প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আরিফ জেবতিক | ০৩ মে, ২০২৪
দুইদিন আগে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে টাইমস হায়ার এডুকেশন ম্যাগাজিন। বাংলাদেশে কমপক্ষে ১৬৩টা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, অথচ বিশ্বমানে দূরে থাক, এশিয়ার মানেও আমরা ৩শ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে থাকতে পারে, এরকম কোন প্রতিষ্ঠান গড়তে পারিনি।
গ্রামে একটা গরু একটু বড়সড় হলেই গরুর মালিক ভাবে এটা বোধহয় দুনিয়ার সবচাইতে বড় গরু! তারপর সেই ৮০০ কেজির গরুকে ‘হিরো আলম’ কি ‘ডিপজল’ নাম দিয়ে ঢাকার কোরবানির হাটে দাম হাঁকে ৩০ লাখ টাকা! গরুর পাছা থাপড়ে-থাপড়ে ইউটিউবে সাক্ষাৎকার দিয়ে মালিক নিজেই তারকা বনে যায়।
আমাদের অবস্থাও হয়েছে এমন। আমিয়ান, তুমিয়ান- ভার্সিটির নামের পেছনে ‘য়ান’ লাগিয়ে ভাবিয়ান হয়ে আমরা সবাই ডিম পাড়া মুরগির মতো গরবিনী হয়ে খালি কককক করে যাই।
আমরা জাতি হিসেবে দুনিয়ার সব ফালতু বিষয় নিয়ে এমন মগ্ন হয়ে আছি, দুনিয়ার জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমাদের কোন অবদানই নেই, এবং আমাদেরও যে বিশ্বকে কিছু দেওয়া উচিত, শুধু অন্যদের জ্ঞানবিজ্ঞান বিনেপয়সায়, কপিরাইট চুরি করে ভোগ করে যাওয়া উচিত নয়, সেই বোধ আমাদের মধ্যে নেই।
দেশের জ্ঞানবিজ্ঞানের অবস্থা কী করুণ, সেটি যে কোন পত্রিকার কি বড় কোন ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশন দেখলেই বুঝা যায়।
যে ভারতকে আমরা ‘মাঠে হাগে আর গরুর মুত খায়’ বলি, যে পাকিস্তানকে আমরা ‘ফকিন্নি’ হিসেবে হাসাহাসি করি, তাদের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু অন্তত এশিয়ার তালিকায় সগৌরবে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বেশি বুঝা, সবচাইতে বড়লোক্স জাতি হয়েও আমরা সেই তালিকায় নেই। এ বিষয়টি খুবই এলার্মিং।
আপনার যদি জ্ঞান বিজ্ঞানের ভাণ্ডারে রসদ না থাকে, তাহলে দুনিয়ায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না। আমাদের উচিত এটিকে প্রায়োরিটি হিসেবে সেট করা।
আমি টাইমস হায়ার এডুকেশন এর র্যাঙ্কিং সিস্টেমটি ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। এই র্যাঙ্কিং অনেকগুলো ফ্যাক্টরকে সমন্বয় করে তালিকা করা হয়। যেমন ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, ভার্সিটির রিসার্চ কতগুলো হচ্ছে, সেগুলোর কোয়ালিটি কেমন, ভার্সিটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য নতুন কী গবেষণা করছে, প্যাটেন্ট কতগুলো নিচ্ছে, বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে আকর্ষণ করতে পারছে কতটুকু- এগুলো বিবেচনা করা হয়।
এসব হচ্ছে সুন্দর ইনডিকেটর। আমার মনে হয় প্রত্যেকটি ভার্সিটির উচিত এই র্যাঙ্কিং সিস্টেমে অন্তত এশিয়ার মানে প্রথম একশ ভার্সিটির তালিকায় ঢোকার পরিকল্পনা করে একটি করে টাস্কফোর্স গঠন করা। টাস্কফোর্স প্রতিনিয়ত মনিটর করবে যে এসব লক্ষ্যমাত্রার কতগুলো তাদের ভার্সিটি পূরণ করতে পারছে, না পারলে কীভাবে পারবে।
অনেকে বলবেন যে, এসব তালিকা ফালতু, এসব তালিকায় থাকা না-থাকায় কিছু আসে যায় না। আমার কাছে এগুলো লুজার্সদের সান্ত্বনা বাক্য মনে হয়। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে দুনিয়ায় অধিকাংশ জিনিসেরই একটি স্ট্যান্ডার্ড প্যারামিটার আছে। আপনাকে সেই স্কেলেই সবাই বিবেচনা করে থাকে। আপনি কতটুকু জানেন সেটি বাজারে বিবেচনা করা কঠিন, কিন্তু আপনার যদি একটি মাস্টার্স ডিগ্রি থাকে, তাহলে সাধারণ লোক ধরে নেবে যে আপনি পড়াশোনা জানা লোক।
ভার্সিটিগুলো যদি বিশ্বমানের যে কোন র্যাঙ্কিংকে টার্গেট করে তাদের কাজকর্ম বাড়ায়, তাহলে তালিকাতে আসুক কি না আসুক, সেটার শুভফল আসতে বাধ্য। গবেষণা বাড়বে, প্রকাশনা বাড়বে, আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও যোগাযোগ বাড়বে। কুয়োর ব্যাঙ না হয়ে অন্তত দীঘির ব্যাঙ হওয়া যাবে।
দুনিয়া বদলে গেছে। এখন পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে বসে খালি কায়িক শ্রমে কৃষিকাজ করে কিংবা মাটির নিচের তেল-গ্যাস বিক্রি করে টিকে থাকা যাবে না। যাদের হাতে জ্ঞান-বিজ্ঞান আছে, প্রযুক্তি আছে তারাই এগিয়ে যাবে।
সেই জ্ঞান সমুদ্রে আমাদেরকেও অন্তত নুড়ি কুড়াতে যেতে হবে। লেখাপড়ায় বিশ্বমানে পৌঁছার চেষ্টা ছাড়া আমাদের তাই গতি নেই।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য