প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ১২ জুন, ২০২৪
সেদিন সাংবাদিকদের এক ঘরোয়া আড্ডায় সহকর্মী সিনিয়র কয়েকজনের সাথে নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল; আর বাংলাদেশীদের আড্ডায় যা হয় সব শেষ হয় গিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। একজনের দাবী খালেদা জিয়া আছেন বলে এখনো বিএনপি আছে , উনি চোখ বুঝলেই তারেক জিয়ার নেতৃত্ব থাকবে না। বিএনপি খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাবে। কারণ তারেক জিয়া এখনো নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। পাশ থেকে অন্য একজন বলেন সমস্যা নেই, তখন হাল ধরবেন পিনাকী ভট্টাচার্য!
কথাটা যদিও তিনি মজার চলে কিংবা হেঁয়ালি করে বলেছেন, কিন্তু বাস্তবতা ও পরিস্থিতি আসলে কী? বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অবস্থা জানি না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর চিত্র অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের জন্য পিনাকী ভট্টাচার্য এখন বিএনপির তাত্ত্বিক গুরু। তার বক্তব্য এখন তারেক জিয়ার বক্তব্যের চেয়ে ও বেশী পছন্দ করে বিএনপির লোকজন। তার লিখিত বইয়ের প্রচার প্রচারণা এবং তার ইউটিউব ভিডিওর বক্তব্যকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করে।
তারেক জিয়া যা পারেননি অতীতে বিভিন্ন সময় নানা ঘোষণা, মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে পিনাকী সেখানে সফল। ভিডিও বার্তার মাধ্যমেই পিনাকী ও আবেদন জানিয়েছিলেন, ভারত বয়কটের ফলাফল হয়তো শূন্য, কিন্তু দেখা গেল বিএনপির নেতা কর্মীরা সেই টোপ গিলেছেন। দেশে বিদেশে তারা ভারতবিরোধী নানা সমাবেশ র্যালি করেছেন, বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনে গিয়ে নানা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন।
পিনাকী আসলে কী চাইছেন? তিনি কি বাংলাদেশের ধ্রুব রাঠি হতে চাইছেন? নাকি অন্য কোন কারণে তার এই বিবর্তন? পিনাকীর বিবর্তন এক অসীম গবেষণার বিষয়, এমনও হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বিজ্ঞানে তিনি পঠিত হতে পারেন অথবা তাকে নিয়ে গবেষণাও হতে পারে।
পিনাকীর তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ, ইনফোরমেটিভ, কিন্তু তাই বলে তাকে জ্ঞানী বলার অবকাশ নাই। যেভাবে সার্চ ইঞ্জিনকে জ্ঞানী বলা যায় না। তার বই, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মূলত মৌলিক কিছু নয়, আমি যতদূর পড়েছি সব অন্যের লেখা থেকে রেফারেন্স হিসাবে নেয়া। তাই টানা পড়ার আগ্রহ বোধ করিনি। সেখানে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ বিরোধী ও তখনকার বঙ্গবন্ধু সরকার বিরোধী লেখক প্রকাশনাসমূহকে, এবং সেই সব বিতর্কিত ইতিহাসের সাক্ষ্যের মাঝে মাঝে নিজের মত ও বিতর্কিত কিছু ঘটনাবলিকে সংযোজিত করেছেন। এর বড় একটা অংশ আবার মুক্তিযুদ্ধে ভারতের লাভ ক্ষতি, সৈনিকদের লুটপাট এই জাতীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। খুব সম্ভবত তার সর্বশেষ প্রকাশিত বই ‘‘স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ’’ যা লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রকাশনা বাজারজাত করণ এবং প্রচারণায় যারা জড়িত ছিলেন সবাই মূলত আওয়ামী লীগ বিপক্ষ শিবিরের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন। আর সেটাই স্বাভাবিক।
মূলত ২০১৩ সালের আগে উনাকে বাংলা ব্লগে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারাই চিনতেন , এর বাইরে খুব পরিচিত ছিলেন কি না আমার জানা নেই। এর আগে খুব সম্ভবত ২০০৮ সালে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস এর কালাজ্বরের ঔষধ কেলেংকারিতে তার নাম আসে গণমাধ্যমে। ২০১৩ সালে মূলত গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের সর্বোচ্চ সাজার দাবীতে আন্দোলনে বিভিন্ন টেলিভিশনে আলোচনায় যোগ দিয়ে তার যুক্তি ও ধারালো বক্তব্যের কারণে নজরে আসেন এবং পরিচিতি পান। সেই পরিচিতির পিছনেই তাকে তাড়া করে তার ব্যক্তি জীবন, ধর্মীয় পরিচয়, তার কৃতকর্ম নানা বিষয়। আর তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
সেই অবস্থান বদলে, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর পিনাকী ভট্টাচার্য তার একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ''জেহাদই হল বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইজরায়েলকে নির্মূল করার একমাত্র উপায়। আমার সমস্ত অনুরাগী ও অনুগামীদের এই কাজে যোগদান করা উচিত। '' উল্লেখ্য, পিনাকী ভট্টাচার্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাসের প্রতি খোলাখুলি সমর্থন প্রকাশ করেছে। গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইজরায়েলের উপর হামাসের যে হামলা, সেটিকে তাতে সে খুবই আনন্দিত বলে জানিয়েছে।
এই যে বিবর্তন, এরআগে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের নারকীয় তাণ্ডব ও নিরাপত্তা বাহিনীর সেই প্রতিরোধের পক্ষে হেফাজতের মিথ্যাচারের বিপক্ষে জোরালো প্রতিবাদী ছিলেন তিনি। পরে দেখা যায় পুরো ইউটার্ন করেন তিনি। তিনি হেফাজতের সেই হাজার হাজার হত্যার পক্ষে কথা বলা শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ধর্মনিরপেক্ষতা সহজ কথা মুক্তিযুদ্ধের মূল যে স্তম্ভগুলো আছে সেখানে তিনি বিতর্ক শুরু করেন , যেমন তার মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম সম্পর্কে লেখেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘এই শব্দটির সাথে আমরা সমধিক পরিচিত। কিন্তু এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে ইসলামের ভূমিকা কতোটা রয়েছে তা আমাদের নতুন প্রজন্মের নিকট একেবারেই অজানা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে যে বয়ান আছে তাতে ইসলাম একেবারেই অনুপস্থিত। আমরা এখন বাংলাদেশকে জানি একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পুঁজি বা শক্তি যাই বলি না কেন তা ছিল ইসলাম। কিন্তু সেই ইসলামকে এবং যুদ্ধে অবদান রাখা বিরাট আলেম সমাজ কেই দেশ স্বাধীনের পর পর বিকৃত করে দেখানো হয়েছে বলে তিনি লি
এক্ষেত্রে কিছু ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা যাক-
১. মুক্তিযুদ্ধকালে সরকারি ঘোষণাপত্র এবং অন্যান্য নির্দেশাবলী ও বেতার কেন্দ্রে সকল স্থানে আল্লাহর নাম নিয়ে এবং পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের জন্য কখনোই মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বরং একটি ইসলামিক শাসনব্যবস্থা, ন্যায় ও সাম্য ও ইনসাফের দেশ গঠনের জন্য যুদ্ধ হয়েছে।
২. রাজাকার বলতেই আমরা সারাজীবন জেনে এসেছি পাজামা, পাঞ্জাবী, টুপি, তসবিহ, লম্বা দাড়ি ধারণকারী মানুষ। কিন্তু আদৌতে কি তাই?বরং, লেখক কিছু স্থিরচিত্র সহ তুলে ধরেছেন, অধিকাংশ রাজাকার এর ই দাড়ি, গোঁফ, তসবি, টুপি ছিল না। অথচ নাটক, সিনেমা, পোস্টারে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মানেই ইসলামিক চিহ্ন ধারণকারী ব্যক্তিদের চরিত্র চিত্রণ করা হয় যার সাথে বাস্তবতার আসলে কোনো মিলই নেই। যুদ্ধের সময় কিছু সংখ্যক মানুষ পাক সেনাদের সাহায্য করেছিল বা তাদের হয়ে কাজ করেছিল যাদের রাজাকার বাহিনী বলা হয়। এই রাজাকার বাহিনীতে আসলে কারা যোগ দিয়েছিল। এটি বিশ্লেষণ করা দেখা যায়,
ক) ঐ সময়টাতে দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল ফলে যারা ওই বাহিনীতে যোগ দিত তাদের পাক সরকার অর্থ সাহায্য করত।
খ) কিছু ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ এবং সুযোগ সন্ধানী ও প্রতি হিংসা পরায়ণ জনগণ পাক সেনাদের সাহায্য করেছিল।
ফলে, আলেম জনগোষ্ঠী বা ইসলাম লেবাস ধারী ব্যক্তিদের রাজাকার হিসেবে গণ্য করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। রাজাকার বাহিনীর একটি বিরাট অংশ এসেছে আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ, পিডিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে। “
এছাড়া উল্লেখ্য যে, ধর্মীয় নেতাদের জন্য বর্ডার ক্রস করে ভারতে যাওয়া কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এমনকি মওলানা ভাসানীও বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।
৩. মুক্তিযুদ্ধের দেশের আলেম সমাজের একটা বিরাট অংশ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিল যা সম্পর্কে আমরা তরুণ প্রজন্ম একেবারেই অজ্ঞাতাবাসে সময়ে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম হাফেজ্জি হুজুর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নেন। এবং মুক্তিযুদ্ধকে তিনি উল্লেখ করেন জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের ন্যায়যুদ্ধ’এবং তার সহচারীদের যুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন।
মওলানা ভাসানীর মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে এবং যুদ্ধ শেষে দেশের জন্য লড়াই লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে কাগমারী সম্মেলন উল্লেখযোগ্য। এবং তিনিই ভারতে গিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাকিস্তান সরকারের গণহত্যার ব্যাপারে অবহিত করেন এবং জনমত গঠনের চেষ্টা চালান। এছাড়া দেখা যায়, ভারতে অবস্থিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ নামক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং সহযোগিতা করেছেন আর এই সাহায্য ছিল একটি অত্যাচারিত মুসলিম জনগোষ্ঠীকে উদ্ধারের জন্য।
৪. মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয়জনদের নিকট লেখা চিঠিপত্রে স্পষ্টতই দেখা যায় তাদের মানসিক শক্তি এবং ভাবনায় ইসলামের ভাব-চিন্তা কতোটা ক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করেছে। এক আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তারা শহীদ হতে প্রস্তুত ছিল।
৫. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কৌতুক নাটিকাতে পাকিস্তান সরকার কে ইসলাম ধর্মবিরোধী এবং বাঙালিদের ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগানো হয়েছে।
৬. বাংলাদেশে যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় স্পষ্টতই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, জাতিগতভাবে পাকিস্তান এবং ভারত দুই জাতি। সম্ভবত একারণেই পর পর দুবার অস্থায়ী সরকার কর্তৃক ভারতে স্বীকৃতির আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সবশেষে, ২৩ শে নভেম্বর পাঠানো চিঠিতে ভারতের সাথে মিল রেখে মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা উল্লেখ করার পর ই ভারতের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ।
পিনাকী তার মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে ইতালীয় এক সাংবাদিকের বয়ানে পিনাকী উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতালিপ্সু , উচ্চাবিলাসীসহ হেন কোন উপাধি নেই সেখানে উল্লেখ করেনি, ২৬ মার্চ কেন নিহত না হয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলেন, ভুট্টোর সাথে হয়তো তার গোপন আঁতাত ছিল এই সব লিখিত আকারে ইচ্ছা করেই প্রকাশ করছেন। বা তথ্য হিসাবে দলিল হিসাবে রাখতে চাইছেন।
বঙ্গবন্ধুর শত্রু ও তার ব্যক্তিত্ব, আচরণ ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি কোনদিন। তাঁর রাজনীতি কিংবা প্রশাসনিক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা আছে হয়ত। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিয়ে বিতর্ক নেই কোথাও। কিন্তু পিনাকী সূক্ষ্মভাবে, ইচ্ছাকৃত ভাবে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করতে কিংবা ঐতিহাসিক একটি বিতর্কের বীজ নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে এই বিষয়টি তার স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। সাধারণ পাঠক কিন্তু বইয়ের টিকা টিপ্পনী দেখে না কোন পত্রিকায় কত সালে প্রকাশিত হয়েছিল সত্য না মিথ্যা তা যাচাই করবে না। তারা হয়ত বিশ্বাস করবে পিনাকীর বইয়ের লেখাই সত্য। মূলত এইসব বিতর্কিত গালগল্পকে ইতিহাসের মোড়কে জড়িয়ে বিভ্রান্তির জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে পিনাকীকে নিয়ে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, পিনাকী একসময় বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর ১৮টি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয়ভাবে আলোচনা করেন। ফেসবুকে তার ১০ লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে। তিনি প্রায়ই বাংলাদেশের ইতিহাস, চলমান রাজনীতি, মানবাধিকার বিষয়াবলী এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ইস্যু নিয়ে লেখালেখি ও ভিডিও বানিয়ে থাকেন।
এই পার্শ্ববর্তী দেশ মানে ভারত। আবার ভারত বাংলাদেশের কিছু ইউটিউবার অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট আবার দাবী করছেন পিনাকী মূলত পাকিস্তানের টাকায় এই ভারত বিরোধিতা করছেন। আরেক অংশ বলছে পিনাকী মূলত চায়না বাম। তাই ভারত বিরোধিতার জন্য চীন তাকে দিয়ে এসব করায়। এই পাল্টাপাল্টি চলছে।
দেশত্যাগের আগে পিনাকী পপুলারের চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করতেন পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসে। ২০০৮ সালে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য পপুলারের মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ জালিয়াতি করে কয়েক কোটি টাকা লুটপাট করে। তার এই জালিয়াতির সাথে যুক্ত ছিল বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়োগ পাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। পিনাকীর এই অপকর্ম ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল।
এই সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি তার ব্লগে-ফেসবুকে বহুবার দায় স্বীকার করে লিখেন, হ্যাঁ, আমি পপুলার ফার্মাকে সেইসময় এই কেলেঙ্কারি থেকে উদ্ধার করেছিলাম। আমি একা নই আমার সাথে আরও কয়েকজন দক্ষ পেশাদার কাজ করেছিলো। আমি যেহেতু সামনে থেকে উদ্ধার কর্মের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, তাই আমার নিজের গায়ে এই কেলেঙ্কারির দাগ লাগানোর ঝুঁকি নিয়েই পপুলারকে উদ্ধার করেছিলাম। কোন দক্ষতাও নাই। এই ঘটনার ব্যাখ্যা আমি ফেসবুকে লিখেই দিয়েছি।
এই কথা আমি কখনো অস্বীকার করিনি যে পপুলার ফার্মার কালাজ্বরের ওষুধ নিয়ে কেলেঙ্কারি হয়নি। আমি এটাও অস্বীকার করিনি যে সেই সময়ে আমি পপুলার ফার্মার চিফ অপারেটিং অফিসার ছিলাম (সিইও নয়)। আমি মার্কেটিং, সেলস, ডিস্ট্রিবিউশন ও আইটি এই বিভাগগুলোর দায়িত্বে ছিলাম। আমি ফার্মাসিস্ট নই, আমি কখনোই ম্যানুফ্যাকচারিং-এ কাজ করিনি, আমার সেই ক্ষেত্রে কোন দক্ষতাও নাই। তিনি বারবার এর ব্যক্তি দায় অস্বীকার করে পপুলার কে উদ্ধার করার দায় স্বীকার করেন । আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপড়ে পড়েছে ধরনের একটা রোমান্টিক অবস্থা।
তারপর এক নারী-কেলেঙ্কারিতে তার ব্যক্তি চরিত্র ও বিদেশী চর হিসাবে কাজ করার ইমেইল ফাঁস হলে সেখানে বিভিন্ন সংস্থার সাথে তার যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেন । প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ব্যক্তি জীবন নিয়ে আমি কখনো আলোচনা করিনা। শুধুমাত্র প্রসঙ্গক্রমে এখানে নিয়ে আসতে হয়েছে।
আজকের এই লেখা আসলে পিনাকী মূল বিষয় ছিল না, মূল বিষয় ছিল বিএনপি। ভারতের লোকসভা নির্বাচন থেকে কি বিএনপি শিক্ষা গ্রহণ করবে?কীভাবে , কংগ্রেসের পুনরুত্থান হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৯–এর নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছিল, কংগ্রেস আর কোনো দিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এবারের নির্বাচনের পর বুথফেরত জরিপগুলোতেও দেখা যাচ্ছিল, বিজেপির জয়জয়কার—কংগ্রেস ‘নেই বললেই চলে’। সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস , রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে বিগত এক দশক ধরেই নানা আলোচনা সমালোচন ছিল, সেই অবস্থান থেকে , জোটের বিশ্বাস অবিশ্বাস পিছনে ফেলে পৃথিবীর বৃহত্তম একটি দেশকে, রাহুল গান্ধী নাড়িয়ে দিয়ে ডুবে যাওয়া কংগ্রেস কে তীরে নিয়ে এসেছেন।
পিনাকী ভারতের ধ্রুব রাঠি না। তিনি যে ভাষায়, যে ধরণের গুজব, কিংবা অর্ধ সত্য অর্ধমিথ্যা মিশিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি জন্ম দিতে চাইছেন , তা ধ্রুব করেন নি। গত বছর টাইম ম্যাগাজিনের ‘নেক্সট জেনারেশন লিডারস ২০২৩’ এর তালিকায় নাম উঠেছিলো ২৯ বছর বয়সী ভারতীয় ইউটিউবার ধ্রুব রাঠির নাম। তিনি তার ‘ফ্যাক্ট-চেকিং’ কাজের জন্য এবং তিনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয়ের ওপর কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েতাই বিএনপিকে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই অগ্রসর হতে হবে। শুধুমাত্র ভারত বয়কট আন্দোলন করে, প্রতিবেশী দেশের সাথে বিরূপ সম্পর্ক জিইয়ে রেখে যদি বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে যাবে বলে ভেবে থাকে তা একান্তই হাস্যকর। পিনাকী সেই তত্ত্বই হয়ত বিএনপি কর্মীদের ভারত বিরোধী হতে প্ররোচিত করছেন। এই তত্ত্ব কি আদৌ কাজ করবে? পিনাকীকে তাত্ত্বিক গুরু হিসাবে গ্রহণ করে আসলে বিএনপি ডুববে ছাড়া ভাসবে বলে মনে হয় না।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য