আজ শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

Advertise

ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কি অনিবার্য?

জুয়েল রাজ  

বাংলাদেশে আওয়ামীবিরোধী রাজনীতি ও ভারতবিরোধিতা সমান্তরাল ভাবে চলে। এটা নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৬৯ সালের আগরতলা মামলা থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, সব সময়ই এই প্রচারণা হয়েছে। এইসব ভারতের ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে; কিন্তু দীর্ঘ ৫৪ বছরেও ভারত আর বাংলাদেশ দখল নিতে পারেনি। বাংলাদেশিরা ৫৪ বছর ধরেই সীমান্তে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে! লাখ লাখ সেনা শহিদ হয়েছে! কোটি কোটি মানুষ প্রাণ দিয়েছে ভারত ঠেকাতে!

২০২৪-এর ৫ আগস্টের তথাকথিত কোটা আন্দোলনে ও এই ভারতবিরোধী ইস্যু খুব জোরালো ছিল। পরবর্তী সময়েও দিল্লি না ঢাকা-এই স্লোগান ব্যাপক ভাবে উচ্চারিত হতে দেখি আমরা। এবং এর প্রেক্ষাপট ও দীর্ঘদিন ধরে নানা বয়ানের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের করা নানা চুক্তি নিয়ে মনগড়া বয়ান, বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হস্তক্ষেপ। সেনাবাহিনী-সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি নানা সেক্টরে ২৬ লক্ষ ভারতীয়র চাকরি করে, এইসব বয়ান দিনের পর দিন তৈরি করা হয়েছে। এই বয়ান ১৯৭১ সাল থেকে যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী করে আসছিল সেই একই গোষ্ঠী এই একই গল্প চালিয়ে গেছে দশকের পর দশক। এবং ভারত সরকারের সাথে গোলামি চুক্তি করে দেশ বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে ও পর্দা ফাটিয়ে উচ্চারিত হয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনুস সরকারকে গত চৌদ্দ মাসে ভারতের সাথে একটা চুক্তি বাতিল হতে দেখিনি। এই সর্বশেষ দেখলাম ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে ভারতের সাথে করা ১০টা চুক্তি নিয়ে কথা হচ্ছে এবং কিছু নবায়ন ও রিভিউ করা হবে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। তিনি বলেন, 'শান্তিপূর্ণভাবে যাতে দুর্গাপূজা না হয়, একটি মহল সেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এই মহলই খাগড়াছড়িতে এসব করছে। এই ঘটনা ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে ঘটছে। রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিভাবক যখন এই ধরণের বক্তব্য দেন বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, ধরে নিতে হবে তার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে। টেলিভিশন টকশো বা রাজনৈতিক বক্তব্যে এই জাতীয় বক্তব্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেই একই বক্তব্য রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তির বলা মানে এর একটি ভিত্তি আছে। আর হিসাবটা মিলে যায় যখন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, অনেকে বলে জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বলেছি দোয়া করতেছি এরা যেন ঢুকে পড়ে। তখন আমাদের ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (কোবা) উদ্যোগে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই কথা বলেছিলেন। এ সময় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে তিনি দাবি করেন, ভারত ঢুকলেই আমাদের সেই বদনাম যাবে, যা ১৯৭১ সালে চাপানো হয়েছিল। তখন আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাবো।

তিনি জানান, যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুবকদের অর্ধেক গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেবে, বাকিরা বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। রাসূল (সা.)-এর গাজওয়া সম্পর্কিত হাদিসের বাস্তবায়ন তখন মহাপরিকল্পনা হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও অন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করেন। তার দাবি, এরা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ করবে না। তখন সংগঠিত শক্তি আমরাই হব, আমরা হবো খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা।

পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক–ই–তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেনের (২২) পরিবার জানত তিনি দুবাইপ্রবাসী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ইমারাত এ ইসলামিয়ার (তালেবান সরকার) আমন্ত্রণে আফগানিস্তান সফরে গেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সাতজন আলেম। সফরে আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী, শীর্ষ আলেম ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করবেন তারা। জামায়াত আমেরিকায় দেয়া বক্তব্য এবং তাদের অনুসারী দলীয় কর্মকাণ্ড আমাদের একটা ধারণা দেয় একটা যুদ্ধ বা সংঘাত চাইছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি। যাকে বলে যুদ্ধকে আমন্ত্রণ করে বরণ করে নেয়া।

এখন ভারত এই উসকানির ফাঁদে পা দেয় কী না সেটা ও দেখার বিষয়। ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি পুরো বিশ্বরাজনীতিকে যেভাবে ঝাঁকি দিয়েছে, তা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে চীন ভারতের বরফ গলা, আফগানিস্তানের সাথে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সবকিছুই এক নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। বিশ্ব মোড়লদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান বাংলাদেশ এখন গলার মালা। জাহাজ, বিমান, ভরে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানি রুপি আসছে! বাংলাদেশে কলকারখানা গড়ে উঠছে! বাংলাদেশ পাকিস্তান ভিসা ফ্রি যাতায়াতের দুয়ার খোলে দিচ্ছে, এর মাঝে কূটনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা। ইউনুস সরকার ও তার সহযোগীদের মিত্র হয়ে এই খেলায় নতুন করে যোগ দিয়েছে তুরস্ক যা এখন ওপেন সিক্রেট।

আফগান যুদ্ধ পরিবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়া বা আমাদের অঞ্চলটি শান্ত আছে, কোন যুদ্ধ বিগ্রহ নেই। তাই জোর করে হলেও উসকে দিয়েও যাতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মত একটি পাতানো যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া যায়, সেই চেষ্টাই চলছে।

নতুন বন্দোবস্ত, সংস্কারের নামে বাংলাদেশ কি এই যুদ্ধভার বইতে পারবে?

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭২ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৫২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৮ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১১ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. নাদিম মাহমুদ ৩৭ ড. মাহরুফ চৌধুরী ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৫ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৪ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ৩৩ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ