প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
সাব্বির খান | ১৭ অক্টোবর, ২০১৫
শোনা যাচ্ছে, বিএনপির চেয়ারপার্সনের পদ থেকে বেগম খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যগত কারণে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন তাঁরই পুত্র তারেক রহমান। এশিয়ায় আমাদের অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চায় যে বিষয়টি দেখা যায় তা হলো, একটি দলের নেতা বা নেত্রী মৃত্যুর আগমূহুর্ত পর্যন্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান না বা দাড়াতে চাননা। তাহলে বিএনপিতে এবং খালেদা জিয়ার এমন কি হলো যে, উনি শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন?
আমরা জানি, বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমান বহুধা ধারার মামলা এবং অভিযোগ মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। অনেক দেনদরবার এবং প্রচেষ্টা চালিয়েও তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বা সুযোগ পাচ্ছেন না। সেই সাথে তারেক রহমানের জঙ্গি-সম্পৃক্ততার কথাও আমরা বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনামে দেখেছি। এ অবস্থায় প্রবাসী তারেক রহমান যদি ভগ্নপ্রায় বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে অধিষ্ঠিত হন, তাহলে তো বিএনপির জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ একটি দলের প্রধান যিনি প্রথমত দেশে থাকেন না, দ্বিতীয়ত. তিনি একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামী, তৃতীয়ত. আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে,-তিনি যেই দলের প্রধান হবেন, সেই দলের আমূল ধ্বংস করতে কোন বিরোধীদলের প্রয়োজন হবে না, এটাই স্বাভাবিক। তারপরেও এই হঠকারী সিদ্ধান্ত কেন?
আমার বিশ্লেষণ এবং ধারনায়, এই প্রক্রিয়া মূলত তারেক রহমানকে বাংলাদেশে প্রবেশের যৌক্তিক সুযোগ, বর্তমানের চেয়ে শতগুণ বেশি বাড়িয়ে দেবে। ভিন্ন কথায়, সরকারকে হয়ত বাধ্য করা হবে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে। নীচের আটটি বিষয় থেকে হয়ত আমরা কিছুটা বোঝার চেষ্টা করে দেখতে পারি:
১) আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে সরাসরি আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের সরাসরি প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে, যা বিএনপির চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ছাড়া সম্ভব নয় বা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তারেকবিহীন নির্বাচন বয়কটের যথেষ্ট যৌক্তিক ‘মওকা’ তখন বিএনপির হাতে থাকবে, যা সরকারকে প্রচণ্ড চাপের মুখে ফেলবে।
২) দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান সরকারের ছায়া প্রধানমন্ত্রীর মত সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সেক্ষেত্রে তারেকের বিদেশ যাপন জাতিয় বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেবেন না, যা সরকারকে প্রচণ্ড মাত্রায় বিব্রত করবে।
৩) বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বহুদিন ধরেই বলে আসছে। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রাজনৈতিক ময়দানে তাঁরা দেখতে চাইবেন। কিন্তু বিএনপির সোজা-সাপ্টা কথা, আমাদের দলের চেয়ারপার্সন ছাড়া তা কিভাবে সম্ভব? স্বভাবতই আওয়ামী লীগ এবং সরকার তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র চাপের নীচে থাকবে।
৪) সরকারের দুই আমলে আমরা দেখেছি, বিএনপির চেয়ারপার্সন ছাড়া সব ধরনের শীর্ষস্থানীয় নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে সরকার দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা স্বত্বেও সরকারকে আপোষের পথই বেছে নিয়ে তাঁকে মুক্ত থাকতে দিতে বাধ্য হয়েছে। ঠিক একই ভাবে আদালতের রায় বিদ্যমান থাকার পরেও পারবে কি সরকার তারেক রহমানকে কারাবন্দী করে রাখতে? খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরেও কিন্তু বাস্তবে আমরা তার প্রয়োগ দেখিনি। তারেকের বেলায়ও তা দেখানো সরকারের পক্ষে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বলে ধারনা করা যেতে পারে।
৫) সংসদে না থাকলেও ভোটের হিসেবে বিএনপি এখনো হয়ত বৃহৎ দলগুলোর একটা। সেই দলের চেয়ারপার্সনকে কারারুদ্ধ করলে আবেগী বাংলাদেশীরা কি বিষয়টি ভালভাবে নেবে? আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা মেনে নেবে? ভুলে গেলে চলবে না যে, এখানে তারেক রহমান কোন ফ্যাক্টর নয়, বিএনপির চেয়ারপার্সনের ‘চেয়ার’-টির কথা বলছি, যা একাধারে একটি ইন্সটিটিউশন এবং ফ্যাক্টর।
৬) আগামী নির্বাচনে তারেক রহমান স্বভাবতই বিএনপির প্রধান এবং ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইবেন, যা থেকে তাঁকে বাইরে রাখলে আগামী সরকারের লেজিটিমিসি নিয়ে গতবারের চেয়ে আরো বেশি হৈচৈ করার ক্ষেত্র তৈরি হবে। উন্নয়নমুখী নীতি অনুসরণ করা সরকারের তখন চতুর্মুখী চাপ সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে কি?
৭) অনেকে ভাবতে পারেন, নির্বাচন হতে এখনো অনেক দেরি। আমি নির্বাচন নিয়ে এতো কথা বলছি কেন! আমরা জানি, কোন দণ্ডপ্রাপ্ত মামলার আসামী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অনুমতি পায় না। সেক্ষেত্রে তারেক রহমান যদি নির্বাচন করার জন্য দেশে প্রবেশ করতে চান, তাহলে তাঁকে অবশ্যই মামলাহীন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে এবং তা বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের মামলা-মোকাদ্দমাজনিত ভজঘটগুলো পরিষ্কার করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে বলে বিএনপি মনে করতে পারে। সুতরাং সেমতে তারেককে চেয়ারপার্সন বানানোর এখনই মুখ্য সময় বলে মনে করছে বিএনপি এবং তার মিত্রদলগুলো।
৮) সজিব ওয়াজেদ জয় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। পঞ্চায়েতি শালিসীর সুরে তখন অবধারিত রব উঠবে এই বলে যে, ‘জয় সাহেব যদি নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে তারেক সাহেব নয় কেন?’ এই সুর তখন তরঙ্গে পাল তুলে পাড়ি জমাবে সুদুর পশ্চিমেও।
বিএনপির চিন্তায় যদি উপরের পয়েন্টগুলো থেকে থাকে এবং সেকারণেই খালেদা সরে গিয়ে তারেককে বিএনপির চেয়ারপার্সন করা হয়, তাহলে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, নির্বাচন পূর্ব আগামী বছরগুলো বাংলাদেশ সরকারের জন্য হবে মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং স্বরূপ। এছাড়াও হেফাজত, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এবং জামায়াতের বিএনপিকে পরোক্ষ সহযোগিতার বিষয়টিও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় না, বিশেষ করে আন্দোলনে জামায়াতের সক্রিয় অংশগ্রহণ, যা সরকারের জন্য হবে পশ্চাতদেশে বিষ ফোড়ার মতই প্রচণ্ড মাত্রায় অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক।
এব্যাপারে বিজ্ঞ সরকার প্রধান এবং আওয়ামী লীগের নিশ্চয়ই আগাম ভাবনা মাথায় আছে বলেই ধারণা করা যেতে পারে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য