আজ বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

Advertise

সব পেশার শেষ পরিণতি কি রাজনীতি?

রাজু আহমেদ  

ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যার, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাবেক বিচারপতি অমুক, সাবেক আমলা তমুক, সাবেক পুলিশ-সেনা কর্মকর্তা, নায়ক-নায়িকার দল, গায়ক-গায়িকার বহর, ক্রিকেটার-ফুটবলার, ডাক্তার সাহেব এমনকি শিক্ষকদের কেউ কেউ শেষ বয়সে এসে নমিনেশন কেনেন এবং এমপি হতে চান। ক্যারিয়ারের শেষে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাছাই করা আদৌ দোষের কিছু নয়, নিষিদ্ধও নয় কিন্তু সময় হিসেবে কি এটা সঠিক সময়?

একজন মাঠের রাজনীতিবিদ রাজনীতি সম্পর্কে যা জানেন, যত ধরনের চাল খেলতে পারেন, জনগণকে যেভাবে সম্পৃক্ত করতে পারেন সেভাবে উল্লিখিতরা পারেন? পারার কথা নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা এটাও না। আরও বড় সমস্যা আছে!

একজন পেশাজীবী অবসরের পর এক-দুইবার এমপি হতে পারেন! রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে ইমেজ বাড়ানোর জন্য নমিনেশন দিলেও তাদের ওপর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছে এমন নজির বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দু'একটি। যাও দু'একজন পেয়েছিল তারা সফলভাবে বিফল হয়ে পরে আর নমিনেশন পর্যন্ত পায়নি। তারা বিভিন্ন সেক্টরের উপদেষ্টা হিসেবে যতোটা পারঙ্গম মন্ত্রী হিসেবে জনগণ ও মিডিয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণে ততোটা দক্ষ নন। সে কারণেই ব্যক্তিগত প্রোফাইল যত ভারীই হোক তাদেরকে সংসদ সদস্য পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়! সংসদীয় রাজনীতিতে আরও কিছু সম্মানের পদ-পদবি আছে।

যদিও রাজনীতির জন্য আলাদা কোন নীতি নাই তবুও রাজনীতির মাঠকে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ, ত্যাগী রাজনীতিবিদের কাছেই রাখা উচিত! একজন অন্য পেশার মানুষ যিনি জীবনে একটা মামলাও খাননি, থানা-আদালতের মুখোমুখি হননি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েননি তিনি এলাকায় গিয়ে এমপি হতে পারেন কিন্তু দলের মধ্যকার বিপক্ষদের সাথে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের সাথে কৌশলে কুলিয়ে উঠবেন না। ফলাফলে তাঁর নির্বাচিত আসনটি উন্নয়নের গতিধারা থেকে বঞ্চিত হবে!

যারা রাজনীতি করেন তারা সর্বজনীন থাকেন না! একটা নির্দিষ্ট দলের ব্যানার বহন করার কারণে আরেকটি পক্ষ বিষোদগার করতে, এড়িয়ে চলতে, অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। অথচ রাষ্ট্রের স্বার্থে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মত নিরপেক্ষ শিক্ষক বড্ড দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যে রাজনীতি, যে দলাদলি তা আকাঙ্ক্ষিত নয়। আদালত পাড়ায় দলের ব্যানার থাকায় কেউ সুবিধা পায় আবার কেউ বঞ্চিত হওয়ার যে রীতি তা বন্ধ হওয়া দরকার।

ছাত্রজীবন থেকে যারা রাজনীতি করেছে, যারা দলের সাথে ছিল, যারা কর্মীদের সুখ দুঃখ দেখেছে, যারা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি, যাদের মাথায় মামলার পর মামলা ছিল, বিরোধী পক্ষের আঘাত যাদের শরীর বহন করে তাদেরকে রাজনীতির লড়াইয়ে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। যারা রাজনীতির 'র' বোঝে না তাদেরকে রাজনীতিতে সুযোগ দিলে স্থানীয় রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল আরও বাড়বে।

সব পেশাজীবীদের শেষ পরিণতিতে রাজনীতির পদ-পদবি পাওয়ার বাসনা, সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড় লক্ষণ হিসেবে শুভলক্ষণ নয়। এমন মানসিকতা সেবা প্রদানের জীবনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার প্রশ্ন উঠতে পারে। দপ্তর সামলানো আর কর্মী-সমর্থক সামলানোর মধ্যে যোজন যোজন তফাৎ। হুকুম দিয়ে, কাগজের ভয় দেখিয়ে অধীনদের দমিয়ে রাখা সহজ কিন্তু বিরোধীপক্ষের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হবে, দু'চার ঘা হজম করতেও হতে পারে-সেই সাহস, সম্মানের সেই ঠুনকো অবস্থা কি সাবেক শিক্ষক-আমলার আছে? দু'চার ডজন মামলায় হাজিরা দেওয়ার শক্তি, জেল-জরিমানার ধৈর্য তাদের আছে? যদি থাকে তবে বেশ। রাজনীতিতে নতুনধারা সূচিত হবে। কিন্তু যদি না থাকে তবে বৃহৎগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

সবাই আসলে ক্ষমতার মধ্যে ঢুকতে চায়। এর একমাত্র এবং শুধুমাত্র পথ নির্বাচন। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার করা যায় আবার ক্ষমতার ব্যবহারও করা যায়! রাজনীতি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে কী পরিণতি হয় তার কিছুটা আলামত রাষ্ট্র দেখেছ। একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ একটু হলেও জনগণের মঙ্গলের কথা ভাবেন। জনতার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেন। যারা শৈশব-কৈশোর থেকে দলের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সয়েছেন তারা জনতার কাছাকাছি আসতে পারেন। ধৈর্য ধরে সুখ দুঃখের কথা শুনতে পারেন। এসি রুম থেকে রাজনীতির মাঠের উত্তপ্ত কড়াইয়ে তারা কী করে নানা মত সামলাবেন, গালি-বকা সহ্য করবেন, রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি ট্যাকেল করবেন সেটাই ভয়ের! রাজনীতিটা রাজনীতিবিদের হাতে রাখা যায় কিনা? অন্তত কিছু বছর তৃণমূলে কাজ করা, নির্বাচনের আসনের নেতাকর্মী-ভোটারদের পর্যন্ত পৌঁছা-এ অভিজ্ঞতা দেখা দরকার।

একজন ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত স্যার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও তার এলাকাকে, গোটা দেশকে আরও বহু কিছু দিতে পারতেন। এরপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থে কাউকে দরকার তাকে টেকনোক্র্যান্ট মন্ত্রী করে, উচ্চ সম্মানের উপদেষ্টা বানিয়ে তাদের সেবা গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু জটিল সমীকরণের নির্বাচনে অ-রাজনীতিবিদের জন্য সুবিধার জায়গা হবে না। সব পেশার শেষ পরিণতি রাজনীতি হলে প্রকৃত রাজনীতিবিদরাও যেভাবে বিব্রত হন, তাদের ভক্ত-অনুরক্তরাও হতাশ হন! রাজনৈতিক দলগুলো সবাইকে নমিনেশন দিতে পারবে না। কাজেই রাজনীতির বাইরের হাই-প্রোফাইলের যারা নমিনেশন বঞ্চিত হবে তাদের জন্য তাদের অনুসারীদের মন খারাপ হবে। নমিনেশন না কিনলে মন খারাপের সুযোগ সৃষ্টি হতো না!

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৪ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৮ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ