আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

পাশে আছি সুধাংশু!

ফরিদ আহমেদ  

লক্ষ্মী পুজোয় আতসবাজি ফুটেছে। এটা নিদারুণ এক ‘অপরাধ’ আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে। এই আতসবাজির কারণে কারো কারো ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে অতি মারাত্মকভাবে। অনুভূতিতে আঘাত দেবার এই গুরুতর ‘অপরাধে’ ফেনিতে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার দলীয় কিছু ক্যাডাররা।

ইকবাল নামের এক সশস্ত্র ক্যাডারের নেতৃত্বে সাত-আট জনের একটা দল জেলেপাড়ায় গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে নিরীহ লোকজনদের। এদের চোটপাটে ঘাবড়ে গিয়ে নিজেদের ‘দোষ’ স্বীকার করে করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলো সেখানখার হিন্দু জনগোষ্ঠী। এই ক্ষমা চাওয়ায় আপাতত সন্তুষ্ট হয়ে ফিয়ে যায় ইকবাল ও তার বাহিনী। জেলে পাড়ার লোকজনও স্বস্তি পায় এই ভেবে যে, যাক, শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়ার উপর দিয়ে এই বিপদটা কেটে গিয়েছে।

কিন্তু, তাদের এই স্বস্তি স্থায়িত্ব পায় নি বেশিক্ষণ। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সরকার দলীয় আরেক অস্ত্রবাজ ক্যাডার সম্রাটকে সাথে করে আরো বড় এক বাহিনী নিয়ে জেলেপাড়ায় আসে ইকবাল। এসেই শুরু করে ঘরবাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট। এতে বাধা দিতে এলে সবাইকে মারধোরও করা শুরু করে তারা। স্বপন দাস নামে একজনের দোকানও লুটপাট করে তারা। স্বাভাবিকভাবেই এতে বাধা দেবার চেষ্টা করেছেন স্বপন দাস। রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন তার শেষ সম্বল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বপন দাসকেও পেটানো শুরু করে সশস্ত্র গুন্ডারা। স্বামীর উপর অত্যাচার সহ্য করতে পারেন নি তাঁর স্ত্রী তুলসী রানী দাস। ভদ্রমহিলা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তারপরেও স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তিনি। গুন্ডাদের এবং স্বামীর মাঝখানে ঢাল হয়ে দাঁড়ান তিনি। তাঁর এই দুঃসাহস এবং তাদের প্রতি বেয়াদবি সহ্য হয় নি ক্যাডারদের। মার দিলে নীরবে মার খাবি ব্যাটা মালাউনের বাচ্চারা, বাধা দেবার সাহস পাস কোথা থেকে? বেয়াদবির শাস্তি হিসাবে তারা তুলসী রানীর পেটে গায়ের জোরে উপর্যপুরি লাথি মারতে থাকে। কেউ কেউ লাঠিসোটা দিয়ে পেটাতেও থাকে তাঁকে। এরকম নির্মম আঘাতে, পাশবিক অত্যাচারে তুলসী রানীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রচুর পরিমাণে রক্ত হারান তিনি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত এক বাচ্চা প্রসব করেন। বাচ্চা বাঁচে নি, তিনি বেঁচেছেন। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে ফেনি সদর হাসপাতালে। অবশ্য নির্দয়ভাবে তাঁকে মারধোর করার কারণে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর অবস্থাও আশংকামুক্ত নয়।

অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নানা ধরনের হামলা চলে আসছে। আগে বিএনপি-জামাতের ক্যাডাররা এই সব অপকর্ম করতো, নির্যাতন করে সংখ্যালঘুদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে চাইতো। এর প্রতিকার হিসাবে তারা আওয়ামী লীগের দ্বারে গিয়ে আশ্রয় নিতো। আওয়ামী লীগ যথাসম্ভব আন্তরিকতার সাথে তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। কিন্তু, এখন আর সেই আগের জমানা নেই। বিএনপি-জামাত এখন ঢোঁড়া সাপ। তাদের আর সেরকম ক্ষমতা নেই সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চালানোর। বিএনপি-জামাতের সেই খালি জায়গা অবশ্য পড়ে থাকে নি। সেই শূন্যস্থান পূরণে এখন এগিয়ে এসেছে এক সময়কার ধর্মনিরপেক্ষ নীতির আদর্শধারী আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামাত যা করতো, সেটাই এখন তারা শুরু করেছে। তবে, আগের চেয়ে এখন অত্যাচার, নির্যাতনের মাত্রা ভিন্নতর হয়েছে। আগে ধর্ষণ হতো, হত্যা হতো, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হতো, এখন এর সঙ্গে নতুন করে সংযোগ হলো অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারা, যে শিশু এখনো পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখে নি, তাকে জন্মের আগেই পৈশাচিক নৃশংসতায় হত্যা করা। অত্যাচার যে মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে, এর থেকে আর ঠিক কতোটুকু বাড়ালে, কতোটুকু অধিক বর্বরতা দেখালে বাংলাদেশের সব হিন্দু নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাবে, সেই হিসাব করার সময় এসে গিয়েছে। যেভাবে সবকিছু এগোচ্ছে, তাতে অচিরেই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বা গয়েশ্বর রায়দের মতো দুই একজন সুবিধাভোগী হিন্দু ছাড়া আর কোনো হিন্দু পাওয়া যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।

আমাদের এক শ্রেণীর লোক সবসময়ই হিন্দুদের দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে থাকে। কিছু হলেই ইঙ্গিত করার চেষ্টা করে যে, হিন্দুদের এক পা ভারতেই থাকে। সময় সুযোগ পেলেই তারা দেশান্তরী হয়। হ্যাঁ, হিন্দুরা দেশ ছাড়ে, ভারতে যায়, পৃথিবীর আরো অনেক দেশেই যায়। তবে তার কতোটা স্বেচ্ছায় আর কতোটা নিতান্ত বাধ্য হয়ে, জান-প্রাণ, সম্পদ বাঁচাতে যায়, তার খতিয়ান নেবার সময় এসে গিয়েছে। একটা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক কেনো বাধ্য হবে দেশ ছেড়ে ভিনদেশে আশ্রয় নিতে, তার জবাব রাষ্ট্রকে খুঁজে বের করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে এর তথাকথিত সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের।

একজন হিন্দু কোন বিনিময় মূল্যের কারণে দেশ ছেড়ে ভারতে যাচ্ছেন সেটা বোঝার ক্ষমতাতো সংখ্যাগরিষ্ঠের থাকার কথা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠকে এর মধ্য দিয়ে যেতে হয় নি কখনো। তাদরকে প্রতিনিয়ত মালাউন বলে গালি শুনতে হয় না। জন্মের পরেই জানতে হয় না যে এই দেশে তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। তাদের জন্মগত ধর্মের কারণে দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয় না কখনো। কখনো উপলব্ধি হয় না যে, এই দেশের রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ে কোনো পদে যেতে গেলে তাদের ধর্ম বিশ্বাস বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রদায়িক কোনো উত্তেজনাকর মুহুর্তে জান হাতে রেখে দুরুদুরু বুকে ঘাতকদের পদধ্বণি শুনতে হয় না তাদের। মা কিংবা বোনকে ধর্ষণ করার জন্য বখাটেরা রাতের বেলা সারি বেঁধে এসে দাঁড়ায় না তাদের বাড়ির উঠোনে। এর কোনো কিছুই যখন তাদের সামলাতে হয় না, তখন কোন অধিকারে একজন মানুষের দেশত্যাগের বিনিময় মূল্য কম না বেশি তা ধার্য্য করে?

আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা পুরোটাই ঢাকা শহরে। এই বিশাল শহরে সাম্প্রদায়িকতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমার বন্ধুদের একটা বড় অংশ ছিল হিন্দু। এদের কারণে ক্যাম্পাস জীবনের একটা বিরাট সময় আমাকে কাটাতে হয়েছে জগন্নাথ হলে। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কারণে আমাকে চলে যেতে হয় ময়মনসিংহে। এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল লোকজনের প্রাচুর্যের কারণে সাম্প্রদায়িকতা থাকে কম, তার উপরে ময়মনসিংহ সবসময় হিন্দু প্রধান শহর ছিল ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় জুড়ে। সংখ্যার হিসাবে হিন্দুরা বর্তমানে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রভাব প্রতিপত্তি খুব একটা কমে নি এই শহরে এখনো তাদের। হিন্দু প্রধান হবার কারণে হোক বা দীর্ঘদিন হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি থাকার কারণেই হোক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত চমৎকার ময়মনসিংহে। এজন্য সাম্প্রদায়িকতার ভয়াল চেহারাটা চাক্ষুস করা হয় নি কখনো আমার। যা কিছু আমি জেনেছি তা সবই পত্রিকা পড়ে বা এর ওর কাছ থেকে শুনে। এতে করে বিষয়টা জানা যায় হয়তো, কিন্তু এর সঠিক উত্তাপটা গায়ে লাগে না সেরকম করে। উপলব্ধিটা শাণিত হয় না প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাবে।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটেছিল পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রটির জন্মের সময়ে। এর আগে শতশত বছর ধরে হিন্দু এবং মুসলমানেরা পূর্ববাংলায় বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহাবস্থান করে এসেছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হালকা পাতলা ঝগড়াঝাটি এবং মনকষাকষি, রেষারেষি যে হয় নি তা নয়, তবে দাঙ্গা-ফ্যাসাদের মত রক্তারক্তি কাণ্ডে তা রূপান্তরিতি হয় নি কখনো। এই বিষবৃক্ষের বীজ বপন করেছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই। করেছিলো তার অবাঞ্চিত জন্মের প্রয়োজনে এবং পরবর্তীতে টিকে থাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়।

পাকিস্তানের জন্মের সময়ে পূর্ববাংলায় হিন্দুর সংখ্যা ছিল প্রায় তিরিশ শতাংশ। এই তিরিশ শতাংশের হাতেই ছিল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র হিন্দুদের প্রতি বৈরী হবার কারণে এই শক্তিকে তারা কাজে লাগাতে পারেন নি সেরকমভাবে। বরং তাঁদের শক্তিকে খর্ব করার জন্য রাষ্ট্র একে একে নানান ধরনের আইন-কানুন পাশ করতে থাকে। আর এতে করেই হঠাৎ বিপন্নবোধ করতে থাকে হিন্দুরা। রাষ্ট্রের এই একপেশে আচরণের কোনো পালটা জবাব তাদের হাতে সেই মুহুর্তে ছিল না। পাকিস্তান রাষ্ট্রে তারা মূল অংশ না, বরং রাতারাতি পরিণত হয়েছে প্রান্তিক মানুষে। এই বিপন্নতার কারণে, এই অনিরাপত্তার কারণেই শুরু হয় হিন্দুদের ভারতগামী সমুদ্রসম মিছিল। ১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে যেখানে হিন্দুর সংখা ছিল ঊনত্রিশ শতাংশ, সেখানে ১৯৯১ সালে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশে। ২০০১ সালের আদমশুমারীতে এই সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। এক দশক পরে এটি আরো কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র আট দশমিক দুই শতাংশে। এই হারে চলতে থাকলে বাংলাদেশ যে একদিন হিন্দুশূন্য হয়ে শুধুমাত্র মুসলমানদের দেশ হয়ে যাবে সে কথা বলাই বাহুল্য।

পাকিস্তান আমলে হিন্দুদের কফিনে শেষ পেরেকটা মারা হয়েছিল ১৯৬৫ সালে, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পরে শত্রু সম্পত্তি আইন করে। মজার বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও এই আইনটি বাতিল হয় নি। নিজের দেশের লোককে শত্রু বলতে লজ্জা লাগার কারণেই হয়তো বা এখন এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে অর্পিত সম্পত্তি আইন। তবে নাম যাই হোক না কেন এর মূল বিষয়বস্তু একই। মূল কাজও একই। ছলে, বলে, কৌশলে এবং শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে হিন্দুদের সহায় সম্পত্তি দখল করে নেওয়া।

একটা দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র যদি কোনো এক শ্রেণীর নাগরিককে শত্রু দেশের নাগরিকদের মত বিবেচনা করে, তবে তাঁদের পক্ষে সেই দেশে থাকাটা একটু অসম্ভবই হয়ে পড়ে। তা সে যত সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতাই থাকুক না কেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি দিয়ে পূর্ববাংলাকে হিন্দুশূন্য করতে চেয়েছিলো। পাকিস্তান যে রকম সাম্প্রদায়িক একটা দেশ, তাতে তারা এরকমটা করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশের জন্মের পরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যন্ত্রটিও তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে একই ধরনের কাজ করেছে। যে দেশের জন্ম হয়েছি্লো প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে, প্রাচীন ধ্যান ধারণাকে ভেঙে দিয়ে নতুন ভাবনা উর্ধ্বে তুলে ধরে, ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে, সেই দেশও পাকিস্তানের মতো পিছন দিকেই হেঁটেছে। অথচ এর প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকবে না। তাজউদ্দীনের দেখানো সেই আলোকিত পথে অন্যেরা বাংলাদেশকে নেন নি। তার বদলে টেনে নিয়ে চলেছে অন্তহীন এক অন্ধকারের দিকে।

দেশ স্বাধীনের পরে বাহাত্তর সালেই প্রথম হামলা ঘটে হিন্দুদের উপরে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করা হয় পূজামণ্ডপ। রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। এর পর পঁচাত্তর সালের পর থেকে পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল লোকজনেরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির কাছ থেকে এর হিন্দু নাগরিকেরা যে নিরাপত্তা এবং আশ্বাস আশা করেছিলো, সেই নিরাপত্তা এবং আশ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে যায় অচিরেই। পাকিস্তান আমলের মতোই হিন্দুরা জেনে যায় যে, তাঁদের নিজেদের দেশেও এখন তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। যতো মেধাই থাকুক না কেন তাঁরা কোনোদিনও এই দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে না, হতে পারবে না প্রধানমন্ত্রী, পারবে না হতে সেনাবাহিনীর প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে পারবে না, পারবে না কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত হতে। শুধু অধিকার বঞ্চিতই নয়, একই সাথে তাঁদের জীবনকে বিপন্ন করতেও রাষ্ট্র তার উদার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে গুন্ডা-বদমায়েশদের দিকে। কোনো হিন্দু লোকের সম্পত্তি দখল করতে হবে। খুব সোজা কাজ। প্রথমে হুমকি দাও প্রাণের। তাতেও যদি কাজ না হয় তবে তার মা, স্ত্রী বা মেয়ের সম্মানহানির হুমকি দাও। এই হুমকির পরে দেশ ছাড়বে না এমন সাহসী হিন্দু বাংলাদেশে কয়টা আছে?

কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘সুধাংশু যাবে না’ কবিতায় লিখেছিলেন যে, এই পবিত্র মাটি ছেড়ে পরাজিত সৈনিকের মতো সুধাংশু কোথাও যাবে না। কিন্তু, বাস্তবতা এখন বড় ভিন্ন। সুধাংশু এখন শুধুই পরাজিত একজন মানুষ, পরাজিত সৈনিক আর সে নয়। এখন বাংলাদেশে যা ঘটছে সেখানে সবল এক শ্রেণীর হাতে দুর্বল এবং ক্রমহ্রাসমান এক শ্রেণী বিনা লড়াইয়ে এক তরফাভাবে মার খাচ্ছে। যেহেতু কোনো লড়াই নেই, সেহেতু এখানে সুধাংশুদের সৈনিক হবারই কোনো সুযোগ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে সুধাংশুদের এই মাটিতে আটকে রাখতে গেলে, শুধুমাত্র সুধাংশুদের নিজেদের প্রবল ইচ্ছাশক্তিতেই চলবে না, সবাইকেই সুধাংশুর পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। এই দাঁড়ানোতে সামান্যতম গাফিলতি করলেই সুধাংশুদের হারাবো আমরা চিরতরে।

ফরিদ আহমেদ, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ