আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জঙ্গি শঙ্কায় ক্রিকেট কূটনীতি

পুলক ঘটক  

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের জঙ্গি শঙ্কা নিয়ে টিভি আলোচনায় কিছু আলোচক বিষয়টিকে খেলো করে ফেলছেন। ফেসবুকেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। "অস্ট্রেলিয়া দল ভয় পেয়েছে", "জঙ্গিবাদের অজুহাত দিচ্ছে"...... --- এজাতীয় কথায় বিষয়টির সিরিয়াসনেস কে লঘু করা হচ্ছে। এসব কথার মানে কি? অস্ট্রেলীয় দল খুব দুর্বল, তারা শক্তিশালী কোন দেশের সাথে ক্রিকেট খেলবেন? এই ধরণের হাস্যকর কথা খেলোয়াড় সুলভ নয়।

বিষয়টি রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট। অস্ট্রেলিয়া কেন হঠাত নিরাপত্তা প্রশ্ন দাড় করাল? যদি তারা অকারণে এটা করে থাকে তবে তা ন্যায় সঙ্গত হয়নি। এর পেছনে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাল আছে। এই চালবাজি কূটনৈতিক পন্থায় শক্তভাবে মোকাবেলা করা উচিৎ।

কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হতে পারে -এমন কোনও আভ্যন্তরীণ বা বহির্বিষয় আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।

আমার ধারণা, বর্তমান অবস্থায় যেকোনো বিদেশি দলকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশ সরকার রাখে এবং সে সদিচ্ছা সরকারের রয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষকে দেশের ভেতর নিরাপত্তা দিতে সরকারের ব্যর্থতা আছে।

ভিন্নমতের কারণে দেশের ভেতর একশ্রেণীর মানুষ তরুণ লেখক-বুদ্ধিজীবীদের চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারছে। আমরা অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতেই পারি। কিন্তু দেশের নাগরিকরা যখন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গিয়ে সেখানে নিরাপত্তা হেফাজত চায়, তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সংশয় তৈরি হওয়া একেবারে অস্বাভাবিক নয়। শুধু কথা দিয়ে নয়। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি উন্নত করার মাধ্যমেই বহির্বিশ্বের সকল সংশয় নিরসন করতে হবে। বাংলাদেশকে সকলের বাসযোগ্য করতে হবে।

ইরানে "ইসলামী বিপ্লবের" পর সে দেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা যেভাবে দেশ ছেড়েছে, ব্লগার হত্যার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সেভাবেই দেশ ছাড়ছেন লেখকরা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিতরণ অব্যাহত আছে। সামাজিক নিপীড়ন ছাড়াও আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগের দৃষ্টান্তে সংখ্যালঘুদের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে। মন্দিরের সামনে গরু জবাইএর দৃশ্য ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হিন্দুদের ঘরে ঘরে আলোচনা হচ্ছে "এদেশে আর থাকা যাবেনা।" দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অচিরেই তা ২/১ শতাংশের পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশংকা হচ্ছে। দেশে সামাজিক বৈচিত্র্যের কোনও জায়গা থাকবে বলে মনে হচ্ছেনা।

ব্লগার হত্যার মহোত্সবকে যারা "নাস্তিক মারার উৎসব হিসেবে উপভোগ করছেন তারা যেন ২১ আগস্ট ভুলে না যান। উদীচী, ছায়ানট, সিপিবি, আওয়ামীলীগ - কেউ কিন্তু রেহাই পায়নি জঙ্গি হামলা থেকে। ময়মনসিংহের সিনেমা হল, খ্রিষ্টান গির্জা, আহমদিয়া মসজিদ, হযরত শাহ জালালের মাজার....... কি কারণে জঙ্গি বোমা হামলায় রক্তাক্ত হয়েছিল? এগুলো কি নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠান? ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শাহ এএমএস কিবরিয়া, বদরুদ্দিন কামরান, শেখ হাসিনা - এরা কেন আক্রান্ত হন? এরা কি নাস্তিক ব্লগার? এরা কি ইসলামের সমালোচনা করেন? ভাই সকল, মানুষের প্রতি সংবেদনশীল হোন। দেশটার দিকে তাকান। কোথায় যাচ্ছে এর ভবিষ্যৎ?

এই মুহূর্তে দেশের ভেতর কিছু মানুষ নিরাপদ, কিছু মানুষ বিপন্ন। যে পথে এগোচ্ছে, তাতে আগামীতে গোটা দেশ বিপন্ন হবে। ইসলামী মৌলবাদ বাইরের শক্তির মদদ পেলে '৭১ এর মত (বর্তমান সময়ের সিরিয়ার মত) শরণার্থী সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে আমার আশংকা।

আমি আবারও বলছি, বাংলাদেশের মাটিতে কোনও বিদেশী ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা শঙ্কা অাছে বলে অামার মনে হয়না। তবে দেশের ভেতরের শঙ্কা বিদেশ অবধি সংক্রমিত হচ্ছ। খেলা নিয়ে হেলাফেলা নয়। আমার ভয় দেশের সেক্যুলার চিন্তার মানুষ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিয়ে। আমার উৎকণ্ঠা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

আমরা পাকিস্তানে খেলোয়াড় পাঠাতে ভয় পাই। অন্যান্য দেশও ভয় পায়। সেরকম অবস্থা যেন আমাদের না হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের পথে হাঁটছে। গতিমুখ বদলাতে হবে।

পুলক ঘটক, সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ