আজ মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জীবনদর্শনে প্রাণবিকতার অভাব ও আমাদের নিষ্ঠুর যাপন

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা  

বাঙালি তার নিজস্ব জাতিগত দর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এজন্যই আজকে এমন নির্মম ঘটনাগুলো দেখতে হচ্ছে আমাদের। রবি ঠাকুরের ‘পরিচয়’ কবিতার সেই বিখ্যাত চরণ দুটো দিয়েই যদি শুরু করি— ‘পথশিশু, নরশিশু- দিদি মাঝে পড়ে; দোঁহারে বাঁধিয়া দিলো পরিচয়ডোরে।’

প্রকৃতির সাথে, প্রকৃতির সন্তানদের সাথে অকৃত্রিম পরিচয়ে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব; আজকাল এই পুঁজিবাদী প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক উগ্রতার যুগে কেউ পালন করছে না। না পরিবার, না রাষ্ট্র, না সমাজ!  কেউইই না।

দ্বিতীয় ছবিটিতে এক মা ছাগলকে এক মানুষ পরিচয়ের হৃদয়হীন পশু, তার বিক্রির জন্য আনা কলা খেয়ে ফেলার জন্য মাথায় তুলে আছাড় মেরে হত্যা করেছে। সদ্যপ্রয়াত মা ছাগলটির ওলান থেকে ক্ষুধার্ত দুই ছাগশিশু দুধ পান করছে। জানেও না তাদের মা আর তাদের দুধ খাওয়ানোর জন্য বেঁচে নেই। নিজ ওলানের দুধে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে, মানুষের বাজারে বিক্রির জন্য আনা কলায় মুখ দিয়ে সে খুন হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে সে নিজেও জানত না যে যে প্রকৃতি তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, সেই প্রকৃতির কোনো কিছু খেতে হলে অনুমতি লাগে; পয়সা দিয়ে কিনে খেতে হয়! নইলে লাথি-গুঁতো এমনকি মরণের সম্মুখীনও হতে হয়। জানলে হয়তোবা বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও সে নিজের মৃত্যুকে এড়াতে পারত।

দুর্ভাগ্য এমন নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ার সাথে হতভাগ্য মা ছাগলটির কোনো পরিচয় ছিল না। মা-হারা সন্তান দুটোরও কোনোদিন জানা হবে না। অথচ মানুষ নামের অসভ্য প্রাণিদের আচরিত আচরণে ও চর্চায় এরকম হরেকরকম নমুনা বিদ্যমান।

তৃতীয় ছবিতে জীবন্ত এক খরগোশ-শিশুকে একটা সাপের খাঁচায় খাদ্য হিসেবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই স্বাধীন প্রাণি জগতে বিভিন্ন প্রাণিদের 'চিড়িয়াখানা' নামক অপ্রাকৃতিক এক ব্যবস্থায় ঢোকানোটাই হলো একটা চূড়ান্ত নির্মম ব্যবস্থা। যার হোতা ওই এক মানুষ নামক অসভ্য প্রাণিরাই। কেবল প্রাণিদের স্বাধীনতা হরণ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। জীবন্ত কোনো প্রাণিকে তিলে তিলে হত্যা করার নিষ্ঠুর নিয়মে, এক প্রাণির খাদ্য হিসেবে আরেক প্রাণিকে তারা বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা করেছে।

একবারেও ভাবেনি প্রকৃতিতে সাপের খাদ্য হিসেবে খরগোশ থাকে বটে, কিন্তু এভাবে নিদারুণ দুর্ভাগ্যের যাঁতাকলে পড়ে নয়। সেখানে খরগোশটির বাঁচার সুযোগও সমানভাবে উন্মুক্ত থাকে। কিন্তু এখানে সেই সুযোগটি বন্ধ করে দিয়ে নির্মমতার ভয়ানক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এই অসভ্য মানুষেরা!

অথচ উভয়ক্ষেত্রেই মানুষ ভিন্ন কোনো উপায় বাতলাতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। কেননা তাদের জীবন দর্শনে প্রকৃতির সাথে অকৃত্রিম পরিচয়ে পরিচয় হওয়ার কোনো পাঠ নেই। যদি থাকত তবে তারা এত ভয়ানক নিষ্ঠুর হতে পারত না।

প্রথম ছবিতে ছাগলের সাথে ছবি তুলতে পেরে আমার আজকে ভীষণ ভালো লেগেছে। কী অকৃত্রিম ওদের জীবনাচরণ! আমরা মানুষেরা যদি এমন অকৃত্রিম জীবনচর্চায় থাকতে পারতাম...প্রকৃতিকে ভালোবেসে, আরও একটু বেশি প্রাণবিক হতে পারতাম!

আহা! তবে বুঝি আমাদের এত নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা দেখতে হত না।

জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ