খাতের সেবামূল্যকে সাধারণ নাগরিকের সাধ্যের সীমায় নিয়ে আসা।


৫.
রাষ্ট্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তুকি দেয়। অপরপক্ষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপরে প্রায় প্রথম থেকে উচ্চহারে কর আরোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপরে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে বহাল উচ্চহারের কর এবং সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের উপরে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করা শুধু অনৈতিক নয়, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক বটে।

৬.
অর্থমন্ত্রী সাফাই গেয়েছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনীর সন্তানরা পড়াশোনা করে। সুতরাং তাদের উপরে ৭.৫% ট্যাক্স আরোপ খুব বেশি নয়। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন যে প্রথমত: ধনীরা আইনত তাদের আয়ের সীমা অনুযায়ী আয়কর প্রদান করেন। যদি তারা আয়কর না দেন তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে তাদের ৭.৫% ভ্যাট আরোপ কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়ত: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া ছাত্ররা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে বাধ্য হয়। যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা থাকার পরেও ছাত্ররা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত তবে ১৫% ভ্যাট আরোপেও আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ ছিল না। রাষ্ট্র ভ্যাট আরোপের নৈতিক ভিত্তি পেত।

৭.
বাস্তব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংবিধানের সম-অধিকারের আদর্শ বাস্তবায়নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটিও রাষ্ট্রিয় ভর্তুকির দাবীদার। কর আর ভ্যাটারোপের পরিবর্তে রাষ্ট্রের উচিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমহারে ভর্তুকি প্রদান করা। ছাত্রদের কাছ থেকে শিক্ষা ব্যয় আদায়ের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া। একইসাথে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল কার্যক্রমে কঠোর নজরদারী নিশ্চিত করা।

৭.৫%. চলতি বাজেটে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপরে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আগামীকাল প্রাইভেট কলেজ ও বিদ্যালয়েগুলোতেও ভ্যাট আরোপ করা হবে- এ দেশে এটাই রীতি। শিক্ষা ও চিকিৎসা কোন পণ্য নয়। তাই এই দুই খাতকে ভ্যাটসহ সকল ধরনের করমুক্ত রাখতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে নাগরিকের অধিকার রক্ষায় বাধ্য করতে হবে।

সম্পূরক: ১. বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম রাষ্ট্র যারা শিক্ষার উপরে ভ্যাট আরোপ করেছে। দ্বিতীয় রাষ্ট্র গ্রীস। অবশ্য গ্রীসের শাসকগোষ্ঠী চরম অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সহনীয় হারে ভ্যাট বহাল রাখার সম্মতি আদায়ে অভিভাবকদের সাথে দেন-দরবার করছে।

২. রাজস্ববোর্ড জানিয়েছে ভ্যাট ছাত্ররা দিবে না, দিবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রশ্ন জাগে- রাজস্ববোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা দায়িত্ব পালন করেন? তারা কি বাস্তবিকই ভ্যাট আর কোম্পানি, কর্পোরেট বা এন্টারপ্রাইজ ট্যাক্সের পার্থক্যটুকু জানেন না? এণ্ড ইউজার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় নয় ছাত্রকেই ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে- এই প্রাথমিক জ্ঞানটুকু কি সত্যি তাদের নেই?

আবু সাঈদ আহমেদ, লেখক, কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ