আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

দড়ি ধরে মারো টান

মাসকাওয়াথ আহসান  

আমরা ঠিক যতদিন আমাদের দুর্ভাগ্যের জন্য অন্য আরেকটি দেশকে দায়ী করব; ততদিন আমরা দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি পাব না।

সাধারণত একটি দেশের সরকার যখন সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়; তখনই সে অন্য একটি দেশকে ছায়াশত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরানোর খেলা খেলে। আওয়ামী লীগের মুখে "পাকিস্তান জুজু" অধুনা "মার্কিন জুজু" আর বিএনপির মুখে "ভারত জুজু" শতমুখে উচ্চারণের কলাকৈবল্য দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি; দলের অভ্যন্তরের ডাকাতের খনি লালন-পালনের লক্ষ্যে; আর দল হিসেবে নিজেদের ব্যর্থ তা ঢাকতেই তারা অন্য দেশকে এরকম ছায়াশত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে ফাঁপা যুদ্ধ কান্না বা ওয়ার-ক্রাই দেয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের যে ক্ষতি করেছে; পৃথিবীর অন্য কারো পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের পচা-গলা আমলাতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললে দেখবেন ওরা তোতা পাখির মতো বলে, ঐ বৃটিশ আমলাতন্ত্র এখনো আমাদের সিস্টেমের অভ্যন্তরে রয়ে গেছে। আপনি ঐ পামরদের জিজ্ঞেস করুন, খোদ বৃটেনের আমলাতন্ত্রেই বাংলাদেশ আমলাতন্ত্রের মতো সমস্যা নেই কেন! বৃটেনে কোন বাদাম বিক্রেতার ছেলে সিভিল সার্ভিসে ঢুকলে সে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সদয় হয়; দায়িত্ব পালনের সময়। আর বাংলাদেশের বাদাম বিক্রেতার ছেলে পুলিশ বা প্রশাসক হয়েই শ্রমজীবী মানুষের মুখে স্যার ডাক শুনতে চায়। গজতন্ত্রের নব্য এলিট হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যেরকম উদ্ধত, অনুতাপহীন, নির্দয় ও কর্কশ রাজনীতিক রয়েছেন; এরকম লোক আপনি ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দেখাতে পারবেন না। যেরকম অযোগ্য লোককে দলীয় ও আত্মীয়তার ভিত্তিতে মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা; এরকম অযোগ্য লোক আপনি ভারত ও পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় দেখাতে পারবেন না। ঐ দেশগুলোর রাজনৈতিক দলগুলোর যতই ত্রুটি থাকুক; মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য তারা মেধাবী লোক খুঁজে আনে। ভারত ও পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনি দলীয় ও আত্মীয়তার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ডোয়ার্ফ ভিসি দেখতে পাবেন না।

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে চীনের আধিপত্যবাদ ঠেকাতে ও বিচ্ছিন্নতাবাদ রোধ করতে; বাংলাদেশের সহযোগিতা তাদের প্রয়োজন। এর বাইরে আর কোন ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর তাদের আর কোন নির্ভরতা নেই। আর পাকিস্তান নিজের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতায় এমন বিপর্যয়ের মাঝে রয়েছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করার সময় তার নাই। ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা নিজেদের গুরুত্ব ধরে রাখতে ও সেনা বাজেট বাড়াতে পরস্পরের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজ করে দেখেছে যে, একে অপরের মাথার একটি চুলও ছিঁড়তে পারে না। তাই কালক্রমে তারা উভয়ে প্রোপাগান্ডা মুভি বানানোর প্রকল্পে মনোনিবেশ করেছে। এখন র' ও আইএসআই দুটি প্রোপাগান্ডা ফিল্ম কোম্পানির বেশি কিছু নয়। কাজেই বাংলাদেশে যেসব লোকের কল্পনার গাছে বরই-এর মতো র ও আইএসআই ঝুলে; তাদের ওসব কন্সপিরেসি থিওরিতে ক্ষান্ত দিয়ে এখন নিজেদের নৃশংস আয়নাঘরের এনার্জি বিসকিট বিষয়ক জটিলতায় মন দেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে যে নৃশংস কায়দার ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা ঘটে; ভারত ও পাকিস্তানে তা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে শিক্ষিত নাগরিক সমাজ নরভোজী দলান্ধ নয়। তাদের সক্রিয়তা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ তাদের নিজ নিজ দেশের রাক্ষসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে; তারা নিজেরা বাঁচতে ও প্রান্তিক মানুষকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে ক্ষমতা-দানবের হাত থেকে। কাজেই তাদের ও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের লক্ষ্য অভিন্ন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই সমস্ত পচন ও নৃশংসতা। ২০০১-০৬ পর্বের বিএনপি ও ২০১৪-২৪ পর্বের আওয়ামী লীগের মতো নৃশংস ও অনুতাপহীন শাসনকাল পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্বাস করেন, ক্যানসার আমাদের নিজের দেহে। লোভের ক্যানসার, চোরের খনির ক্যানসার, চাটার দলের ক্যানসার, আমব্রেলা ইঞ্জিনিয়ারদের মাত্র পনেরো বছরে জয় বাংলা বলে জমিদার হবার ক্যানসার।

পৃথিবীর অন্য কোন দেশ বাংলাদেশকে ভোটহীন করেনি। এইখানে রহমান এন্ড রহমান কোম্পানি দুটি ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেতে মরিয়া। দেশকে এরা টাকা তৈরির যন্ত্র বিশেষ ভাবে। এরা স্বদেশী উপনিবেশবাদী; বৃটিশ ও পাকিস্তান উপনিবেশের চেয়ে নিকৃষ্ট টাকাপাচারকারী এই অবিমৃষ্য ও নির্লজ্জ রাজনীতির মাজারের খাদেমগুলো। দেশটাকে এটা স্ব স্ব বাপের তালুক বলে দাবি করে। এরা হচ্ছে অন্ধ দুটি দৈত্য; জাড্য জরদ্গব ক্ষমতালোলুপ।

যতদিন আপনি বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যের জন্য ভারত ও পাকিস্তান-মার্কিনকে দায়ী করবেন, ততদিন ইনডেমনিটি পেয়ে যাবে চেতনার ক্যাশিয়ারেরা, যারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লিপ সার্ভিস দিয়ে; রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাট করে, ব্যাংক খায়; সাইপ্রাস, ভার্জিনিয়া দ্বীপ, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জ, কেমেন আইল্যান্ড, সুইস ব্যাংকে জমা করে বাংলাদেশ ডাকাতির অর্থ। পনেরো বছর আগে কারওয়ান বাজার থেকে পচা আলু আর ইঁচা মাছ কিনে ফেরা যুবক; ক্ষমতার আলাদিনের চেরাগ পেয়ে লন্ডনে ভিলা কিনেছে। সারে জাঁহাসে আচ্ছা; এইসব-এর বাচ্চা।

আপনি যদি দুর্নীতি ও অপশাসনের রাবণ বধ করতে চান; আপনার ফোকাস ঠিক করুন। লক্ষ্যবস্তু আপনার দেশেই বিরাট বিরাট চেয়ার আলো করে অন্ধকার ছড়াচ্ছে। দড়ি ধরে মারো টান; রাক্ষস হবে খান খান।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ