আজ রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মানুষ মানুষের তৃপ্তির ওসিলা হোক!

রাজু আহমেদ  

পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের ঘর পোক্ত না থাকলে সম্পর্কে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। গোয়েন্দাগিরি করে বিশ্বাসকে রক্ষা করা যায় না। আজকাল মানুষ হাসতে হাসতে বিশ্বাস ভাঙে। অথচ নিয়ত সংগ্রামের দ্বারা বিশ্বাসের দেয়াল মজবুত করা উচিত ছিল। যে সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস নাই, সে সম্পর্কে লৌকিকতা থাকতে পারে কিন্তু আন্তরিকতা থাকে না। যাকে চোখ বুঝে ভরসা করা যায়, তীব্র সংকটেও বিশ্বাস করা যায় সেখানে চোখ বন্ধ করে জীবন লগ্নি করা যায়। যদি আস্থা নষ্ট হয়ে যায়, পাহারা দিয়ে আটকে রাখতে হয় সেখানে আর যাই হোক, মনের চাষবাস হয় না।

সুযোগ পেলেই বিশ্বাস নষ্ট করা, বেলা-অবেলায় মনের ঘরে কুঠারাঘাত করা, লোভে ডুবে প্রতিশ্রুতি ভুলে যাওয়া-সুন্দরতম মুহূর্ত উপহার দিতে পারে না বরং মানসিক যন্ত্রণার বিষফোঁড়া হিসেবে আবির্ভূত হয়। যে সম্পর্কে বিশ্বাসের ভিত্তি পুরু নয় সেখানে লোক ঠকানোর ভয় থাকে। সময় ক্ষেপণের শঙ্কা থাকে। ফায়দা ফুরিয়ে গেলে আস্থা হারিয়ে যায়। অচেনা মানুষের মত এক শহরের অলিগলিতে দু’পক্ষ দু’দিকে চলে। অথচ বিশ্বাস থাকলে বহুদূরে থেকেও নির্ভার থাকা যায়। আলাপ-সংলাপে প্রশান্তি নাজিল হয়। মানুষ তখন মানুষের আত্মতৃপ্তির ওসিলা হয়।

মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ’, কারো বিশ্বাস ভাঙা তবে পাপেরও বাপ। যে কোন সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে সুতো কেটে যায়। মন থেকে মনের দূরত্ব হু হু করে বেড়ে যায়। অথচ মনের ঠাঁই মনের ঘরে না পেলে ইচ্ছাগুলো গলে না। মন-অভিমান জমে না। চাওয়াগুলো পূর্ণতার শিশির হয়ে ঝরে না। আশ্বাস পাওয়ার পরেও যেখানের বিশ্বাস হারিয়ে গেছে, সে সমাজে অমানুষের বাস বেড়ে যায়। যারা মন্দির ভাঙে তারা মানুষ খুন করতেও দ্বিতীয়বার ভাবে না। মনকে হত্যার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী-সে হয়? দলিল করে বিশ্বাস টিকিয়ে রাখা যায় না যদি মানুষ নিজেকে ভয় না পায়! নৈতিকতা চর্চায় না থাক।

বিশ্বাসের নিজস্ব ধর্ম আছে। সে মানুষকে অপার্থিব সুখ দিতে পারে। মানুষ যখন বিশ্বাস ভঙ্গের পাপে জড়ায় তখন প্রথম শাস্তিতেই তার মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। যে বিশ্বাস ভাঙে, তার বিশ্বাসও বহুজনে উৎসবের মাধ্যমে হত্যা করে। প্রকৃতির প্রতিশোধে ঠক ঠকবেই। যে বিশ্বাস ভেঙেছে সে জিতেছে-এমনটা ঘটা অসম্ভব। আপনার আশেপাশে সে দৃষ্টান্ত নাই। বরং চরম অশান্তির জীবনে পা দিয়েছে। কারো অভিশাপ যাকে অনুসরণ করে তাকে হাতে ধরে শাস্তি দিতে হয় না। সে আপনা-আপনি শাস্তি পেয়ে যায়। অসীমের থেকে এসে উপহার হিসেবে পাওনা মিটিয়ে দিয়ে যায়!

যারা বিশ্বাস ভাঙে তারা হৃদয় ভাঙে। মনের মধ্যে ভাঙতে থাকা দুঃখের তেজ আছে। সে আশপাশকে দহন করে, যার রেশ প্রকৃতি বহন করতে শুরু করে। সে সুযোগমত ঠিক ঠিকানায় ফিরিয়ে দেয়। যে ভেবেছিল সে জিতে গেছে, এবার অন্য কোথাও ভরসা করা যায় সে সেখান থেকেই আঘাত পায়! পাপিষ্ঠের শ্রাদ্ধ শকুনেই খায়! কাউকে অন্ধবিশ্বাস করা দোষের নয় তবে যাকে বিশ্বাস করা হচ্ছে সে বিশ্বাসবহনের যোগ্যতা তিনি রাখেন কি-না সেটুকু যাচাই করতেই হয়! বিশ্বাসকে বাজারের পণ্য ভাবলে তো সেটা যেন-তেন ক্রেতার হাতে পরতেই পারে। সুতরাং সাবধানে। অতীব সন্তর্পণে!

বিশ্বাসের ব্যবসায় তাড়াহুড়ো করতে নাই। অসময়ে দুষ্ট লোকের দেখা পাওয়ার চেয়ে বিলম্বে যোগ্য লোকের সাক্ষাতের অপেক্ষা করতে হবে। যেন এক মানুষের দায়ের জন্য গোটা শ্রেণিকে দায়ী করতে না হয়। তারচেয়েও বড় কথা, চোখের পানি সস্তা না হোক। কার কাছে বলবেন মনের কথা, কাকে করবেন ভরসা-সেটা ধীরস্থিরে সুবিবেচনায় হোক। দুষ্টের মিষ্টি ভাষা এবং ছলনার রঙ-চঙের মধ্যে তফাৎ করার পরিপক্বতা লাভের পূর্বেই জীবন পেকে না যাক। কে লোভী, আর কে ভোগী-সেটা বোঝার ক্ষমতা না হলে গোয়াল শূন্য রাখাই শ্রেয়। তাতে অন্তত মানুষের ওপর থেকে বিশ্বাসের পর্দা তুলে নিতে হয় না।

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ