প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সাধারণ মানুষের নানাবিধ ভাবনা এখন সর্বত্রই ভেসে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছে সত্তরের নির্বাচনের পর স্বাধীন দেশে 'ফখরুদ্দিন-মঈন'সরকার ছাড়া অন্য কোন সরকারই জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। কেউ বলছে, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার দেশে যে উন্নয়ন বিপ্লব ঘটিয়েছে তা সর্বকালে স্মরণযোগ্য হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮'র জাতীয় নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের অতি উৎসাহী আমলাদের কারসাজিতে ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি; এই না পারার ক্ষোভের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে সাধারণ জনগণ। ক্ষোভের আগুনে যুক্ত হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি।
বর্তমান সরকারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের একটি অংশ স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে বর্তমান সরকারের বিগত ১৫ বছরের ক্ষমতা আমলে ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছিল বলে অনেকের ধারণা।
সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকার জনমানুষের সাথে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ হয়েছে, ক্ষুব্ধ মানুষের দুঃখ -কষ্ট, পাওয়া-না পাওয়া এবং প্রত্যাশার আকুতি কম নয়। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনী মাঠে থাকলে নির্বাচনী গণজোয়ার আওয়ামী লীগের প্রতিকূলেই বইতো এমন ধারণা প্রান্তিক জনমানুষের।
জনমানুষ এটাও মনে করে যে, শেখ হাসিনা মনোনয়নের ক্ষেত্রে সম্ভবত, অথর্ব এবং ঘুষ-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্তদের খুঁজে বের করে তাদেরকে ছাঁটাই করে জনপ্রিয় নেতাদের নমিনেশন দিয়েছেন। বিষয়টি আওয়ামীপন্থী সাধারণ ও তরুণ ভোটাররা সাদরে গ্রহণ করেছে। মহাখুশি ভুক্তভোগী মহল। তবে দু একটি জায়গায় দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করে আমলা, অভিনেতা, খেলোয়াড় কিংবা শিল্পীদের নমিনেশন দেওয়ার বিষয়টিকে বঞ্চিতরা তো মেনে নিতেই পারছে না, যা ভোটাররাও দেখছে বাঁকা চোখে।
অপরদিকে বিএনপির ভোটে না আসা, বিদেশ থেকে রাজনীতি পরিচালনা করা, ব্যর্থ হরতাল, অবরোধ, রাজনীতির নামে চোরাগোপ্তা হামলা, অগ্নিকাণ্ডের মত কর্মকাণ্ড খোদ বিএনপি সমর্থিত সাধারণ ভোটাররা মেনে নিতে যেমন চাচ্ছেন না, তেমনি বিএনপির নেতা কর্মীদের অব্যাহত গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াটাকে চরম ঘৃণাভরে দেখছে তারা।
পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশে ভোটদান প্রক্রিয়াটি 'সর্বজনীন মহোৎসব' হিসেবে স্বীকৃত। যা বাংলাদেশের জন্য অতীব জন গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত জাতি গঠনের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ক্ষমতাসীন সরকারের এবারের 'সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত' করার পরীক্ষায় সফল হবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে ভোটাররা কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে যাবেন কি না; তা হলফ করা বলা যাচ্ছে না। কারণ, আস্থার যে মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের আনুষ্ঠানিকতা এখনও শুরু হয়নি।
দুই একটি প্রতিষ্ঠান এবারের নির্বাচনকেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলে মনে করতে না চাইলেও দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৩'শ আসনে মোট মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন ২ হাজার ৭১৩ জন। নির্বাচন আচরণবিধি পরিপালনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কঠোর অবস্থানে তার প্রাথমিক প্রমাণ, চার মন্ত্রীসহ ৩২ প্রার্থীকে শোকজ করেছে। স্বতন্ত্র এক প্রার্থীকে পেটানোর হুমকিদাতা নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ১ বছরের বেশি সময় ধরে এক উপজেলায় কর্মরত ইউএনও এবং ৬ মাসের বেশি সময় ধরে থানায় কর্মরত অফিসার ইনচার্জদের বদলীর নির্দেশ দিয়েছ। নির্বাচন কমিশন (ইসি)'র পদক্ষেপগুলো প্রশংসনীয়।
কমিশন আরও একটি গভীরে গেলে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় এমন কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় দীর্ঘদিন নিজ উপজেলা বা একই স্থানে কর্মরত থাকায় দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনীতি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি কোন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি শিরোনাম ছিলো, "পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন একযুগ ধরে নিজ জেলায়। "দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং পুরাতন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ; এই দলটির পতাকা তলেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অমর ইতিহাস গ্রন্থিত। গণতন্ত্র রক্ষায় যে দলের বর্তমান কর্ণধার শেখ হাসিনার সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা স্মরণযোগ্য। তার সরকারের অধীনে গণতন্ত্র সুসংহত করতে বাধা থাকার কথা নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের উচিৎ সর্বস্তরে ভোটারদের ভোট কেন্দ্র উপস্থিত করে, তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দানের জন্য সকল প্রকার মিশন নিয়ে ভোটের মাঠে নামা। যেখানে সাধারণ ভোটাররা নির্ভয়ে সাহসিকতার ভোট প্রয়োগ করার প্রতিশ্রুতি পাবে।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশনকে এগুতে হবে সকল প্রকার আইনি শক্তি, সততা, সাহস নিয়ে, যাতে করে এবারের নির্বাচন 'ফখরুদ্দিন-মঈন' আমলের নির্বাচনকে হার মানাতে না পারলেও তার কাছাকাছি যাওয়া যায়। এতে করে একদিকে ক্ষুব্ধ জনতার মন জয় করার পাশাপাশি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত যে কোন সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত সম্ভব।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য