আজ সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ছাত্র রাজনীতি এবং ছাত্রদের রাজনীতি

শ্যামলাল গোসাঁই  

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা চায় না তাদের ক্যাম্পাসে রাজনীতির চর্চা হবে। শুধু বুয়েট নয়, বাস্তবতা হচ্ছে— দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চায়। এই চাওয়া ভালো কোনো লক্ষণ নয়। শিক্ষার্থীদের এই চাওয়ার পেছনে দেশের বিকৃত রাজনীতি চর্চা। তরুণদের যদি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ধরা হয়; আর তারা যদি হয় রাজনীতিবিমুখ, তাহলে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হয়। এর একটা সুদূর প্রসারী নঞর্থক প্রভাব গোটা সমাজে পড়ে। যেহেতু, এই শিক্ষিত তরুণরাই একসময় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। কিন্তু, আমার প্রশ্ন এখানে এটি নয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে রাজনীতি রাখা ঠিক না বেঠিক। আমি প্রশ্ন করতে চাইছি, শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বিমুখ সুর তুলছে কেন? কেন তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ চায়? শিক্ষিত তরুণদের ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করার দাবীর পেছনে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী কি না, তা অনুসন্ধান না করে নির্দিষ্ট কোনো ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই তাতে করে ছাত্র রাজনীতির খরা কেটে যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের রাজনীতির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা কোনো দক্ষ শিক্ষকের গুণ নয়। ছাত্র রাজনীতি চর্চাকে নিরুৎসাহিত করা মানে, ভাষা আন্দোলনের মতো ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করা।

লেখার শুরুতেই একটি ব্যাপার উল্লেখ করে রাখতে চাই। বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি যতবার আলোচনায় এসেছে এবং যেসব ঘটনার জের ধরে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে এর প্রায় সব ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নাম। দেখা যায় বুয়েটে যতবারই বড় কোনো অঘটন ঘটে এতে জড়িয়ে আছে ছাত্রলীগ। যেহেতু সংগঠনটির সাথে 'ছাত্র' শব্দ জড়িত এবং তারা বলে যে তারা ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করে তাই প্রতিটি ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধেরও দাবি উঠে। কেননা, উক্ত দল কর্তৃক বিভিন্ন সময়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদের নিপীড়ন, হয়রানিসহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শিক্ষার্থীরা এখন ধরেই নিয়েছে ছাত্র রাজনীতি মানেই ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র শিবিরের মতো সাংঘর্ষিক কার্যকলাপ। আর যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র রাজনীতি হিতকর নয় তাই তারা এটি চর্চা বন্ধ চান। এখানে আমার মনে হয় ছাত্র সংগঠন এবং কোনো দলের অঙ্গসংগঠন বিষয় দুইটি যে এক নয় আর তাদের উদ্দেশ্যও আলাদা তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপের প্রয়োজন আছে। একইসঙ্গে শিক্ষকদের এবং রাজনীতিবিদদেরও এই বিষয়ে আলাপে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা দেখি, বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠনের নেপথ্যের শক্তি থাকে দেশের দেশের প্রতিক্রিয়াশীল বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। যারা ছাত্রদের স্বীয় মতবাদ প্রচারে ব্যবহার করেন। তাই ছাত্র সংগঠনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম এই দলগুলো। ছাত্র সংগঠনের আচরণে উচিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ প্রতিফলিত হওয়া।

কোনো ছাত্র সংগঠন যদি শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কোনো সংগঠন হয়, জাতীয় কল্যাণে সদর্থক ভূমিকা রাখতে সক্ষম থাকে, তাহলে তা ক্যাম্পাসে রাখতে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু, ছাত্র সংগঠন যখন ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট একটি সংগঠন হিসেবে ক্যাম্পাসে আত্মপ্রকাশ করে এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে দলীয় স্বার্থ আদায় করতে চেষ্টা করে তখন তা নিয়ে অবশ্যই আপত্তি জানানোর আছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করা উচিত কি না— এ প্রশ্নের উত্তরের আগে আমাদেরকে ঠিক করতে হবে কোন ধরনের রাজনীতিকে শিক্ষার সাথে জড়াব? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চার দুইটি ক্ষেত্র কাজ করতে পারে। একটি হচ্ছে, সার্বিক স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো দলের বা গোষ্ঠীর স্বার্থে বা মতবাদের পক্ষে রাজনীতির চর্চা। এটিকে বলা যায় একটি রাষ্ট্রের মূল ধারার রাজনৈতিক প্রচারণায় ছাত্রদের সংযুক্ত করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ক্ষুদ্র রাজনীতি। এটাকে অবশ্যই শিক্ষার সঙ্গে রাখতে হবে। শিক্ষায় ক্ষুদ্র রাজনীতি থাকলে একজন শিক্ষার্থী সার্বিকভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার প্রক্রিয়াদি সম্পর্কে চর্চা করার সুযোগ পান। এবং পরবর্তীতে স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে পছন্দসই রাজনৈতিক মতবাদের পক্ষে নিজের অবস্থান নিতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে গড়ে উঠতে পারে বিভিন্ন সংগঠন। সেখানে তারা ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চা করবেন। এসব সংগঠন দেশের বিভিন্ন পেশাদার ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে। এটি তাদেরকে তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের জন্য এবং একটি ভাল ভবিষ্যতের জন্য তাদের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করতে পারে। এবং তারা প্রতিবাদ জানানোর মতো প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলতে পারে। এ ধরনের ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চায় রাজনৈতিক মনোভাব এবং চর্চা এমন থাকে যেখানে শিক্ষার্থীরা সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকতে পারে। এতে করে সামাজিক ভাবেও শিক্ষার্থীদের এক ধরণের উপযোগিতা বা ভ্যালু তৈরি হয়। এতে শিক্ষকরাও অংশ নিতে পারেন। তবে, তাদেরকেও ক্ষুদ্র রাজনীতির মধ্যে থেকেই সামষ্টিকের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে হবে। আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, তরুণদেরকে যুক্তিবাদী করে তোলতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বা স্থিতাবস্থায় আবদ্ধ করে রাখে এমন চর্চা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন কেউ প্রচার না করতে পারে।

২.
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি বলতে বর্তমানে দলীয় আকারের রাজনীতিকেই ধরা হয়। যেখানে নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠী কিংবা মতবাদের পক্ষে ছাত্ররা রাজনীতিতে নামেন। রাজনীতির এ ধরণটিই বেশি চর্চিত এখন ছাত্র মহলে। অর্থাৎ, আমরা দেশে যেসব ছাত্র সংগঠন দেখতে পাই এর প্রায় প্রতিটিই মূল ধারার কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে তাদের কাজ করে চলেছে। ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ সম্বলিত তেমন কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা কমই আন্দোলনে নামেন। যেসব সংগঠন সাধারণ ছাত্রদের পক্ষের হয়ে থাকে তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন দ্বারা নিপীড়নের শিকার হন। কেননা, একপাক্ষিক প্রতিক্রিয়াশীল সরকারে পরিচালিত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ দাবি-দাওয়ার থাকে সরকার বিরোধী। যদি না সেই সরকার প্রকৃত শিক্ষা বান্ধব হয়।

এ ধরনের সগঠনগুলোর কয়েকটি ধর্মপ্রধানও হয়ে থাকে। যেমন- ছাত্রলীগ, ছাত্রদল নামের ছাত্র সংগঠন দুইটি প্রত্যক্ষভাবে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন। আবার হিযবুত তাহরীর, ছাত্রশিবির, হিযবুত তাওহীদ ইত্যাদি ধর্মপ্রধান ছাত্র সংগঠন। এসব দলের লক্ষ্যে থাকে দলীয় বা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি তাদের দায়। এ ধরনের ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুব কমই সদর্থক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে, ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্পর্ক একটি সাংঘর্ষিক অবস্থায় উপনীত হয়। রাজনীতি শিক্ষা ব্যবস্থার যে ক্ষতি করে তা বেশিরভাগ সময়ই এসব দলীয় বা ধর্মীয় অঙ্গসংগঠনগুলোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর এতে করে যাহয়— শিক্ষার্থীদের মনে রাজনীতি নিয়ে শুরুতেই একটি বিরূপ চিন্তা লালিত হতে থাকে। তাঁরা ভাবতে শুরু কর, ছাত্র রাজনীতি দলীয় স্বার্থে বিপজ্জনক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ন্যায় কোনো কিছু। যাতে না জড়ানোই মঙ্গল। আমাদের অভিভাবকরাও তাই কলেজ, ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে সন্তানদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা বলেন।

অনেকের মতো আমিও মনে করি শিক্ষায় থাকা উচিত উপরে উল্লিখিত 'ক্ষুদ্র রাজনীতি' চর্চা। ক্ষুদ্র রাজনীতিকে বলা যেতে পারে মূল ধারার রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার আগে অনুশীলন মূলক রাজনীতি। এটি শিক্ষায় থাকলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হন। কেননা, ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বা জামায়াতে ইসলামি চর্চার কেন্দ্রে থাকে না। ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চার মূলে থাকে আমূল রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যক্তিগত ইচ্ছা, বিশ্বাস, প্রবণতা এবং বিচার গঠনে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা। একজন শিক্ষার্থী পারিবারিক ভাবে আওয়ামী লীগ পন্থী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। কিন্তু, তাকে ক্যাম্পাসে শুধুই আওয়ামী লীগের রাজনীতি চর্চার সকল প্রকার সুযোগ দিলে হবে না। এতে তাঁর যে ব্যক্তিমানস গঠিত হবে সেখানে একপাক্ষিক আদর্শই প্রতিফলিত হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীকে নানা ধরনের রাজনৈতিক চর্চার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো দলীয় রাজনীতি বা গোষ্ঠী রাজনীতির মতো নয় বলে এই ধরনের রাজনীতি চর্চায় কোনো রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের দরকার পড়ে না। অর্থাৎ, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন ক্ষুদ্র রাজনীতির চর্চার কথা বলা হবে, তখন সেখানে ছাত্রদের নিয়ে তৈরি কোনো জাতীয় রাজনীতির দলীয় অঙ্গসংগঠন থাকা চলবে না। থাকলে, এটি ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চায় বিঘ্ন ঘটাবে। মাঝারি আকারের রাজনীতি যেখানে সরাসরি শিক্ষার্থীদের গড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো দলের বা গোষ্ঠীর স্বার্থে বা মতবাদের পক্ষে রাজনীতির চর্চা শেখায়। সেখানে ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চা ব্যক্তিগত বিষয়ে কারো পছন্দ, মনোভাব এবং উপলব্ধি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চা একটি শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলতে সহায়তা করে। ক্ষুদ্র রাজনীতি চর্চার ফলে একজন শিক্ষার্থী নিজেই রাজনীতির কোন অংশটির সাথে নিজেকে জড়াবেন, কোনটি সামষ্টিকের কল্যাণের আসতে পারে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির চিত্র এমন যে, ক্যাম্পাসে ছাত্রদেরকে রাষ্ট্রের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো চেষ্টা করে নিজেদের দলীয় প্রচারণার তেজদীপ্ত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে। অর্থাৎ, ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা থাকে ক্ষমতাসীন দলপ্রধান, বিরোধীদলের সহযোগী সংগঠন কিংবা মতবাদপ্রধান ধর্মীয় সংগঠনের প্রচারকারী সংগঠন হিসেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি অনুচিত। কেননা, মূল ধারার রাজনীতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জড়ানো শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখনও এরকম ঘটছে। যেমন প্রায়শই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য এবং ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র নেতাদের সিট বাণিজ্যের খবর শুনতে পাওয়া যায়। এ ধরনের ঘটনা ঘটাকে ওই ছাত্র নেতা সাহস পান ক্ষমতাসীন দল থেকে, ওই শিক্ষক ছাত্র নেতাকে নিয়ে দুর্নীতির সাহস পান ক্ষমতাসীনদের প্রিয়ভাজন হতে পারেন এবং মদদপুষ্ট থাকেন বলে। ফলে, এ ধরনের দলীয় রাজনীতির চর্চা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খারাপ প্রভাব ফেলে। এবং এ ধরনের চর্চা শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

শিক্ষার্থীদের রাজনীতির মাঠে নামানোর আগে তাদেরকে রাজনৈতিক বিষয়াদিতে শিক্ষাদান প্রয়োজন। তা নাহলে যে পশ্চাৎপদ মতবাদে বিশ্বাসী সে সামষ্টিককে পশ্চাৎপদ দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখবে। মাঝারি আকারের রাজনীতি চর্চায় তরুণদের এই শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সরাসরি রাজনীতির মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে, ক্ষুদ্র রাজনীতি মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে রাজনীতিমনস্ক হয়ে উঠতে পারেন; রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত গঠন কিংবা কোনো বিষয়ে উপলব্ধি বা ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির এই চর্চাটি চালু করা যেতে পারে বলে মনে করি। এটি আমাদের শিক্ষকদের মাধ্যমেই সম্ভব। তবে, এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতাসীন কিংবা যেকোনো ধরনের জাতীয় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। শিক্ষার রাজনীতি হবে শিক্ষামূলক। আবার যা অবদান রাখতে পারবে সামষ্টিকের কল্যাণেও। শিক্ষার রাজনীতির উদ্দেশ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রজ্ঞাবোধ জাগ্রত করার। কোনো নির্দিষ্ট দলের আদর্শ প্রচারের স্বার্থে শিক্ষাকে ব্যবহার করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনীতির ব্যাপারে ছাত্রদের ও অভিভাবকদের অনীহা থাকবেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চা হতে হবে ক্ষুদ্র আকারে। যেহেতু, মুক্তিযুদ্ধ বা ভাষা আন্দোলনের মতো ঘটনা ফি বছর ঘটে না তাই ছাত্রদের রাজনৈতিক ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র তৈরি করতে সামাজিক এবং দেশের পেশাদার নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে। কোনো একটি দলিত সম্প্রদায়ের দাবি-দাওয়া ওঠে আসতে পারে শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি চর্চায় থাকতে পারে পরিবেশ সুরক্ষার দাবি। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি চর্চায় থাকতে পারে ক্ষমতাসীন কোনো সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রক্রিয়ার। এদিক থেকে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা বিষয়ক রাজনীতি চর্চার সবথেকে বড় জায়গা হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ, দুঃখের বিষয় এদেশে বিকৃত ছাত্র রাজনীতির অত্যাচারে এখন শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি তুলছে। এর দায় অবশ্যই এদেশের বড় রাজনীতিবিদদের। যারা ছাত্র রাজনীতির নামে নিজেদের দলের প্রচারকার্যে ছাত্রদের ব্যবহার করে আসছেন এতদিন ধরে। যারা ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া তরুণদের শোধরানোর বদলে উৎসাহ দিয়ে যান শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসীন থাকার জন্য।

শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ