আজ বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

Advertise

ছাত্রলীগের ‘পরিপক্ব আচরণ’ কি সংগঠনের জন্য হলো?

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা  

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা নিয়ে না লিখে পারলাম না। এত নৃশংস ঘটনা অনেকদিন এই দেশ প্রত্যক্ষ করেনি। অন্তত কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্মে সংগঠিত অপরাধ বা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ স্বয়ং ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে বেশ অনেকদিন চোখে পড়েনি। থানার মধ্যে ডেকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাউকে কাউকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে, এটা দেখার জন্য অন্তত এদেশের কেউ নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে প্রস্তুত ছিলো না৷ সামান্য একজন মানুষও যদি আজকে এমন অমানবিক আচরণের শিকার হতেন, তবে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যেতে পারত। সরকার মুহূর্তেই বেকায়দায় অবস্থায় পড়ে যেতে পারত। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে স্বয়ং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা কয়েকজনের সাথে। তবুও একটা প্রতিবাদলিপি সংগঠনটির পক্ষ থেকে দেশবাসী দেখতে পায়নি।

অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন—এ বিষয়টি এভাবে সমাধানে নাকি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভীষণ পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে। আমিও মনে করি বেশ পরিপক্ব আচরণই তারা করেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে আবেগের চেয়ে যৌক্তিক আচরণ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কেমন যেন বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ না দেখিয়ে পশ্চিমা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক আচরণের একটা সুবাতাস বইয়ে দিয়েছে বলে অনেকের মনে হচ্ছে। আমরাও মনে করি এটা নিঃসন্দেহে পরিপক্বতারই লক্ষণ। কিন্তু সেটা দলীয় সরকারকে বিতর্কের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিপক্ব আচরণ হয়েছে, নিজেদের সংগঠনের জন্য হয়নি। এজন্যই দিনশেষে ভাবছি—আমরা কি এমন পরিপক্বতা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এমন যুক্তিনির্ভর ধৈর্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শাস্তির পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম? কী জানি! হয়তো তাই!!

বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, তাঁর গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব ধৈর্যের সাথে এমন জটিল পরিস্থিতি সামলেছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু একইসাথে এক কথা না বলেও পারছি না—এই সরকার আমাদের নির্বাচিত সরকার তো, আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচন করা সরকার। তাই কষ্টটা লাগে। যে সরকারকে ২০০৯ সালে নির্বাচিত করেছিলাম আমরা সবাই মিলে, সেই সরকার কয়েক মেয়াদপূর্তিতে এখন অতিরিক্ত পুলিশনির্ভর সরকার। এটাই সত্যি।

এবার অন্তত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই বার্তাটা দেওয়া যেত যে—শুধু পুলিশ আর প্রশাসন দলীয় সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারে না, তার জন্য আবেগের সমর্থন লাগে যে আবেগ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতন সহযোগী সংগঠিত আর যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অপরাপর আবেগীয় অঙ্গসংগঠনের মাঝে রয়েছে। দিনশেষে পুলিশ আর প্রশাসনের লোকেরা চাকরি করে, তাদের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ভাষা একান্তভাবেই ক্ষমতার দিকে হেলে থাকে এবং এটাই স্বাভাবিক। অপরপক্ষে উল্লেখিত আবেগগুলোর কাছে ক্ষমতা মুখ্য নয়, দল ও নেতা মুখ্য। এসব আবেগ বেশি যুক্তিবাজ হয়ে উঠলে দিনশেষে দলের জন্য মনে হয় না তা ভালো কিছু বয়ে আনতে পারবে। এই আবেগগুলো আজকাল বেশি যুক্তি দিয়ে চলে ভেবেই নির্বাচনকে সামনে রেখে, এডিসি হারুন অর রশিদের মতন মানুষের সাহস হয়েছিলো সে এমন অসভ্যতা করেও পার পেয়ে যাবে। এখন সাময়িক ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন হয়নি তো কী হয়েছে, তার ভাগ্য বেলাশেষে মনে হয় না খুব খারাপ কিছু হবে বলে!

বরং দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি—সরকার পরিবর্তন হলে সে পুনর্বহাল হবে এবং একসময় ডিআইজি,‌ পুলিশ বা র‍্যাবের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার ইত্যাদি হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুও নয়। যেহেতু এই দেশটার নাম বাংলাদেশ!

একজন সাধারণ কেউ এমন অপরাধ করার জন্য যেমন বিচার হত, এখানে সেটাও হয়েছে এমন বলার উপায় নেই। অথচ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে ফৌজদারি আইনে মামলা হওয়া উচিত ছিল। সেই মামলা এখনও পর্যন্ত হয়নি। ভেতরে ভেতরে তোলপাড় হচ্ছে কিন্তু মুখে কোনো রাঁ শব্দের সেরকম কোনো ইঙ্গিত নেই। এই করে দলীয় সরকার বিতর্ক থেকে বাঁচতে সফল, কিন্তু কর্মীবান্ধব দলের সহযোগী সংগঠনের কী হাল হচ্ছে তা ভাবনার বিষয়। আশা করি বর্তমান সরকার তাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার পাশাপাশি, এ ক্ষমতাসীন দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও তাদের দলের স্বার্থে কর্মীবান্ধব নীতির আলোকে আরও সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কেননা সত্যটা হলো এই যে, এত বড় একটা অমানবিক নৃশংস ঘটনা ঘটে গেলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটা কড়া বার্তা দিয়ে প্রতিবাদলিপি গেলো না, এটা সত্যিকার অর্থেই হতাশাজনক।

আন্দোলন-সংগ্রাম করে নিজেদের দলীয় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়নি সহযোগী সংগঠন হিসেবে তা যেমন ঠিক আছে, একইসাথে একটা প্রতিবাদলিপি যে হাজার-লক্ষ কর্মী-সমর্থকের হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে খানিকটা হলেও প্রশমিত করতে পারত এটা কিন্তু এই পর্যায়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দিক থেকে পাওয়া গেলো না। এটা মানতে কষ্টই হচ্ছে। এজন্যই কষ্ট হচ্ছে—বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন, কোনো লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডের কোনো অঙ্গসংগঠন নয়। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। এই ছাত্রলীগকে তার দলীয় সরকারকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের সংগঠনের নেতা-কর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মনের অবস্থাটাকেও আমলে নিতে হবে। নইলে এক এডিসি হারুন গেছে, আরেক হারুন এর স্থলাভিষিক্ত হবে বৈ আর কিছুই হবে না।

উল্লেখ্য, যেকোনো পর্যায়ের প্রতিপক্ষ/শত্রুই মেরে (রূপকার্থে) কখনো শেষ করা যায় না। কেননা লোকমুখে একটা প্রচলন আছে "তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে"! সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হওয়াই ভালো।

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৪ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৮ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ