প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৩
হোচিমিন ইসলামের সাথে যে অন্যায় আচরণ হয়েছে, সেটা তো কেবল হোচিমিনের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ব্যক্তিগত অন্যায় নয়। এই ঘটনা জাতিগতভাবে আমাদের চারিত্র্যের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ যে মানসিক দিক দিয়ে সঙ্কীর্ণ এবং পশ্চাৎপদ সেটারই বহিঃপ্রকাশ। হুমায়ুন আজাদ যখন একদম জাত তুলে এইসব কথা বলতেন তখন অনেক সময় খারাপ লাগতো; কিন্তু এখন তো মানতেই হচ্ছে যে আমি অস্বীকার করতে পারি না, অস্বীকার করতে পারি না যে আমাদের সংখ্যাগুরু মানুষই মিসোজিনিস্ট, হোমোফবিক এবং ট্রান্সফোবিক।
আমাদের সংখ্যাগুরু মানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, সাম্প্রদায়িকতা ওদেরকে ভাবতে শেখায় যে পৃথিবীর সকল মানুষ, যারাই ওদের চিন্তার সাথে একমত নয়, এরা সকলেই মন্দ। অর্থাৎ এরা মনে করে যে ওদের সমবিশ্বাসীরাই কেবল সঠিক এবং ওদের বিশ্বাস যারা অনুসরণ করে না ওদের কোন অধিকার নাই। যদি ক্ষমতায় কুলাতো এরা ধর্মীয় ভিন্নমতের লোকজনকে দেশ থেকে বের করে দিত, সমপ্রেমি বা ট্রান্সজেন্ডার কাউকেই এই দেশে থাকতে দিতো না। ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একজন মানুষও যে মানুষ, সেই মানুষদেরও এ নাগরিক অধিকার আছে সেকথা এরা অনুধাবনই করতে পারে না।
মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, মানুষের অধিকার মেনে নেওয়া এবং সেই অধিকার খর্ব না করা এইসব ওদের কাছে একরকম শত্রুভাবাপন্ন ধারনা। যারা অধিকারের কথা বলবে ওদেরকে হত্যা করতেও এরা পিছপা হয় না। একটা কথা এরা উপলব্ধি করে না যে একজন মানুষ ট্রান্সজেন্ডার হোক বা হিজড়া হোক বা যাইই হোক, যে তো মানুষ। এই দেশের একজন নাগরিক। নাগরিক হিসাবে আপনার যা যা অধিকার আছে তারও সেই সব অধিকার রয়েছে। এইটা কি খুব জটিল কোন কথা?
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটা নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট লিখেছিলাম, দেখলাম যে সেখানে প্রায় হাজার খানেক মানুষ হা হা রিয়েকশন দিয়েছে। দেখে আমার ভাল লেগেছে। নাহ, পোস্টটা কাজে লেগেছে। কেননা এই যে হাজার খানেক লোক হা হা দিয়েছে ওরা তো এটা পড়েছে, পড়ে চিন্তা করেছে, চিন্তার পর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ওদের এই হা হা প্রতিক্রিয়াকে আপনি হাস্য কৌতুক মনে করলে ভুল করবেন। এই হা হা হচ্ছে ওদের বিরোধের প্রতিক্রিয়া, অনেকের ক্রোধের প্রতিক্রিয়া। এর মানে কী? এর মানে হচ্ছে যে অন্তত হাজার খানেক লোক যারা মানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় ওদের কাছে আমার এই কথাটা পৌঁছেছে এবং ওরা চিন্তা করেছে, ভেবেছে বিষয়টা নিয়ে।
তার মানে হচ্ছে যে সমপ্রেমিদের অধিকার নিয়ে, ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের অধিকার নিয়ে আরও বেশি বেশি করে বলতে হবে।
ফেসবুকেই লিখব। তাইলে সেইসব লোকের কাছে কথাগুলো আরও বেশি বেশি করে পৌঁছবে। ওরা আরও বেশি বেশি করে ভাববে। কেউ কেউ আক্রমণাত্মক আচরণ করবে হয়তো- কিন্তু ধীরে ধীরে সকলেই অধিকারের ইস্যুটা বুঝতে পারবে। কেননা অধিকারের কথাটা তো ন্যায়, অধিকারের কথাটা তো সত্যি এবং মানুষের অধিকারের পক্ষে থাকা মানেই তো সভ্যতার পক্ষে থাকে, সভ্যতাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়া।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য