আজ মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Advertise

যেভাবে ইউনুসের সংগে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করবেন

মাসকাওয়াথ আহসান  

হাসিনা যুগের অবসান ঘটেছে। ইউনুস যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। কাজেই অতি দ্রুত আপনাকে প্রমাণ করতে হবে ইউনুসের সঙ্গে আপনার পূর্ব পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। এখানে কতগুলো মডেল পোস্ট ড্রাফট করা হলো, যা থেকে পছন্দের গল্পটি ফেসবুকে পোস্ট করে; আপনিও হয়ে পড়তে পারেন ক্ষমতাবান।

প্রথম গল্প:
জোবরা গ্রামে এক ভদ্রলোককে দেখেছিলাম রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করতেন। এ একেবারেই নতুন ধরনের ব্যাপার। কোন রকম গ্যারান্টি না রেখে ঋণ প্রদান। আমি ভেবেছিলাম, তাই কি হয়! গ্রামের মহিলারা ঋণের টাকা খেয়ে ফেলবে; ঋণ শোধ তো দূরে থাক। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রহিমার মা, আমেনার খালা, ফাতেমার ফুপু কেউ গরু পুষে, কেউ মুড়ি ভেজে, কেউ বা ছাগল চরিয়ে কুঁড়েঘরের জায়গায় টিনের ঘর তুলে ফেললো। বদলে গেলো জোবরা গ্রাম; দেখে মনে হতে লাগলো এ বুঝি সুইটজারল্যান্ডের গ্রাম। আমি একদিন ভয়ে ভয়ে ঐ ঋণদাতা ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে তিনি ক্ষুদ্র ঋণ গবেষণা করছেন। আমি তাঁকে বললাম, স্যার আমি কি আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারি! উনি হেসে বললেন, পায়ে কেন বুকে এসো।

দ্বিতীয় গল্প:
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিসিএস পরীক্ষা দেবো না। ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করবো। একবার ভয়ে ভয়ে মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে গিয়ে ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। এক ভদ্রলোক বললেন, উনার অফিসের কোন দরজা রাখেননি উনি, যান দেখা করুন। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম উনার সামনে। উনি বললেন, দাঁড়িয়ে কেন বোসো; কী চাকরি চাই? আমি তো ইউনিভার্সিটির চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করেছি। তরুণ ছেলে চাকরি খুঁজবে কেন? নিজে কিছু করো। মানুষের মাঝে যে অসীম ক্ষমতা রয়েছে; তা সে নিজেই জানে না। স্যারের দোয়া নিয়ে ফিরতেই আমার জীবন বদলে গেলো। নিজেই গড়ে তুললাম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, চলো সাইকেলে চড়ি। আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কখনো সাইকেলে চড়তে হয়নি। খোদা আমাকে গাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু এবার ভাবছি আর গাড়ি নয়, এবার পায়ে হাঁটবো, ইউনুস স্যারের পিছে পিছে। এই দেশকে আমরা পৌঁছে দেবো সুইটজারল্যান্ডে।

তৃতীয় গল্প:
তখন প্রথম আলোতে কনট্রিবিউটরের কাজ করি। হঠাত খবর এলো অধ্যাপক ইউনুস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আমার বুকের ছাতি ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হয়ে গেলো। এয়ারপোর্টে দৌড়ালাম স্যারকে ফুল দিয়ে বরণ করতে। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটাতে ছিটাতে আনন্দে উড়ছিলাম যেন। এই মানুষটি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি এতো মানুষের মধ্যে থেকে আমাকে ঠিকই চিনতে পেরে বললেন, এই ছেলে তুমি আমাকে নিয়ে ফিচার লিখেছিলে না, সফল যারা কেমন তারা! আমার অফিসেও তো এসেছিলে। এই নোবেল পুরস্কারের ভাগীদার তুমিও। আমার মাথা ভনভন করে ঘুরছিলো। এতো মানুষের মধ্যে তিনি আমাকে মনে রেখেছিলেন। জিনিয়াসেরা এমনই হন; তারা একবার কারো সঙ্গে দেখা হলে আর ভুলেন না। আজ আমার কি যে আনন্দ! আমি জানি, ইউনুসের হাত ধরে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

চতুর্থ গল্প:
ইউনুসের মতো গুণী মানুষকে টুপ করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন মুখরা বুবু। আঁচলের তলায় দেশ ডাকাতির দরবেশ ও এস আলম পুষে, বেনজির ও আজিজদের দুর্নীতির লাইসেন্স দিয়ে চোর দমন কমিশনকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আলোর মানুষ ইউনুসের বিরুদ্ধে। এই মানুষটিকে এতো অসম্মান করেছে সহমত ভাইয়েরা যে কি বলবো। আমি মন খারাপ নিয়ে দেশ ছেড়েছিলাম। ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে নেমে একটা ট্যাক্সি খুঁজছিলাম। ট্যাক্সিতে উঠতেই চালক জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো! আমি বললাম বাংলাদেশ; তারপর বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম দেশটা কোথায়! চালক আমাকে থামিয়ে বললেন, ও তুমি ইউনুসের দেশের লোক। যাও তোমার কাছ থেকে ট্যাক্সিভাড়াই নেবো না। চোখ আমার ছল ছল করছিলো। কানের কাছে বাজছিলো, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

পঞ্চম গল্প:
আমি তখন এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছি। সান্টিয়াগোর মেয়ে নাটালিকে ভালো লেগে গেলো। কিন্তু কিছুতেই পটাতে পারছিলাম না ওকে। এরমধ্যে একদিন ব্যাংকার্স টু দ্য পুওর ড. ইউনুস আমাদের ক্যাম্পাসে লেকচার দিতে এলেন। আমি নাটালিকে অনুরোধ করলাম উনার স্পিচ শুনতে যেতে। একঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলাম। উনি বললেন, মানুষ তো মানি মেকিং মেশিন নয়। সে রক্তমাংসের মানুষ। সে মুনাফালোভী ব্যবসা কেন করবে! সে করবে সামাজিক ব্যবসা। তোমাদের মতো তরুণরাই পারে এই পৃথিবীতে জিরো পভার্টি, জিরো ভায়োলেন্স, জিরো এমিশনে পোঁছে দিতে। তোমরাই গড়ে তুলতে পারো স্বপ্নের পৃথিবী। লেকচার শেষে নাটালিকে নিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। উনি অনেক স্নেহ করলেন। তারপর নাটালিকে বললেন, তুমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশ ঘুরে যেও; তোমাকে শক্তি দই খাওয়াবো। কনসেপ্টটা হচ্ছে দৈ যে প্যাকেটে রাখা, ওটাও খেয়ে ফেলতে হয়, তাতে পুষ্টি মেলে। নাটালি এতো মুগ্ধ হলো যে ফেরার পথে আমার হাত ধরে রইলো। ওর এপার্টমেন্টের নিচে এসে ওকে বিদায় জানাতেই বললো, কি ওপরে আসবে না! একটু কফি খেয়ে যাও প্লিজ!

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৪ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৯ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪২ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২১ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন