আজ রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সুখ একটি আপেক্ষিক অনুভূতি!

রাজু আহমেদ  

দূরের মানুষকে সুখী মনে হয়! বেকার ভাবে চাকুরিজীবীর চেয়ে আর কে বেশি সুখী! চাকুরিজীবীর চিন্তায় কবে আসবে মুক্তির দিন। 'কাঁটার মুকুট লাগে ভারী'-যার অবস্থানে সে খুশি নয়। এক পেশাজীবী ভাবে অন্য পেশাজীবী রাজ্যের সব সুখ ভোগ করছে। যে বেকার রাত পোড়ায় সে ভাবছে কোনমতে একটু আশ্রয় পেলে তবেই তো বিন্দাস জীবন! ঘর হবে, একটা মানুষ আসবে, সংসার হবে এবং সুখ হবে! বেকারত্ব ঘুচিয়ে ফেলা তরুণটি ভাবে কোন দরিয়ায় এলামরে বাবা! এখানে আমার মাথাই তো শেষ মাথা নয়! কলমের ওপরেও কলম ঘোরে! রাজনীতির উপর-নিচে অপরাজনীতি!

যে পোঁছেছে মনজিলে মাকসাদে তার সাধ জেগেছে স্বাধীন হওয়ার! তাঁর যে বিস্তৃত শিকড়, বর্ধিঞ্চু শাখা-প্রশাখা সে কথা ভুলে গেলে হবে? যে মানুষটি রাস্তায় ঘুমিয়েছে তার আপাতত একটি বিছানা পেলেই চলে কিন্তু যার বুকে অনেকের বিছানা সে ইচ্ছা হলেই এসব ছেড়ে-ছুড়ে স্বাধীনতা খোঁজ করতে পারে না। সুখ একটি আপেক্ষিক অনুভূতি। কেউ পাখির ডানা ঝাপটানো দেখে সুখী হয় আবার কেউ গোটা দুনিয়া পেয়েও সুখী নয়! কেউ গানে বলে, 'আমার মতো এতো সুখী নয়তো কারো জীবন!'

যতটুকু মিনিমাম-সেটুকুতে সন্তুষ্ট থাকতে পারলে শান্তি অবিরত হবে। চাওয়ার অন্তসীমা নাই! কারো সাথে তুলনা করে, কারোটা দেখে ঈর্ষা করে, কোনকিছুর প্রতি লোভ করে মানসিক সন্তুষ্টি হাসিল করা যায় না। কারো নসীবের সাথে অন্য কারো নসীব তুলনা করে নির্ধারণ করা হয়নি। মানুষ অকৃতজ্ঞ না হলে আত্মার প্রশান্তি অর্জিত হবে। কিছু কিছু ব্যাপারে মানুষের হাত নাই! সে কোন পরিবারে জন্মাবে, দেখতে কেমন হবে, মস্তিষ্কের সক্ষমতা কতোখানি থাকবে!-সেটা মহান শক্তিমান নির্ধারণ করেন। তবে তিনি কখনোই কারো প্রতি অবিচার করেন না। মানুষ চেষ্টা করলে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়-এমন নজির এখানে অসংখ্য। বড় হওয়ার ইচ্ছা ও চেষ্টার সমন্বয় হলে স্রষ্টা তাকে ওপরে তুলে দেন। কিন্তু বসে বসে ঈর্ষাকাতর হলে, অকৃতজ্ঞ হলে রব রহমাত-বারাকাত তুলে নেন।

যার চাওয়া যত কম, যে অল্পতে তৃপ্ত হয়, যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবতার নিরিখে তাকে অসুখী হতে হয় না। যোগ্যতার চেয়ে প্রত্যাশা বড় হলে, সকাল বেলাতেই বিকাল দাবি করলে না পাওয়ার বেদনা তার সাথে মাখামাখি করবেই। একটু ধৈর্য ধরলে, আরেকটু পরিশ্রম করলে, অবহেলায় বেলা না খোয়ালে সন্ধ্যার এখনো অনেক বাকি। আঁধার এখনো অনেক দূরে! হাল ছেড়ে দিয়ে কেবল আকাশের দিকে চেয়ে থাকলে সুযোগ আপনা-আপনি চলে আসবে না! ভাগ্য নিয়ন্তা মনের চাওয়া ও চেষ্টার সমন্বয় করেই প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন! তিনি কৃতজ্ঞকে খাজানা ভরে দেন! অকৃতজ্ঞের থেকে সুখসম্পদ কেড়ে নেন!

যা বলা উচিত নয় সেখানে চুপ থাকা, যা দেখা উচিত নয় সেখানে দৃষ্টি না দেয়া, যা চাওয়া উচিত নয় সেখান থেকে বিরত থাকা, যে পথে যাওয়া উচিত নয় সে পথ এড়িয়ে চলা-এইতো!-সহজ সমাধান। যে যত চেয়েছে সে ততবেশি বঞ্চিত হয়েছে। কাজেই অপ্রাপ্তি তো অসুখ আনবেই। লোভ সংবরণ করতে না পারলে, কখন থামতে হবে সেটা বুঝতে না পারলে অসুখের দুনিয়ায় পথচলা শুরু হবে। একটা ভালো দিনের জন্য যে খারাপ সময়গুলো পার হতে হবে সেই সময়ে যদি ধৈর্যচ্যুতি ঘটে, অসময়ের মুখোমুখি হতে কাপুরুষতা দেখান তবে বিপথ ও বিপদ পেয়ে বসবে। দুর্দিনের উল্টোপাশেই সুদিন লেপটে থাকে। সম্পূর্ণতা নিয়ে লেগে থাকলে পেয়ে যাবেন। মাঝপথে হাল ছেড়ে দিলে মাঝিহীন তরী আপনায় মরণের বেলাভূমিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে!

মহাকালের আয়ুতে জীবনের দৌরাত্ম্য বড্ড ছোট্ট রেখায়! অবৈধ পথে পাহাড়সম সম্পদ স্তূপ করে কাদের জন্য রেখে যাবেন? একজন মানুষ, একটা পরিবারের সদস্যরা কি পরিমাণ খেতে পারেন? যে সম্পদে অন্যের দীর্ঘশ্বাস লেগে থেকে, যে ক্ষমতায় অন্যকে প্রবঞ্চনার ইতিহাস লেপটে থাকে তা মানুষকে ভোগবাদী বানাতে পারে কিন্তু সুখী বানায় না! সুখ ভিন্ন বৃক্ষের ফল। কেউ নগ্ন থেকেও সুখী হতে পারে আবার কেউ কোটি টাকার পোশাক আচ্ছাদন করেও সুখ পায় না! অল্পতে তৃপ্তি, বর্তমান অবস্থানের জন্য শোকরিয়া, মানুষের দোয়া, জীবনের পেছনের যাদের অবদান আছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা-এসব সুখের সন্ধান দেয়। আজকের দিনে সন্তুষ্ট থাকলে আগামী দিন সুখের হবে।

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ