আজ শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

Advertise

চাকুরি নয়, রাষ্ট্র খাওয়ার লাইসেন্স!

রাজু আহমেদ  

কারো কারো কাছে চাকুরি মানে রাষ্ট্র খেয়ে দেওয়ার লাইসেন্স! কারো কারো মধ্যে সেবার মানসিকতা খুব সামান্যই। চাকুরিজীবনেই দেশের জমি-জিরাত আর বিদেশে পাহাড়-টিলা কিনে একাকার করে ফেলেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফুলে-ফেঁপে ওঠে অন্যের হক দখল করে। যারা জীবনের উদ্দেশ্যে হিসেবে কেবল সম্পদ অর্জন এবং জীবিকাকেই নির্ধারণ করেন- তাদের সময়ও কাটে। তবে জীবনের লক্ষ্য এসবের চেয়ে আরও অনেক বড়ো। সেই যাত্রায় জীবিকা, স্বাচ্ছন্দ্য কেবল উপলক্ষ মাত্র- এই মহাসত্যের মুখোমুখি হতে মানুষেরা নারাজ।

আজকাল পথেঘাটে বিকল্প আয় করতে পারার মানুষই বেশি! মানুষ হিসেবে যে নিদেন লজ্জাটুকুও থাকা উচিত তাও অনুপস্থিতি চারদিকে। ডান হাতে, বাম হাতে আয় করার যে প্রবণতা তা এই সমাজকে কোনখানে নিয়ে যাচ্ছে- তা বোধহয় অসুস্থতার আলামতে অনেকটাই উন্মোচিত। সামাজিকতা এখন অর্থ-বৈষম্যের দাবানলে পুড়ছে।

চাকুরিতে এমন কোনো আলাদিনের চেরাগ নাই যাতে শত কোটি টাকার মালিক, জমিদারি অর্জন করার সুযোগ আছে। চাকুরির মধ্যমাঠেই যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, সম্পদের পাহাড় গড়তে পারে তাদেরকে রাষ্ট্রের প্রশ্ন করা উচিত। অসম্মানিত করা উচিত প্রথম সুযোগেই। ভয় ধরানো উচিত দুর্নীতিবাজদের মনে।

চাকুরিকে জমিদারি ভাবা জমিদারদের সমাজের ঘিরে ধরে কৈফিয়ত আদায় করা দরকার। দেশে এমন কোনো সরকারি চাকুরি নাই যেখানে সারাজীবনে বৈধভাবে বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে পাঁচ-সাত কোটি টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ আছে। অথচ রাজ্যের অনেকেই সাম্রাজ্যের অধিপতি হচ্ছেন। অবৈধ আয়ে বিস্তার সম্পদের মালিক হচ্ছেন। কোনো কোনো অফিসের পিয়নও ভূমিপুত্র।

বেতনের সাথে বাজারদরের প্রতিযোগিতা রোজ সামর্থ্যকে ছাপিয়ে যায়। মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকায় দু-চার জনের সম্পদের যে ফিরিস্তি প্রকাশ পায় তাতে রাষ্ট্রের আঁতকে ওঠা উচিত। দেশের টাকায় শুধু বিদেশ ফুলেফেঁপে উঠছে- এটাই শেষ সত্য নয় বরং দেশের মধ্যে গড়ে উঠছে ধনকুবেরদের গোপন আস্তানা। নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ছে সুস্থ সামাজিকতা। বিকল্প হাতে আয়ে উপায়হীনদের ভাবা হচ্ছে বোকা। যে সমাজে অসৎদের বাঁকা চোখে দেখা উচিত ছিল সেই সমাজে সৎদেরকে আঁতেল বলার মত দুঃসাহসিকতা দেখানো হচ্ছে। কারো কারো কাছে দুর্নীতির অভিযোগ, মামলাও ডাল-ভাত। সম্পদ অর্জনের এই যুদ্ধে কেউ কেউ অন্ধ। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন তাদের কাছে গৌণ।

রাজনীতি থেকে সমাজসেবী, ব্যবসায়ী থেকে ভিখারি, চাকুরিজীবী থেকে সুদখোর- অনেকের জীবনের লক্ষ্যই টাকা। সম্পদ দিয়ে আভিজাত্য এবং গর্ব ফলাতে চায়। দ্রুত ধনী হওয়ার যে প্রবণতা তা মানুষকে মনুষ্যত্বের ট্র্যাক থেকে রোজ ছিটকে দিচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে সামাজিক অবিচার ও নৈরাজ্য। অথচ যে সুখ নিশ্চিত করার জন্য মানুষ সম্পদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে তা তথা কাঙ্ক্ষিত সুখ নাগালের বাইরে। ঘরে কিংবা পরে- সুখ আজ ভিনদেশি! অবৈধ অর্জন স্বস্তি কিংবা প্রশান্তি নিশ্চিত করে না বরং দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি করে- এই সহজ সত্য মানতে যারা নারাজ তাদের মানসিক ব্যাধি এবং সংসারের দুর্বিপাক দেখে সমাজের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

স্রোতের বিপরীতেও কিছু মানুষ আছে। ভালো মানুষদের দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য মাঝে মাঝে ঘটে। যাদের হাতে সুযোগ থাকার পরেও বিকল্প আয়ের দিকে হাত বাড়ায়নি। অবৈধকে যারা সারাজীবন অন্যায় হিসেবেই জেনেছে তাদের ঘরে অভাবের ছুটি হয়নি বটে কিন্তু মনের প্রশান্তি কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। সততার যে সুগন্ধি তা মানুষের মনে তাদের জন্য সম্মানের জন্ম দিয়েছে।

অফিসগুলোতে সৎ মানুষ আছে বলে মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা এখনো শ্রেষ্ঠগুণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে শঙ্কার কথা, সমাজ থেকে সৎ মানুষের উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে কমছে। ভালো মানুষ এখন প্রায় সংখ্যালঘু। সন্তানদের আচরণ দেখেও বাবা-মায়ের সততা মাপা যায়। পোশাকের মলিনতার চেয়ে মনের অপবিত্রতা দূর করা সহজ। অথচ কেউ কেউ বারবার ভুল করে এবং ইচ্ছা করেই করে। প্রথম সুযোগেই অমানুষ হয়ে ওঠতে দ্বিতীয়বার ভাবে না।

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক। ইমেইল: raju69alive@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭২ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৫২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৮ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১১ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. নাদিম মাহমুদ ৩৭ ড. মাহরুফ চৌধুরী ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৫ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৪ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ৩৩ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ