আজ মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Advertise

প্রশংসা-সম্মান প্রদানে কৃপণতা নিন্দনীয়

রাজু আহমেদ  

অর্থ-সম্পদ এবং সামর্থ্য আছে তবুও প্রয়োজনে সেগুলো খরচ না করা-এটা কৃপণতার সংকীর্ণ রূপ। তবে ব্যাপকার্থে কৃপণতা কী? কারো সাথে আলাপ হচ্ছে অথচ মুখে হাসি নাই, কেউ উপকার করেছে অথচ কৃতজ্ঞতাবোধ পোষণ করেননি কিংবা বড় হয়েছেন অথচ বিনয় শিখতে পারেননি-এরচেয় বড় কৃপণতা আর কিছুতেই নাই! অন্যদের প্রশংসা করতে না পারার চেয়ে বড় কৃপণতা আর হয় না। অন্যকে সম্মান দেওয়া, সফলতায় ক্রেডিট দেওয়া কিংবা উৎসের কাছে ঋণ স্বীকার করার মাধ্যমেই মানুষ মহৎ হওয়ার বীজ বপন করে। স্রষ্টাও কৃতজ্ঞ আত্মা পছন্দ করে। অকৃতজ্ঞ মানুষ মুহূর্তের মধ্যে অতীতের ঋণ ভুলে যেতে পারে। চোখের পলকে আপনকে পর বানিয়ে ফেলতে পারে।

এই যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কৃপণতা, সম্মান-শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণে কৃপণতা কিংবা ঋণ স্বীকার না করায় চূড়ান্ত ক্ষতিটা নিজেরই। সদাচরণে আপনি কৃপণতা দেখালে, আপনিও যাদের জন্য সারাজীবন খাটবেন, যাদের সুখের জন্য নিজের ভোগ-বিলাসিতা ত্যাগ করে একটা জীবন লগ্নি করবেন তারাও অকৃতজ্ঞ হবে। সম্মান দেবে না, শ্রদ্ধা করবে না। অন্যদের জন্য জীবনভর যা কিছু করেছেন তার জন্য একবার হাসিমুখে ধন্যবাদ পর্যন্ত দেবে না! মোটকথা, আপনি যা রেখে যাচ্ছেন, আপনার ভবিষ্যতেও সেগুলোই ফেরত আসবে। আপনার যে ছায়া আপনার পশ্চাতে অন্যকে প্রশান্তি দেবে অনুরূপ কারো ছায়াই আপনার জন্য মায়া হয়ে এগিয়ে আসবে। সদাচার বিনিময় ব্যতিরেকে কিংবা জীবনকে পুরস্কৃত না করে অস্তাচল সূর্যের অনুগামী হবে না! আপনি হাসিমুখে থাকলে আপনার জন্য হাসিমাখা কোন বদনকেই অপেক্ষমাণ পাবেন।

অর্থ-বিত্ত নিয়ে যারা সীমাহীন কৃপণতা করে তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ও অস্বস্তিতে থাকা মানুষগুলোর ক্ষত একসময় সেরে ওঠে। কিন্তু যারা প্রশংসা করতে জানে না, সম্মান জানাতে কিংবা ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করে সে ক্ষতি মনের হয়। মন ভেঙে যায়। স্বপ্ন-আশায় দুঃখের ছাপ পড়ে। যারা মনে ব্যথা দেয় তারা বন্ধুত্বের ছদ্মবরণে থাকলেও আপন হয়ে ওঠে না। কেউ একজন দায়িত্ব-কর্তব্য হিসেবে কিছু করতে বাধ্য হলেও তার সাথে হাসিমুখে কথা বলা, কাজের শেষে ধন্যবাদ দেওয়া এবং বিনয়-মানবিকতা দেখানো মানুষের সাধারণ ধর্ম! কেউ ক্ষমতায়, আবার কেউ দম্ভ-অহংকারে নিজেকে হামবড়া ঠাহর করতে পারে কিন্তু মনুষ্যত্ব প্রকাশ পায় সদালাপে, সুশিক্ষা প্রকাশ পায় আচরণে এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় বিনয়ের প্রকাশে।

যারা সম্মান এবং ভয়-ভীতিকে মাখামাখি করে সবকিছু মাড়িয়ে যায়, যারা নিজের স্বার্থ রক্ষার মানসে সব শুভ তাড়িয়ে দেয় কিংবা নির্দয়ভাবে মন-বিশ্বাস ভেঙে যায় তাদের চেয়ে বড় কৃপণ আর অকৃপণভাবে কেউ হয় না। তারা ভালোর আলোর সাথে আলিঙ্গন করতে চায় না। যারা সবার মাঝে থেকেও কেবল নিজের কথা ভাবে, যারা সবার থেকে নিজেকেই বড় মনে করে, যারা আমিত্বের অসুখে আকুলিবিকুলি করে কিংবা যারা অপরের মধ্যে কোন ভালো গুণ দেখে না এবং সমাদর করে না তাদের সাথে প্রকৃতিও কৃপণতা করতে শুরু করে। সব অশুভ, সব দুঃখ-কষ্ট এবং লোভের মোহ তাদেরকে ঘিরে ধরে। হতাশার জীবন কালো মেঘের মত চেপে ধরে। জীবনে স্বস্তি-শান্তি তাদের থেকে এক পা, দু'পা করে বহুদূরে পালিয়ে যায়। যারা মানুষের ভালো সহ্য করতে পারে না তারা ধীরে ধীরে একা হয়ে যায়! মনের মধ্যে ক্রোধ-ঘৃণা-লোভ পুষতে পুষতে একসময় তারা মানুষ থেকে পাক্কা অমানুষে বদলে যায়! শুভ তখন তাদের সংস্পর্শ থেকে পালিয় যায়। যাদের মধ্যে মানবিকতার বোধ আছে তারা ওদের ঘৃণা করতে শুরু করে।

বিনীত থাকুন। যেখানে যেখানে ঋণ সেখানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। নত হলে কেউ ছোট হয় না বরং বড় হওয়ার ভিত পাকা হয়। মানুষকে প্রশংসা করলেই তবে প্রশংসিত জীবন গঠনে ঐশ্বরিক সহায়তা পাবেন। যে মানুষ হাসতে জানে না, ভালো কথা বলতে পারে না কিংবা সুন্দর আচরণ করতে কার্পণ্য করে তার জন্য শুভের দরজা সংকীর্ণ হতে হতে একসময় বন্ধ হয়ে যায়। পরিতৃপ্তির মানসিকতার সংকোচন ঘটে। সামর্থ্য থাকার পরেও প্রিয়জনের সাথে ভালো থাকতে, সমাজের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে কিংবা পরের অধিকার পূরণ করতে আর্থিক কার্পণ্য যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত তেমনি কারো সাথে সুন্দর করে কথা না বলা, প্রাপ্য প্রশংসা-সম্মান না দেওয়া কিংবা বিনয়ী না থাকাও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। যে বৃক্ষ যত ফলবান সে তত নত হয়! শিক্ষিত মানুষের থেকে সভ্য আচরণ, চরিত্রের সৌন্দর্য ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত থাকে। যে বা যারা এই রীতি-নিয়মনীতিকে ভঙ্গ করে তাদেরকে সুন্দর ও মঙ্গলময় জীবন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চূড়ান্ত ব্যর্থতা ও চরম ঘৃণায় মুড়িয়ে দেয়!

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৪ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৯ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪২ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২১ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন